বঙ্গ-নিউজ: জনগণের মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা এবং যতো দ্রুত সম্ভব হুমকি দূর করার গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকার এরদোগানের,
তুরস্কে তিন মাসের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে এ ঘোষণা দেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। গত বুধবার দেশটির শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের পর এক ভাষণে এরদোগান বলেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণার লক্ষ্য হল গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে হুমকি মোকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ তৈরি করা। প্রেসিডেন্ট এরদোগান জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণার পাশাপাশি এমন আঘাত আবারও আসতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, এমন ঘটনা যাতে না ঘটে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায় তার জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের গণতন্ত্র, আইন এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষায় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। সেই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব সম্ভাব্য হুমকি দূর করার লক্ষ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ভাষণে এরদোগান বলেন, তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের জন্যে দায়ীদের বিরুদ্ধে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায় তার জন্যেই জারি করা হয়েছে এই জরুরি অবস্থা। গণতন্ত্রের জন্যে হুমকি মোকাবিলার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি এ সময় তিনি জনগণের মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষণাও দেন। যদিও তিন মাসের জরুরি অবস্থা সংসদকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া এবং সাধারণ মানুষের অধিকার খর্ব করার ক্ষমতা দিচ্ছে প্রেসিডেন্টকে। টেলিভিশন ভাষণে প্রেসিডেন্ট আবারো যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ধর্মীয় নেতা ফতুল্লা গুলেনকেই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে দায়ী করছেন। এ সময় তিনি দেশটির সংকটকালে পাশে থাকা জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সম্প্রতি দেশটিতে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায় সেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশ। তবে এতে জনগণের সমর্থন না থাকায় তাদের এ অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এদিকে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায় যে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কানাডা, জার্মানি ও ফ্রান্স। ধরপাকড়ের ক্ষেত্রে আইনের শাসন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলো। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্র্যাংক-ওয়াল্টার স্টেইনমিয়ার অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের মানদ- বজায় রাখার জন্য তুর্কি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এরদোগানের দাবি, রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা আরোপ নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর কথা বলার অধিকার নেই। আঙ্কারার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে জরুরি অবস্থার ঘোষণা দিতে গিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে তৈরি হওয়া সব ভাইরাস নির্মূল করার অঙ্গীকার করেন এরদোগান। তুরস্ক গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপোস করে না দাবি করে তিনি বলেন, এ রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা গণতন্ত্র, আইনের শাসন কিংবা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে নয়। তুরস্ক সরকারের হিসাব অনুযায়ী, অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা রুখতে গিয়ে অন্তত ২৪৬ জন নিহত হয়েছে। তাদেরকে শহীদ হিসেবে ঘোষণা করেছেন এরদোগান। প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানপন্থীদের অনুপ্রবেশের কথা বিবেচনা করে দ্বিতীয় অভ্যুত্থান চেষ্টার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তুরস্কের শক্তিশালী সেনাবাহিনীতে ৬ লাখ সেনা রয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ইতোপূর্বে ধারণা করেছিলেন, অভ্যুত্থান চেষ্টায় সেনাবাহিনীর ক্ষুদ্র একটি অংশ জড়িত। কিন্তু এখন তাদের আশঙ্কা অভ্যুত্থানপন্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি এবং তারা উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তা পর্যন্ত বিস্তৃত। অপরদিকে, প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও তার প্রশাসন যেভাবে গ্রেফতার ও চাকরিচ্যুতি করে যাচ্ছে তাকে অনেক তুর্কি ও বিদেশি সরকার ভাল চোখে দেখছে না। তারা মনে করছে এ সুযোগ সদ্ব্যবহার করে এরদোগান তার প্রতি ও তার ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি)-র প্রতি অনুগত নয় এমন ব্যক্তিদের দমন করার চেষ্টা করছেন। জাতীয় শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে তারা বরখাস্ত করেছে ১৫,২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। তবে গুলেন ও তার সমর্থকরা প্রকাশ্যে এ অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। গুলেনকে তুরস্কে ফেরত পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, তুরস্ক যদি গুলেনের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ হাজির করতে পারে তবেই কেবল তাকে ফেরত পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:০৭:২৫ ৪২৬ বার পঠিত