বঙ্গ-নিউজ:আসছে ১৯ থেকে ২৫ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন হতে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে উদযাপনকে সামনে রেখে সরকারের জন্য শুভ সংবাদ হচ্ছে, স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এবার বিশ্বের চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছে। সারা বিশ্বে স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে একধাপ এগিয়ে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। গত ৭ জুলাই প্রকাশিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশি প্রজাতির মাছের উন্নত জাত উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মাছের উৎপাদন বাড়িয়ে চলেছে। এর পাশাপাশি ইলিশের প্রজনন মৌসুমে নদীতে ঝাটকা নিধন বন্ধ করার মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন বিপুল পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৪ সালের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশের চেয়েও প্রায় ২২ গুণ বেশি আয়তনের ভারত একই সময় সাদু পানির মাছ উৎপাদন করেছে ৭৩ লাখ ৬০ হাজার মে. টন। আর বাংলাদেশ উৎপাদন করেছে ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার মে. টন। তালিকায় অবশ্য মাছ উৎপাদনে ভারতের অবস্থান দ্বিতীয় রয়েছে। তবে ভারতকে টপকিয়ে মিয়ানমার চলে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। আর চীন এখনো প্রথম স্থানেই অবস্থান করছে। প্রতিবেদনে সামুদ্রিক মাছ উৎপাদনের তালিকায় বাংলাদেশ অবশ্য শীর্ষ ২৫টি দেশের মধ্যে নেই। তবে স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খায়ানোর উপযোগী মাছের নতুন জাত উদ্ভাবনে বাংলাদেশ বেশ সাফল্য দেখাচ্ছে।
এ দিকে আসছে ১৯ থেকে ২৫ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন করতে যাচ্ছে সরকার। এ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য বিষয় ও সেøাগান হচ্ছে ‘জল আছে যেখানে, মাছ চাষ সেখানে’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করতে না পারলেও, পরদিন অর্থাৎ ২০ জুলাই কৃষি ইনস্টিটিউটে (খামারবাড়ি) তে আনুষ্ঠানিকভাবে মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে বর্তমান সরকারের অগ্রগতি ও সাফল্য নিয়ে ৪ মিনিটের একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হবে। একই সঙ্গে জাতীয় মৎস্য পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার পর তিনি একই দিনে গণভবন থেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ চূড়ান্ত করতে গত ২৬ জুন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হকের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। যে সভায় জাতীয় মৎস্য সভা উদযাপনের জন্য কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মসূচি নেয়া হয়। এ কর্মসূচিতে মৎস্য চাষ ও মৎস্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মৎস্য মেলার আয়োজন করা হবে। এই মেলা উদ্বোধন করার কথা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগের দিন অর্থাৎ ১৯ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে এক সড়ক র্যালি বের হবে। মৎস্য ভবন থেকে প্রেসক্লাব হয়ে র্যালিটি শেষ হবে। র্যালিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য অধিদফতর, বিএফআরআই, বিএফডিসির কর্মকর্তা কর্মচারী অংশগ্রহণ করবেন। এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, মৎস্যজীবীসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন।
এবারে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহে ফরমালিনের বিরুদ্ধে অভিযান, মৎস্য বিষয়ক আইন বাস্তবায়নে মোবাইল কোট পরিচালনা, হাট-বাজার ও জনবহুল স্থানে মাছ চাষ উদ্বুদ্ধকরণে বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হবে। এছাড়াও মৎস্য খাতে বর্তমান সরকারের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা সভা অব্যাহত থাকবে।
এ দিকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা’ ২০১৬ তথ্য অনুসারে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ মৎস্য অবদান রয়েছে। দেশের মোট কৃষি আয়ের ২৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ আসে মৎস্য থেকে। দেশের রফতানি আয়ের একটি উল্লেখ্যযোগ্য অংশ আসে মৎস্য খাত থেকে। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যে প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান দেয় মাছ। মৎস্য উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ বৃদ্ধি করা এইখাতের একটি অন্যতম লক্ষ্য। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমাজভিত্তিক মৎস্য চাষ কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও জোরদার করা। এর পাশাপাশি খাস জলাশয়ে মৎস্যজীবীদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। এছাড়াও রয়েছে বিল নার্সারিং কার্যক্রম, মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্ত করা, মৎস্য অভয়াশ্রম সৃষ্টি করা, ভরাট হয়ে যাওয়া নদী পুনঃখনন করে মাছের আবাসস্থল পুনরুদ্ধার করা।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে মোট মাছের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার মে. টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার মে. টন। মৎস্য খাতে যেসব উৎস থেকে মাছের উৎপাদন করা হবে এর মধ্যে রয়েছে মুক্ত জলাশয়, নদী ও মোহনা, সুন্দরবন, বিল, কাপ্তাই হ্রদ, প্লাবন ভূমি। এর পাশাপাশি চাষ করা হবে পুকুর, বাওড়, অর্ধ আবদ্ধ, চিংড়ি খামার, পেন কালচার ও কেজ কালচার। এছাড়া সামুদ্রিক মাছতো রয়েছে। অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা ও ইলিশ প্রজনন সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ৫৪ হাজার মে. টন। যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার মে. টন। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে মৎস্যখাত ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ থেকে গুণগত মানসম্পন্ন হিমায়িত চিংড়ি ও মৎস্যজাত পণ্য বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ফ্রান্স, হংকং, সিঙ্গাপুর, সৌদিআরব ও সুদানসহ অন্যান্য দেশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৮৩ হাজার মে. টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানি করা হয়েছে। যেখানে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৬৬০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে জানুয়ারি পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়েছে ২ হাজার ৬৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা। আর মাছের রফতানির পরিমাণ ছিল ৪৬ মে. টন
বাংলাদেশ সময়: ১৩:০৮:৪৯ ৪১৫ বার পঠিত