বঙ্গ-নিউজঃ গুলশানের হলি আর্টিজান নামের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁর জিম্মি-ঘটনায় ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুপুরে সেনা সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তর- আইএসপিআর।
অভিযান শেষ হওয়ার পর থেকে কেবল নিহত হামলাকারী ও উদ্ধারকৃত জিম্মিদের সংখ্যা জানা গেলেও কতোজনকে ভিতরে মৃত পাওয়া গেছে তা জানা যাচ্ছিলো না। আইএসপিআরের বিবৃতির মাধ্যমে বিষয়টি জানা গেলো।
এর আগে চার লেন বিশিষ্ট ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়ক উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এর আগে টুকটাক একটা-দুটো করে মানুষ হত্যা করেছিলো, তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা ১৩জন জিম্মিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকিদের হয়তো বাঁচাতে পারিনি।’
আইএসপিআর বলছে, শুক্রবার রাতেই ২০ জনকে গলা কেটে হত্যা করা হয় এবং এরা সবাই বিদেশি নাগরিক। এ দিকে আজ সকালে যৌথ বাহিনী হামলাকারিদের ধরতে যে অভিযান চালায়, তার নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’। এই অভিযানে ছয়জন হামলাকারীকে হত্যা করা হয় এবং একজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।সব মিলিয়ে গুলশানের ঘটনায় হামলাকারিদের হাতে রেস্তোরাঁর ভিতরে প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জন, তাদের ছোড়া বোমার আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন দুজন পুলিশ এবং পরে তাদেরই ছয় মারা গেছেন। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৮।
পাশাপাশি ১৩জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে একজন জাপানি এবং দুজন শ্রীলঙ্কান নাগরিক রয়েছেন।
আজ দুপুরে আইএসপিআরের সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য তুলে ধরেন সামরিক অপারেশন পরিদফতরের পরিচালক ব্রি. জেনারেল নাঈম আশফাক। তিনি বলেন, ‘প্যারা কমান্ডোরা সাতটা ৪০ মিনিটে অপারেশন শুরু করে ১২টা ১৩ মিনিটের মধ্যে সব সন্ত্রাসীকে নির্মূল করে অভিযানের সফল সমাপ্তি ঘটান।’
সন্ত্রাসীদের ছয়জনকে হত্যা ও একজনকে গ্রেফতারের পর ভিতরে তল্লাশী চালায় প্যারা কমান্ডোরা। এ সময় ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদের মধ্যে কে কোন দেশের তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। গতকাল রাতেই আইএস তাদের কথিত সংবাদ মাধ্যমে ঘটনার দায় স্বীকার করে এবং ২০ নিহতের দাবি করে। অভিযান শেষে মৃতদের যে সংখ্যা তারা দাবি করেছিলো, ঠিক ততোগুলো লাশই পাওয়া গেলো।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত নয়টার দিকে হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসীরা প্রবেশ করেন। এরপর থেকেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। সারা বিশ্বের নজরও ছিলো এ ঘটনার দিকে। সারা রাত ভিতরে তাণ্ডব চালায় সন্ত্রাসীরা। জিম্মিদের জানমালের নিরাপত্তার কথা ভেবে। প্রথমে কোনো আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেয়নি যৌথ বাহিনী।
বাইরে থেকে সন্ত্রাসীদের মাইকে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানানো হয়। সে সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য রেস্তোরাঁর দিকে এগোতে থাকলে বোমা ছোড়া তাদের দিকে। সেখানে পাওয়া আঘাতেই ওসি সালাহ উদ্দিন ও ডিবির এসি রবিউল ইসলাম মারা যান।
জিম্মিদের উদ্ধারে এরপর সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, নৌ বাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিস অংশগ্রহণ করে। আত্মসমর্পণের আহ্বানে সাড়া না দেয়ায় সকাল সাতটা ৪০ মিনিটে রেস্তোরাঁয় অভিযান চালান প্যারা কমান্ডোরা। পুরো অভিযান সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়ায় গণমাধ্যম ও অংশগ্রহণকারী বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানায় আইএসপিআর।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৯:০৭ ৫৩০ বার পঠিত