বঙ্গ-নিউজ: গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিদের ডেকে নেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম। সেখানে বিপুলসংখ্যক বিদেশী নাগরিক অবস্থান করছেন- এমন তথ্য জানিয়ে ‘থ্রিমা’ নামক মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে তিনি হামলার জন্য যেতে বলেন তাদের। হাসনাতের গ্রিন সিগন্যাল (সবুজ সংকেত) পেয়েই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভাড়া করা ফ্ল্যাট থেকে সরাসরি হলি আর্টিজানে যায় হামলাকারী জঙ্গিরা।
হলি আটির্জান বেকারিতে হামলা করার আগে কয়েকদিন ধরে গুলশান এলাকার আরও চারটি অভিজাত রেস্তোরাঁ রেকি (মহড়া) করেছিল হামলাকারী জঙ্গি ও তাদের সহযোগীরা। কিন্তু সেসব স্থানে ‘টার্গেট’ অনুযায়ী বিদেশী নাগরিক না থাকায় রেস্তোরাঁগুলোতে হামলা করেনি তারা। তুলনামূলকভাবে বিদেশী নাগরিক বেশি অবস্থান করায় হলি আর্টিজানকে বেছে নেয়া হয়। কিভাবে হামলা চালাবে তার একটা ‘ছক’ও তৈরি করেন হাসনাত। হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে হলি আর্টিজানে যান তিনি।
গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনার গোয়েন্দা তদন্তে বেরিয়ে এসেছে উল্লিখিত সব তথ্য। ঘটনার পর হাসনাতসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ১৬ জুলাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন হাসনাত করিম জিজ্ঞাসাবাদের পর্যায়ে আছে।
রোববার ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার হোতাদের চিহ্নিত করা গেছে। হামলার নেপথ্যে কারা রয়েছে, কিভাবে হামলা হয়েছে সেসব তথ্য পাওয়া গেছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় সন্দেহভাজন অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ অনেক আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। নেপথ্যে থাকা এসব কুশীলবের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাদের গ্রেফতার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
তদন্ত সূত্র জানায়, গুলশান ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার অনেক তথ্যই গোয়েন্দাদের হাতে আছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। হামলাকারী জঙ্গি ও তাদের সহযোগীদের জন্য মে মাসে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রোভিসি (সদস্য সাময়িক বরখাস্তকৃত) এসএম গিয়াস উদ্দিন আহসানের ফ্ল্যাট ভাড়া করে দিয়েছিলেন হাসনাত রেজা। হামলার আগে ওই বাসাতেই সহযোগীদের সঙ্গে জঙ্গিরা অবস্থান করে। সেখানে জঙ্গিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছিলেন হাসনাত। হামলা সফলভাবে সম্পন্ন করতে জঙ্গিদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়ার কাজটিও করেন তিনি।
সূত্র জানায়, হামলার আগে জঙ্গিরা বেশ কয়েকদিন হলি আর্টিজানে খাওয়া-দাওয়া করে। তখন তারা দীর্ঘ সময় সেখানে অবস্থান করে। রেস্তোরাঁটি ঘুরে ঘুরে দেখে ও পুরো রেস্তোরাঁ সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেয়। হামলার দিন (১ জুলাই) বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাটে জঙ্গিদের প্রস্তুত থাকতে বলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে হলি আর্টিজানে যান হাসনাত রেজা। সেখানে যাওয়ার পর তিনি কাক্সিক্ষত সংখ্যক বিদেশীকে দেখতে পান। এরপরই ‘থ্রিমা’ নামক মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশী আছে এই তথ্য নিশ্চিত করেন জঙ্গিদের এবং প্রস্তুতি নিয়ে তাদের আসতে বলেন হলি আর্টিজানে। হাসনাতের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে তারা অস্ত্রসজ্জিত হয়ে হেঁটে হলি আর্টিজানে আসে। হাসনাতকে যাতে কেউ সন্দেহের মধ্যে না আনতে পারে সেজন্য তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি সন্তানের জন্মদিন পালনের কথা বলে সবাইকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। রেস্তোরাঁর ভেতরেও হামলাকারীদের দিকনির্দেশনা দেন তিনি। ১৭ বিদেশীসহ ২২ জনকে হত্যার পর জঙ্গিরা অতিথি ও রেস্তোরাঁর কর্মচারীদের রাতভর জিম্মি করে রাখে। সেখানে হাসনাত বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। জঙ্গিদের সঙ্গে তিনি ছাদে হাঁটাচলাও করেন। এক সময় তিনি অস্ত্রও হাতে নেন। এসব ভিডিও গোয়েন্দাদের হাতে রয়েছে। ভোরে (২ জুলাই) অভিযানের আগেই ২ সন্তান ও স্ত্রীসহ হাসনাত সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। তার সঙ্গে একই ফ্লোরে থাকা আরও কয়েকজন জিম্মি বের হন।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৭:৩২ ৩০৯ বার পঠিত