বঙ্গ-নিউজঃ কন্ডিশনিং ক্যাম্পের প্রথম দিন শেষে ট্রেনারদের খুব কমই সন্তুষ্ট থাকতে দেখা যায়। এ ধরনের ক্যাম্প সাধারণত হয় খেলা থেকে লম্বা বিরতি কাটিয়ে। অনেক খেলোয়াড়ের শরীরে জমে মেদ। ফিটনেসে দেখা দেয় ঘাটতি। যে অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছিলেন, সবাইকে সে অবস্থায় ফিরে পান না বলেই প্রথম দিন শেষে খুব একটা খুশি থাকেন না ট্রেনাররা।
কাল ঘটল ব্যতিক্রম। মারিও ভিল্লাভারায়নের অনুপস্থিতিতে মিরপুরে ক্যাম্প শুরু হয়েছে বিসিবির দুই ট্রেনার তুষার কান্তি হাওলাদার এবং ইফতেখারুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে। দুজনই বেশ খুশি। ক্যাম্পের প্রথম দিনে ব্লিপ টেস্টে যেখানে ১০ করলেই যথেষ্ট মনে করা হয়, সেখানে সাব্বির রহমান সর্বোচ্চ করেছেন ১২.৬! ১১ থেকে ১২-এর মধ্যে আছেন অনেকেই। বাকিরাও কেউ ১০-এর নিচে নন।
প্রথম দিনের ব্লিপ টেস্টের ফলাফল বলছে, ছুটির সময়েও এখন পেশাদার মনোভাবটা হারিয়ে ফেলেন না ক্রিকেটাররা। এটিকে খেলোয়াড়দের মনোজগতের বেশ বড় একটি পরিবর্তন মনে করছেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, ‘এটা অনেক বড় পরিবর্তন। ১০-এর নিচে কেউ না থাকা মানে বিশাল ব্যাপার। আগে কখনো এ রকম হয়নি। এর মানে তরুণ ক্রিকেটাররাও এখন ছুটির সময়ে কিছু না কিছু করছে। কয়েক বছর ধরেই এই পরিবর্তনটা হচ্ছিল।’ ক্যাম্পের শুরুতে জাতীয় দলের ট্রেনারের অনুপস্থিতিও তাই আর সমস্যা নয় তাঁর কাছে, ‘সবাই এখন জানে, নিজের কাজটা নিজেরই করতে হবে। মারিও থাকলেই করব, ব্যাপারটা তেমন নয়।’
ক্যাম্পে ডাক পাওয়া ৩০ ক্রিকেটারের মধ্যে সাকিব আল হাসান আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। কাল সকালে ইংল্যান্ডে চলে গেছেন মুস্তাফিজুর রহমানও। বাকিদের মধ্যে তরুণ ক্রিকেটার অনেক। তরুণদের জন্য অধিনায়কের পরামর্শ, ‘মুশফিক, রিয়াদ, তামিম বা যারা ফিরে এসেছে-শাহরিয়ার নাফীস, রকিবুল, সবাই ফিট। আমি চাই তরুণেরা ওদের অনুসরণ করুক।’
কিন্তু আবারও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামার আগ পর্যন্ত ফিটনেস ধরে রাখার প্রতিজ্ঞাটা থাকবে তো খেলোয়াড়দের মধ্যে? বাংলাদেশের পরবর্তী আন্তর্জাতিক আসর অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ। কিন্তু হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ার জঙ্গি হামলা কিছুটা হলেও কালো মেঘ জমিয়েছে সেটির আকাশে। মাশরাফির অবশ্য বিশ্বাস, ইংল্যান্ড দল শেষ পর্যন্ত আসবে। ক্রিকেটের চেতনা সমুন্নত রাখতেই তাদের বাংলাদেশ সফর করা উচিত, ‘আশা করি, ইংল্যান্ডের সফরটা হবে। ক্রিকেটের সংস্কৃতি ধরে রাখতেই তারা আসবে। একটা ভালো সিরিজ হবে।’
ক্রিকেট বাংলাদেশে এক উন্মাদনার নাম। এ দেশের মানুষের আবেগ ও ভালোবাসা খেলাটির বড় শক্তি। ইংল্যান্ডকে সেটাও মনে করিয়ে দিতে চাইলেন অধিনায়ক, ‘বাংলাদেশে সব বয়সের মানুষই ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করে, ক্রিকেটকে ভালোবাসে। তারা শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরই নয়, সব দেশের ক্রিকেটারদেরই সম্মান করে। সব দলের খেলা দেখে।’ ইংল্যান্ড দলকে তাঁর অভয়, ‘অন্যান্য দলকে যেমন নিরাপত্তা দেওয়া হয় সেটা ইংল্যান্ডও পাবে। এখানে সবাই ক্রিকেট পছন্দ করে। আমার মনে হয় না কোনো সমস্যা হবে।’
নিরাপত্তার শঙ্কা এ বছরের শুরুতে হওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সময়ও ছিল। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া সে কারণে দল না পাঠালেও ইংল্যান্ডের যুবদল ঠিকই খেলে গেছে বাংলাদেেশ। মাশরাফির বিশ্বাস, এবারও ইংল্যান্ড বাংলাদেশের পাশে থাকবে। ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় না ভুগে তাই সবাইকে মনোযোগী হতে বললেন নিজেদের কাজে, ‘সবারই উচিত ফিটনেস ধরে রাখা। আমাদের কাজ খেলার জন্য প্রস্তুত থাকা। বাকিটা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড দেখবে।’
পূর্ণ ফিটনেস নিয়ে ক্যাম্পে ফিরে সে প্রস্তুতিতে শুরুতেই অনেকটা এগিয়ে থাকলেন ক্রিকেটাররা।
বাংলাদেশ সময়: ৮:০৭:০৫ ৩৪৭ বার পঠিত