বঙ্গ-নিউজঃ :
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্লাস্টিক পণ্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) পেত। সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে তিন বছর আগে। ফলে দেশটিতে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে বেশ চাপে পড়েন দেশের রপ্তানিকারকরা। এরই মধ্যে সরকার দেশের ভেতরে বাস্তবায়ন করেছে বাধ্যতামূলক প্যাকেজিং আইন। যার আওতায় বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে পাটের বস্তা বা ব্যাগ ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। ফলে দেশের ভেতরে প্লাস্টিকের বস্তা ও ব্যাগের চাহিদাও কমে গেছে।
এ অবস্থায় চলতি ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা ঘোষণা করে সরকার। অর্থাৎ কোনো রপ্তানিকারক ১০০ টাকার প্লাস্টিক পণ্য বিদেশে রপ্তানি করলে সরকার ওই রপ্তানিকারককে নিজস্ব তহবিল থেকে ১০ টাকা দেবে।
সরকারের এ ঘোষণায় বেশ খুশি হয়েছিলেন রপ্তানিকারকরা। তবে খুশির আমেজ হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে বেশি সময় লাগেনি।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, নগদ সহায়তা পেতে হলে তিনটি শর্ত মানার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে, তা মেনে চলা সম্ভব নয়। এগুলো হলো-কোনো রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বন্ডেড ওয়্যারহাউস থাকতে পারবে না, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলভুক্ত (ইপিজেড) কোনো কারখানা এ সুবিধা পাবে না। এ ছাড়া নগদ সহায়তা পেতে হলে ওই কম্পানি ডিউটি ড্র ব্যাক সুবিধা পাবে না।
দেশের বৃহৎ প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্লাস্টিক শিল্পের কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। কাঁচামাল আমদানির ওপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরোপিত শুল্ককর ও ভ্যাটের পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ। রপ্তানির বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা পাওয়ার শর্ত পালন করতে হলে রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে ৩০ শতাংশ হারে শুল্ককর ও ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। এ শর্তের কারণেই প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিকারকরা নগদ সহায়তা ভোগ করতে পারছেন না। কারণ রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে প্রায় ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা পাওয়া যায়, সেখানে কোনো শুল্ককর দিতে হয় না।’
জসিম উদ্দিন আরো বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তায় এ ধরনের কোনো শর্তারোপ করা হয়নি। ফলে পোশাক মালিকরা ঠিকঠাকমতো নগদ সহায়তা পাচ্ছেন।
দেশের ভেতরে বিভিন্ন কম্পানির উৎপাদিত পণ্য ডিলারদের মাধ্যমে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা হয়। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ডিলারদের কাছে পণ্য সরবরাহের সময়ই ডিলারের মুনাফা বা কমিশনের ওপর আরোপিত উেস কর কেটে রাখার কথা বলা হয়েছে।
আয়কর আইনের ৫৩ই ধারা সংশোধন করে নতুন অর্থবছরের জন্য শুধু জ্বালানি তেল কম্পানি বাদে অন্য সব পণ্যের পরিবেশকের আয়ের ওপর করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ওই পণ্যের উৎপাদক প্রতিষ্ঠান যে মূল্যে পরিবেশককে পণ্যটি দেবে, সেই দামকে ১২ দিয়ে গুণ করে গুণফলের ওপর ৫ শতাংশ হারে করারোপ করা হয়েছে। এটিও পণ্যমূল্যকে বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, প্লাস্টিক বা অন্য যেকোনো পণ্যই হোক না কেন, ডিলারদের ওপর প্রস্তাবিত বাজেটে ১০ শতাংশ হারে করারোপ করে তা কর্তনের কথা নতুন অর্থবছরের বাজেটে বলা হয়েছে। অথচ ডিলারদের ১০ শতাংশ হারে মুনাফাই হয় না। এ ক্ষেত্রে ডিলারের মাধ্যমে পণ্য বিপণন করে-এমন কম্পানিগুলো বেশ চাপে পড়বে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য হিসেবে বাংলাদেশকে বিভিন্ন পণ্যের ওপর বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে। পাশের দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশও এ কাজ করছে। কিন্তু ভারত বা অন্য দেশগুলো আমদানি পণ্যের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করলেও কাউন্টারভেইলিং ডিউটি, অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটিসহ নানা নামে নন-ট্যারিফ বাধা সৃষ্টি করে দেশীয় শিল্পের স্বার্থরক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাককে ভারত শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও কাউন্টারভেইলিং ডিউটি আরোপ করে রপ্তানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। একইভাবে বাংলাদেশের পাটের বস্তা রপ্তানিতে শর্তারোপ করে কার্যত রপ্তানি বন্ধই করে রেখেছে ভারত।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন পণ্যে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার বা কমানো হলেও আমদানি পণ্যের হাত থেকে দেশি শিল্পের স্বার্থরক্ষায় বিকল্প কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এই সহসভাপতি বলেন, নতুন বাজেট দেশীয় শিল্পের বিকাশ রোধ করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১:০৯:৫৯ ৫২০ বার পঠিত