বঙ্গ-নিউজঃ সদ্য সমাপ্ত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি পূর্বের অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি। এর উপর ভর করে গেল অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত দেশভিত্তিক গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের চাইতে ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির হার বেশি। গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্টস রপ্তানি বেড়েছিল ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। একই সময়ে ইউরোপের দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ১১ শতাংশেরও বেশি। এ দুটি দেশের বাইরে নতুন বাজারেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক। এ রকম ১২টি দেশে গতবারের চাইতে রপ্তানি বেড়েছে গড়ে সাড়ে ১০ শতাংশ। তবে তুরস্ক ও ব্রাজিলে রপ্তানি কমে গেছে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, গত অর্থবছর জুড়ে দেশে তেমন রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল না। এ বিষয়টি রপ্তানি বাড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। তবে চলমান কারখানা সংস্কারের বার্তা ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে আস্থা বাড়িয়েছে। এটিই রপ্তানি বাড়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে ঢাকায় সমপ্রতি বিদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনা এ খাতের রপ্তানিকে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন তারা।
একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। দেশটিতে গত অর্থবছর বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে ৫৬২ কোটি ৪৯ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য। আগের অর্থবছরে সেখানে রপ্তানি ছিল ৫২৮ কোটি ৮১ লাখ ডলারের। অন্যদিকে ইউরোপের ২৭টি দেশে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে এক হাজার ৭১৫ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫৩৭ কোটি ডলারের পণ্য। যুক্তরাষ্ট্রের পর বাংলাদেশের গার্মেন্টস রপ্তানির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হলো ইউরোপের দেশ জার্মানি। গত অর্থবছরে এ বাজারে রপ্তানি বেড়েছে সোয়া সাত শতাংশ। দেশটিতে গত বছর বাংলাদেশ ৪৬৫ কোটি ৩১ লাখ ডলারের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করেছে।
পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ইউরোপের বড় বাজারগুলোর মধ্যে গার্মেন্টস রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার তুলনামূলক যুক্তরাজ্যে বেশি। দেশটিতে গত বছর রপ্তানি বেড়েছে ২১ শতাংশেরও বেশি। এছাড়া স্পেনে সাড়ে ১৪ শতাংশ, পোল্যান্ডে সাড়ে ১২ শতাংশ, বেলজিয়ামে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ, সুইডেনে ছয় শতাংশ, ফ্রান্সে প্রায় ছয় শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে সোয়া পাঁচ শতাংশ, ইতালিতে দুই দশমিক ৭৯ শতাংশ, ডেনমার্কে সোয়া এক শতাংশ। এর বাইরে ইউরোপের দেশ সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, মালটা, পোল্যান্ড, স্লোাভাকিয়া, স্লোভেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়ায় গড়ে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ।
এর বাইরে কানাডায় রপ্তানি বেড়েছে সাড়ে সাত শতাংশ। অন্যদিকে নতুন বাজারে বাংলাদেশ বেশি রপ্তানি করেছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চীন ও তুরস্কে। এর বাইরে নতুন বাজারের তালিকায় রয়েছে- ভারত, চিলি, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, ব্রাজিলসহ আরো কিছু দেশ। এসব বাজারের মধ্যে ভারত, চিলি, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার তুলনামূলক বেশি। অবশ্য একই সময়ে ব্রাজিল ও তুরস্কে রপ্তাবি কমেছে।
বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির ইত্তেফাককে বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স কারখানা পরিদর্শন করে দেখেছে, মাত্র দুই শতাংশেরও কম কারখানা ঝুঁকিপূর্ণ। বাকী ৯৮ শতাংশ কারখানায় কিছু ত্রুটি থাকলেও তা ঝুঁকিপূর্ণ নয়, সংস্কারযোগ্য। সেই সংস্কার কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। এ বার্তা ক্রেতারা ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। তাদের আস্থা বেড়েছে। তারা বুঝতে পেরেছেন, রানা প্লাজার দুর্ঘটনা ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এটি বাংলাদেশের পোশাক কারখানার প্রকৃত চিত্র নয়। এ বার্তা গত অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়াতে সহায়তা করেছে। তবে তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আরো বেশি হারে বাড়ার সুযোগ রয়েছে।
এদিকে উদ্যোক্তাদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে সামপ্রতিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা। সমপ্রতি ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলায় বিদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বেশকিছু ক্রেতা প্রতিনিধি (বায়ার) এখন বাংলাদেশে আসতে চাইছেন না। এ ঘটনা বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেক উদ্যোক্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ৮:০৫:২১ ৩৯৭ বার পঠিত