বঙ্গ-নিউজঃগুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার প্রেক্ষাপটে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে কোনোভাবেই জঙ্গিবাদের উত্থান হতে দেওয়া হবে না।মঙ্গলবার গণভবন থেকে চার বিভাগের ৩২টি জেলার প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিভিন্ন শ্রেনি-পেশার মানুষের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে একথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বাংলাদেশে কোনো জঙ্গিবাদের উত্থান হতে দেব না। বাংলাদেশ বা বাঙালি জাতি জঙ্গিদের জিম্মি হবে, এটাও আমরা চাই না।
“এদিকে লক্ষ্য রেখেই কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ বাংলাদেশে বহু ঘটনা ঘটে গেছে। আর তার পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না।”
গত দেড় বছর ধরে বেশ কয়েকতটি ঘটনার পর গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের একটি ক্যাফেতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যা করে। এর ছয় দিনেসর মাথায় শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাতের কাছে জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ কনস্টেবল নিহত হন।
বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
“বাংলাদেশের এই উন্নয়ন, এটাও কিছুটা হিংসার কারণ। অনেকেই সেই উন্নয়নটা চায় না। উন্নয়নটা যাতে থেমে যায়…সেটাও আরেকটা ষড়যন্ত্র; যেটা আমরা ধারণা।”
জঙ্গিবাদী এই তৎপরতা ঠেকাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবাইকে ‘আরও ঐক্যবদ্ধ’ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
নামাজের সময় যারা হামলা করছে, তারা কোন ধরনের ইসলাম কায়েম করতে চাইছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে শেখ হাসিনা।
“ইসলাম শান্তির ধর্ম, পবিত্র ধর্ম। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কল্যাণে কাজ করা। এরা (জঙ্গিরা) ইসলামের বদনাম করছে দেশে-বিদেশে।”
গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণদের সম্পৃক্ততা উঠে আসায় তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
“বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, ধর্মান্ধ নয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বা ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষা নিয়ে কীভাবে ধর্মান্ধ হয়, সেটা আমার বোধগম্য নয়।”
গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় জড়িত তিনজনের বেশ কিছুদিন ধরে নিখোঁজ থাকার তথ্য তুলে ধরে ‘গুম’ নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনেরও সমালোচনাও করেন প্রধানমন্ত্রী।
“এতদিন আমরা দেখলাম গুম হয়ে গেছে গুম হয়ে গেছে বলে যারা বিভিন্ন রিপোর্ট দিত, আমাদের দেশে ও বিদেশেরও অনেক রিপোর্ট আসত। কিন্তু সেই রিপোর্টে গুম হওয়া মানেই তারা অঙ্গুলি নির্দেশ করত আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর উপর। কিন্তু আজকে প্রমাণিত হল যে, যারা হারিয়ে যাচ্ছে বা গুম হচ্ছে তারা হচ্ছে স্ব ইচ্ছায়।”
এই তরুণদের বিপথগামী কারা করছে, তাদের খুঁজে বের করার উপরও জোর দেন সরকার প্রধান।
“এই যে কোমলমতি ছেলেমেয়েরা বিশেষ করে মেধাবী ছেলেমেয়ে তাদেরকে বিপথে নিয়ে যাওয়া; এটা কারা নিচ্ছে? কীভাবে নিচ্ছে? এটাও আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমরা চাই না, এভাবে তারা ভুল পথে গিয়ে অকাতরে জীবন দিক। কোনো বাবা-মাই চাইবে না, এভাবে তাদের সন্তানেরা ভুল পথে যাক।”
প্রধানমন্ত্রী প্রথমে ঢাকা ও ময়মসসিংহ বিভাগ এবং পরে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন। পরে জেলাগুলোর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের কথাও শোনেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
জঙ্গি নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, অভিভাবক, শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী, ধর্মীয় নেতারাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রত্যেককে দায়িত্বশীল হতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“তারা যেন এ ব্যাপারে সজাগ থাকে যে নিজের ছেলেমেয়েরা কী করে, কোথায় যায়, কার সাথে মেশে, সেসব বিষয়ে যেন নজর রাখে। যাতে তারা বিপথে যেতে না পারে।”
প্রত্যেক মসজিদে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, “ইসলাম ধর্ম যে শান্তির ধর্ম, এই ধর্মকে কেউ যেন কলুষিত করতে না পারে, সেই সচেতনতাটা জনগণের মাঝে সৃষ্টি করা।”
জঙ্গিবিরোধী সচেতনতা বাড়াতে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ আবার মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
“আমি মনে করি এই অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতেই হবে। উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে। আর্থ-সামাজিক উন্নতি আমাদের করতেই হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমরা এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারব।”
“আমি এটুকুই আহ্বান জানাবো যে আপনারা সম্মিলিতভাবে এই প্রচেষ্টা নেন যে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গির স্থান হবে না, সন্ত্রাসীর স্থান হবে না,” বলেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৫:১৭ ৩৭৭ বার পঠিত