বঙ্গ-নিউজঃ :
রমিক ইউনিয়ন অফিস দখল কেন্দ্র করে রাজধানীর সায়েদাবাদে পরিবহন শ্রমিকদের দুই গ্রুপের স্বেচ্ছাচারিতায় গতকাল মঙ্গলবার দিনভর হাজার হাজার বাস যাত্রী চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরিবহন মালিকদের অনুরোধে আল্টিমেটাম শেষে ১০ ঘণ্টা পর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ধর্মঘট প্রত্যাহার করে। পরে গতকাল বিকাল চারটার দিকে সায়েদাবাদ থেকে দূরপাল্লার যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস ( ৪৭/এ, টয়েনবী সার্কুলার রোড) রবিবার রাতে ঢাকা জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন দখল করে নেয়। এসময় দু’পক্ষের সংঘর্ষে হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ ও পরিবহন মালিক নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়। তবে দখল হওয়া অফিস ফিরে পেতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। ফলে গতকাল সকাল থেকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে থাকা বেশিরভাগ দূরপাল্লা ও আন্তঃনগর বাস সার্ভিসের অনেক বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু সায়েদাবাদ টার্মিনালই নয় দেশের অন্যান্য জেলা থেকেও অনেক বাস ছাড়েনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাস বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হন হাজার হাজার যাত্রী। বেশি বিপাকে পড়েন দূরপাল্লাগামী বাসের যাত্রীরা। পাশাপাশি সায়েদাবাদ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। পরিবহন সংকটের কারণে অনেকে বেশি ভাড়া দিয়ে সিএনজি বা রিকশায় গন্তব্যে গেছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষকে কর্মস্থলের উদ্দেশে হেঁটে রওনা দিতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে ওই এলাকার অফিস আদালতগামীরাও পড়েছিলেন চরম ভোগান্তিতে। অনেককে আবার ভ্যান, পিকআপে করে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
পিরোজপুরগামী যাত্রী স্কুল শিক্ষক কামরুল আহসান জানান, তিনি তার স্ত্রীর চিকিত্সার জন্য দুইদিন আগে ঢাকায় এসেছিলেন। দোলা পরিবহনের বাসে তার যাওয়ার কথা ছিল। তিনি রামপুরা থেকে সিএনজি অটোরিকশা যোগে সায়েদাবাদে পৌঁছে জানতে পারেন টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়বে না। একইভাবে ভোগান্তির শিকার হন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জগামী যাত্রী পারুল রানী হালদার। তিনি তার গার্মেন্টস কর্মী ছেলের সঙ্গে দেখা করার জন্য সপ্তাহ খানেক আগে ঢাকায় এসেছিলেন। মিরপুর থেকে সকালেই ছেলে তাকে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে দিয়ে তার কর্মস্থলে যায়। তিনি বলেন, বাড়িতে পৌঁছা তার একান্ত জরুরি।
গতকাল সকাল থেকেই সায়েদাবাদ এলাকায় লাঠি সোটা নিয়ে দফায় দফায় মিছিল করতে দেখা গেছে উভয় সংগঠনের সমর্থকদের। লোকাল পরিবহন চলাচলেও বাধা দেয় শ্রমিকরা। মাঝে মধ্যে দুই একটি পরিবহন চলাচল করলেও শ্রমিকরা যাত্রীদের নামিয়ে চালকদের মারধর করে। পাশাপাশি থেমে থেমে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ধাওয়া -পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ফলে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
বিকাল ৪টায় ধর্মঘট প্রত্যাহার
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) সৈয়দ নূরুল ইসলামের অফিসে শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের বৈঠক হয়। বৈঠকে ২/৩ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন অফিস বুঝিয়ে দেওয়ার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বিকাল ৪টার দিকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বৈঠকে উভয়ের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। এরই মধ্যে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক করম আলী বলেন, ডিসি সৈয়দ নূরুল ইসলামের আশ্বাসের প্রেক্ষিতেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছি। তিনি বলেছেন, দুই তিন দিনের মধ্যে আমাদের অফিস আমাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
যাত্রী দুর্ভোগের প্রতিবাদ
পবিত্র রমজান মাসে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে কথিত শ্রমিক সংগঠনের অফিস দখল-বেদখলকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিবহন ধর্মঘটে দেশের হাজার হাজার যাত্রীর দুর্ভোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল এক বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরিবহনের চাঁদাবাজি ও ধান্দাবাজি জিইয়ে রাখতে শ্রমিক সংগঠন নামধারী চাঁদাবাজচক্র দেশের দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রীকে জিম্মি করে তাদের কায়েমী স্বার্থ চরিতার্থ করতে হীন তত্পরতা চালিয়ে আসছে। এসব অপতত্পরতা বন্ধের দাবি জানায় সংগঠনটি।
বিবৃতিতে দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা এবং সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করে যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৪:৪৪ ৩৩৬ বার পঠিত