বঙ্গ-নিউজঃ প্রথম দুই ম্যাচের ব্যর্থতা কাটিয়ে কী দারুণভাবেই না জ্বলে উঠলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা ফরোয়ার্ডের জোড়া গোলে হাঙ্গেরির বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মূল্যবান ১ পয়েন্ট নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে পর্তুগাল।
বুধবার রাতে ৩-৩ গোলের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে তিন বার এগিয়ে গিয়ে জিততে না পারলেও ১ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে হাঙ্গেরি। আর তিন ড্রয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ পর্যায়ের সেরা চারটি তৃতীয় স্থানের দলের একটি হয়ে নক-আউট রাউন্ডে উঠেছে পর্তুগাল।
প্রথমার্ধে সমতা ফেরানো নানির গোলটি বানিয়ে দেন রোনালদো। দ্বিতীয়ার্ধে লড়াইটা যেন দুই দলের অধিনায়কের। দুই জনই আবার ৭ নম্বর জার্সিধারী। দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল করে দুই বার দলকে এগিয়ে নেন বালাস জুজাক। দুই বারই সমতা ফেরান সিআর সেভেন। হাঙ্গেরি অধিনায়কের দুটি গোলেই ছিল ভাগ্যের ছোঁয়া। অন্য দিকে রোনালদোর দুটি গোলই হয়েছে দুর্দান্ত দুটি ছোঁয়ায়।
ফ্রান্সের লিওঁতে বুধবার শুরু থেকে বল দখলে রেখে আক্রমণে উঠে পর্তুগিজরা। অন্যদিকে উনবিংশ মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য আক্রমণ শানিয়েই গোল পেয়ে যায় হাঙ্গেরি।
পর্তুগিজ রক্ষণভাগ একটি কর্নার পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হলে বল পেয়ে যান জোলতান গেরা। বুক দিয়ে বল নামিয়ে ২৫ গজ দূর থেকে জোরালো হাফ-ভলিতে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ওয়েস্ট ব্রমউইচ অ্যালবিওনের এই মিডফিল্ডার।
রক্ষণের দুর্বলতায় খানিক বাদে আবারও গোল খেতে বসেছিল পর্তুগাল। মিডফিল্ডার আকোশ এলেকের কোনাকুনি শট বাঁয়ে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে সে যাত্রায় দলকে বাঁচান গোলক্ষরক্ষক রুই পাত্রিসিও।
২৯তম মিনিটে ৩৫ গজ দূর থেকে রোনালদোর ফ্রি-কিক বাঁয়ে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান হাঙ্গেরি গোলরক্ষক গাবোর কিরালি।
বিরতির কিছুক্ষণ আগে রোনালদো-নানির বোঝাপড়ায় কাঙ্ক্ষিত সমতাসূচক গোলের দেখা পায় পর্তুগাল। রিয়াল মাদ্রিদ তারকার নিখুঁতভাবে বাড়ানো বল ডি-বক্সে পেয়েই কোনাকুনি শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক ফরোয়ার্ড নানি।
দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটে আবার এগিয়ে যায় হাঙ্গেরি। জুজাকের ফ্রি-কিক পর্তুগিজ মিডফিল্ডার আন্দ্রে গোমেসের গায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়। পাত্রিসিওর কিছুই করার ছিল না।
তিন মিনিট পরই সমতা ফেরান রোনালদো। ডান দিক থেকে জোয়াও মারিওর ক্রসে বল ডি-বক্সে তার পেছন দিয়ে যাচ্ছিল। ডান পায়ের ফ্লিকে গোলরক্ষককে হতবাক করে দিয়ে বল জালে পাঠান তিনবারের বর্ষসেরা এই ফুটবলার।
এর মধ্য দিয়ে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোর চারটি আসরে গোল করার কীর্তি গড়লেন পর্তুগিজ ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা।
পাঁচ মিনিট পর আবারও গোল জুজাকের। এবার তার ফ্রি-কিক ঠিকঠাক ফেরায় রক্ষণ দেয়াল। কিন্তু ফিরতি বল পেয়ে নেওয়া জোরাল শট নানির পেছন দিকে বাড়ানো পায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ালে আবার পিছিয়ে পড়ে ২০০৪ আসরের রানার্সআপরা।
৬২তম মিনিটে আবারও পর্তুগালকে সমতায় ফেরান অধিনায়ক। বদলি হিসেবে নামা মিডফিল্ডার রিকার্দো কারেসমোর উঁচু করে বাড়ানো বলে মার্কারকে ফাঁকি দিয়ে এগিয়ে জোরালো হেডে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন রোনালদো।
দুই মিনিট পর ফের পিছিয়ে পড়তে যাচ্ছিল পর্তুগাল; তবে মিডফিল্ডার গেরকু লুভরেনচিচের শট পোস্টে লাগলে সে যাত্রায় বেঁচে যায় রোনালদোরা।
গ্রুপের অন্য ম্যাচে শেষ মুহূর্তের গোলে অস্ট্রিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়েছে প্রথমবারের মতো ইউরোয় খেলতে আসা আইসল্যান্ড।
একই সময়ে সাঁ-দেনিতে চলা এই ম্যাচের নির্ধারিত সময় ১-১ ড্রয়ে শেষ হওয়ায় পর্তুগালের গ্রুপ রানার্সআপ হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হয়। কিন্তু যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে আইসল্যান্ড জয়সূচক গোল করলে দ্বিতীয় স্থান পায় প্রথমবারের মতো বড় কোনো প্রতিযোগিতায় খেলতে আসা দলটি।
‘এফ’ গ্রুপের শীর্ষস্থান পাওয়া হাঙ্গেরির পয়েন্ট ৫। আইসল্যান্ডের পয়েন্টও ৫; কিন্তু গোল ব্যবধানে পিছিয়ে রানার্সআপ তারা। পর্তুগালের পয়েন্ট ৩। ছিটকে পড়া অস্ট্রিয়ার পয়েন্ট ১।
কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে শনিবার পর্তুগিজদের প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া। সোমবার শেষ ষোলোর শেষ ম্যাচে আইসল্যান্ড খেলবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে
বাংলাদেশ সময়: ১০:১৩:২৩ ৩৬৮ বার পঠিত