বঙ্গ-নিউজঃভারতের বিতর্কিত ইসলামী বক্তা জাকির নায়েকের পিস টিভি বাংলাদেশে বন্ধের পর ‘পিস স্কুল’গুলোর কর্মকাণ্ডের খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেছে সরকার।
জাকির নায়েকের মতাদর্শ অনুসরণ করেই ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ‘পিস’ শব্দ জুড়ে দিয়ে বিভিন্ন নামে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গুলশান হামলাকারী অন্তত দুজন জাকির নায়েকের বক্তব্যে প্ররোচিত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠার পর পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, “পিস টিভি বহু ক্ষেত্রে মুসলমান সমাজের কুরআন, সুন্নাহ, হাদিস, বাংলাদেশের সংবিধান, দেশজ সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না।”
‘পিস’ নামে বাংলাদেশে কতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, সে বিষয়ে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
তবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানীর লালমাটিয়ায় পিস স্কুল নামে একটি ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ের সাময়িক নিবন্ধনই শুধু দিয়েছেন তারা। বাকিগুলো অননুমোদিত।
পিস স্কুল নিয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, “আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।”
পিস স্কুল নিয়ে খোঁজ-খবর নেবেন বলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানও জানিয়েছেন।
ঢাকা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক এ টি এম মইনুল হোসেন বলেন, ঢাকার লালমাটিয়ায় পিস স্কুল নামে একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের সাময়িক নিবন্ধন দিয়েছেন তারা। পিস স্কুল নামে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো অনুমোদন নেই।
অনুমোদন ছাড়া এসব স্কুল কীভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে কোনো ধরনের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না।
“প্রথমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে কার্যক্রম শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা। একটা পর্যায়ে আসার পর সরকারের কাছে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন। সরকার ওই প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন করে সেটাকে অনুমোদন দেওয়া, না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।”
ঢাকায় যতগুলো পিস স্কুল শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে তার কোনোটিই সরকারের অনুমোদন পেতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করেনি বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয় ঢাকায় ২০টি পিস স্কুলের বিষয়ে তথ্য পেয়েছে। সেগুলোর বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে গোয়েন্দা সংস্থাকে বলা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ও নিজেদের মতো করে খোঁজ-খবর নিচ্ছে।
“সত্যিকারেই যদি জাকির নায়েকের আদর্শ অনুসরণ করে ওইসব স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাহলে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এত দিনেও কেন এসব স্কুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি- এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা বলেন, “ধর্মীয় অনুশাসন মেনেই সেখানে শিক্ষা চলছে- মন্ত্রণালয়ের কাছে এমন তথ্য থাকায় সেগুলো নিয়ে আর ঘাঁটাঘাটি হয়নি।”
পিস স্কুলের বিষয়ে বোর্ডের কাছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথ্য চেয়েছিল জানিয়ে ঢাকা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মইনুল বলেন, আমরা লালমাটিয়ার পিস স্কুলের তথ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।
লালমাটিয়ার বি-ব্লকের হাউজ ৪/৯ এর ‘পিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের’ জুনিয়র সেকশন এবং লালমাটিয়ার বি-ব্লকেরই হাউজ ৫/৭ এ এই স্কুলের সিনিয়র সেকশন পরিচালিত হচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে এই স্কুলের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১১ সাল থেকে তারা স্কুল পরিচালনা করছেন। ইংরেজি মাধ্যমের এই স্কুলে প্লে-গ্রুপ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়।
সরকারের অনুমোদন ছাড়া যেসব পিস স্কুল পরিচালিত হচ্ছে সেগুলোতে আরবি, ইংরেজি ও বাংলার সমন্বয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয় বলে স্কুলগুলোর ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে।
ঢাকার মালিবাগ, উত্তরা ও মিরপুরের তিনটি পিস স্কুলের যোগাযোগের নম্বরে যোগাযোগ করলেও কেউই ফোন ধরেননি। এসব স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য স্কুলগুলোর ওয়েবসাইটে দেওয়া মোবাইল নম্বরগুলোও বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকার ৪০০/বি মালিবাগ চৌধুরীপড়ায় ‘পিস স্কুল’ নামে একটি বিদ্যালয় চলছে। পিস স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে উত্তরা ও মিরপুরে দুটি স্কুলের খোঁজ পাওয়া গেছে।
উত্তরা ক্যাম্পাসের ঠিকনায় লেখা আছে- হাউজ ৫৯, রোড ৫, সেক্টর ১৩, উত্তরা মডেল টাউন। আর মিরপুর ক্যাম্পাসের ঠিকানা- প্লট ৫, রোড ২৮/ক, রূপনগর আবাসিক এলাকা।
ঢাকাসহ সারা দেশে পিস স্কুলের নামে ২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:১৩:৩৩ ৪২১ বার পঠিত