বঙ্গ-নিউজ: নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সাথে যুদ্ধ করে আমি অভ্যস্থ। তাই আইভীর সাথে দ্বন্দে জড়ানোর আমার কোন ইচ্ছা নেই। তাকে আমি আমার ছোট বোনের মতই দেখি।
যদি আমি আগের শামীম ওসমান থাকতাম, যদি বয়স বেশি না হয়ে যেত আর বেশি আল্লাহ ওয়ালা না হয়ে যেতাম, তাহলে আমার নেত্রীকে নিয়ে যে আইভী কটাক্ষ করে, তাকে ধোপার কাপড় কাঁচার মত কেঁচে ফেলতাম।’ সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ইসদাইরস্থ বাংলা ভবন কমিউনিটি সেন্টারে মহানগর আওয়ামী লীগ এর এক বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ ও জেলার প্রভাবশালী নেতা একেএম শামীম ওসমান। ২০১১ সালের সিটি নির্বাচনের ইতিহাস তুলে ধরে শামীম ওসমান বলেন, ‘নাসিক নির্বাচনে কি গেম হয়েছিল , তা নারায়ণগঞ্জবাসী খুব ভালো করেই জানে। রাতের আধাঁরে বিএনপি নেত্রীর সাথে বসে তৈমুরকে বসিয়ে দেয়া, ভোট কেনার জন্য কোটি কোটি টাকা ছিটিয়ে দেয়া, নির্বাচনের দিন সাড়ে ৪’শ সিসি ক্যামেরা, এতো এতো সাদা চামড়ার লোক, নারায়ণগঞ্জে সিটি নির্বাচনের মত একটি ছোট নির্বাচনে এগুলো কীসের আলামত ছিল? তারা ভেবেছিলেন আমি শামীম ওসমান হয়তো নির্বাচনের দিন আমার কর্মীদের নিয়ে একটি করে ভোট কেন্দ্র ধরব আর খালি করে বের হবো। কিন্তু তারা হয়তো ভুলে গেছে যে আমি নেত্রীর কথার বাইরে কোন কাজ করি না। যদি করতাম, তাহলে এটা বাঞ্ছারামপুর না, এটা নারায়ণগঞ্জ। বাংলাদেশের রাজনীতি এই জেলায় বসেই নিয়ন্ত্রন করা হয়। গেম যদি খেলতামই, তাহলে কাউকে তোয়াক্কা করতাম না। নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে আসতাম। কিন্তু আমার মাতৃতুল্য নেত্রী দেখাতে চেয়েছেন যে সেনাবাহিনী ছাড়াও সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। আর তাই চুপ করে সকল ষড়যন্ত্র আর ফলাফল মেনে নিয়ে সেদিন আইভীকে অভিনন্দন জানিয়ে ছিলাম।’ ‘তার হাত ধরেই রাজনীতিতে আমার আগমন। কীভাবে কর্মীদের সাথে মিশতে হয়, কীভাবে তাদের নিয়ে রাজনীতি করতে হয় সবকিছুই তিনি আমাকে শিখিয়েছেন। আমি আজকের এই শামীম ওসমান হওয়া সম্ভব হয়েছে একমাত্র তার কারণেই। তাই শিষ্য হিসেবে আমি আমার গুরুকে দক্ষিনা দিতে চাই। যেটা অনেক আগেই দেয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু নিজেদের মধ্যে বিভাজনের কারণে সেটা দেওয়া এতোদিন সম্ভব হয়নি। এবার যেহেতু সময় এসেছে, তাই সবাইকে সামনে রেখেই আমি আমার গুরু দক্ষিনাটি দিতে চাই।’ সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার ইসদাইরস্থ বাংলা ভবন কমিউনিটি সেন্টারে মহানগর আওয়ামী লীগ এর এক বর্ধিত সভায় গুরু আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন তার আনুগত শিষ্য নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ ও জেলার প্রভাবশালী নেতা একেএম শামীম ওসমান। শামীম ওসমান বলেন, ‘আসন্ন সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় আমার রাজনৈতিক গুরু আনোয়ার হোসেন। নির্বাচনে তিনিই জয়ী হবেন, এত কোন সন্দেহ নাই। কেননা আজ এখানে একই মঞ্চে নারায়ণগঞ্জ মগানগর আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীরা যেহেতু একবাক্যে তাকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছেন, সেখানে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মনে কষ্ট দিয়ে আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা কোন ফালতু লোককে মনোনয়ন দিবেন বলে আমি বিশ্বাস করি না। কেননা তিনি সর্বদাই একটি কথা বলে থাকেন, দলের কর্মীরা দলের সাথে বেঈমানী করলেও তৃণমূল কর্মীরা কখনো দলের সাথে বেঈমানী করে না এবং করবেও না। আর তাই আপনারা যারা তৃণমূলের কর্মী আছেন, তারা যেহেতু আনোয়ার ভাইকে আ’লীগের প্রার্থী হিসেবে সিটি নির্বাচনে দেখতে চান, সেখানে আমি শামীম ওসমানেরও নেত্রীর কাছে তার পক্ষে কোন সাফাই গাইতে হবে না। আপনাদের প্রতি ভালোবাসা রেখে নেত্রী নিজেই আনোয়ার ভাইকে প্রার্থীতা দেবেন। কেউ যদি মনে করে থাকেন যে উপ-মন্ত্রী হয়ে গেছেন বলে তিনিই নৌকার প্রার্থীতা পেতে যাচ্ছেন, তাহলে আমি বলব তিনি ভুল ভাবছেন। উদাহরণ সরূপ, সিটি নির্বাচনের সাড়ে ৪ বছর অতিবাহিত হবার পরে নাসিক মেয়রকে উপমন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতী দেয়া হয়েছে। যা শুরুতেই দেয়া হয়নি। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে আইভীর নাম না থাকা সত্বেও দীর্ঘ ৭ মাস কেন্দ্রে তৃণমূলের তালিকাটি পড়ে থাকলেও সেখানে কোন কাটছিট না করেই কেন্দ্র তাকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষনা দেন। এতেই বোঝা যায় তার প্রতি কেন্দ্রের টান কতটুকু।’ এদিকে আনোয়ার হোসেন কে আসন্ন সিটি নির্বাচনে কে কে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দেকতে চান, সাংসদ শামীম ওসমানের এমন প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত প্রতিটি কর্মীই তাদের দুহাত তুলে আনোয়ার হোসেনের প্রতি তাদের সমর্থনের জবাব দেন। এসময় শামীম ওসমান বলেন, ‘বহু জেলা নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অনেক নেতাই কর্মীদের মাঝে বিবেধ সৃষ্টি করে ফায়দা লুটলেও নারায়ণগঞ্জে এর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে একই ছাদের নিচে আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একটি পরিবার। আমরা সকলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য। এখানে আমাদের মধ্যে কোন বিবেধ নেই। কিন্তু কষ্ট লাগে, যখন মনে পরে আওয়ামী লীগের কর্মী হয়েও কবরী মার্কা নেতাদের জন্য আমাদের দলের নেতাকর্মীরা পুলিশের নির্যাতনের শিকার হন। আইভী ও কবরীকে বার বার বলার পরেও তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য কখনো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্মান দেয়নি। যার ফলে আজকে তাদের এই দুর্দশা। আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীরাই আজ তাদের বিরুদ্ধে। সেই সাথে তারা হারিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য পদটিও। আজকে যারা এখানে হাত তুলে আপনাদের প্রিয় ব্যাক্তি আনোয়ার হোসেনের পক্ষে হাত তুলেছেন, তারা আবা যেন রাতের আধাঁরে কারো সাথে গোপনে মিটিং না করেন, আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখে আপনাদের এই ওয়াদা করতে হবে।’ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. খোকন সাহার সঞ্চালনায় বর্ধিত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্রশাসক আবদুল হাই, মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীল, সহ-সভাপতি গোপীনাথ দাস, মাসুদুর রহমান খসরু, সামসুজ্জামান খান ভাষাণী, রোকনউদ্দীন আহম্মেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, এ্যাড. মাহামুদা আক্তার মালা, জিএম আরাফাত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিএম আরমান, শাহ্ নিজাম, আহসান হাবীব, আইন বিষয়ক সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ আদালতের পিপি এ্যাড. এস এম ওয়াজেদ আলী খোকন, নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাড. আনিসুর রহমান দিপু, বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিুবর রহমান, কমান্ডার সামিউল্লাহ মিলন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাফায়েত আলম সানি, সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম রিয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান নান্নু, সহ-সভাপতি আলী আকবর, মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক মিনহাজুল ইসলাম রিয়াদ, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদ, নাসিক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না, শারমিন হাবিব বিন্নি, ইসরাত জাহান খান স্মৃতি প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২১:০৮:৫৬ ৩৩৮ বার পঠিত