* নম্বর প্লেটবিহীন গাড়ির খোঁজ নেই *পুলিশ কমিশনার বললেন, দেশি-বিদেশি চক্র জড়িত *পুলিশের দুই চেকপোস্ট উপেক্ষা করে গাড়ি যাওয়ার বিষয়টি অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখছে
বঙ্গ-নিউজঃ
কোটি টাকার অস্ত্রের চালান কারা খালের পানিতে ফেলেছে সেই রহস্যের কিনারা হচ্ছে না। পুলিশের দুটি চেকপোস্ট উপেক্ষা করে আনুমানিক কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্র-গোলাবারুদ গাড়িতে করে কিভাবে সেখানে আনা হলো, কারা এর সঙ্গে জড়িত-তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে। অবশ্য গতকাল সোমবার ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দাবি করেছেন, বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এসব অস্ত্র মজুদ করা হয়েছিল। বিগত দিনে যারা দেশে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন তারাই এ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত শনিবার বিকালে উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টরের দিয়াবাড়ী খাল থেকে ৯৭টি পিস্তল, ৪৬২টি ম্যাগাজিন, এক হাজার ৬০টি গুলি, ১০টি বেয়নেট ও ১০৪টি গুলি তৈরির ছাচ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে তুরাগ থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। জিডি দুইটির তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উদ্ধার করা ৭ পয়েন্ট ৬২ বোরের পিস্তল ও গুলির গায়ে উত্পাদনকারী দেশের নাম নেই। শুধু অস্ত্রের সিরিয়াল নাম্বার রয়েছে। উত্পাদনকারী দেশের নামবিহীন এক সঙ্গে এত সংখ্যক অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা দেশে এটিই প্রথম। এর আগে ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে আটক দশ ট্রাক অস্ত্র ও গোলাবারুদের প্রতিটির গায়ে উত্পাদনকারী দেশের নাম ও সিরিয়াল নাম্বার রয়েছে। তা ছাড়া ২০০৩ সালে রাজধানীর কুড়িল থেকে উদ্ধার করা বিপুল পরিমাণ গ্রেনেডের চালানেও এসবের উত্পাদনকারী দেশের নাম, সিরিয়াল নাম্বার ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। এমনকি বগুড়ার কাহালু থেকে উদ্ধার করা এক ট্রাক গুলি, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রের চালান ও সম্প্রতি হবিগঞ্জের সাতছড়ি বনাঞ্চল থেকে র্যাবের উদ্ধার করা অস্ত্র-গোলাবারুদেও উত্পাদনকারী দেশের নাম ও সিরিয়াল নাম্বার রয়েছে।
অন্যদিকে, দিয়াবাড়ী খাল থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র-গোলাবারুদ বহনে যে কালো রঙের জিপ গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে-সেটিরও নাম্বার প্লেট নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কনস্টেবল এই অস্ত্র বহনের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী। অভিজ্ঞমহল ধারণা করছে, এই অস্ত্র-গোলাবারুদ বহনে দেশি বা বিদেশি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। তাদের মতে, আন্ডারওয়ার্ল্ডে যারা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসা করে, তারা কখনোই দিনের বেলায় প্রকাশ্যে এসব আগ্নেয়াস্ত্র ফেলে দেবে না।
একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কালো রঙের গাড়িটি যদি মিরপুর বেড়িবাঁধ অংশ দিয়ে বা উত্তরা দিয়ে দিয়াবাড়ী প্রবেশ করে তাহলে সেটির পুলিশের চেকপোস্ট অতিক্রম করার কথা। এমনকি বেড়িবাঁধের তুরাগ ও মিরপুর-এই দুই অংশে পুলিশের দুটি চেকপোস্ট রয়েছে। নম্বর প্লেটবিহীন গাড়ি চেকপোস্টের পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে গেলো-তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া গাড়ির মালিক কে এবং কেন খালের পানিতে অস্ত্রের ব্যাগগুলো ফেলা হয়েছে-সে রহস্য এখনও ভেদ করা যায়নি। এমন গাড়ি অনেক ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থা ব্যবহার করে থাকে তাদের অভিযানের বিষয়টি গোপন রাখার স্বার্থে।
অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার নিয়ে গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘এটি কোনো সাধারণ সন্ত্রাসীর কাজ নয়। এগুলো মজুদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি চক্র জড়িত। আমাদের ধারণা, যারা ২০১৫ সালে নারী ও শিশু পুড়িয়ে মেরেছে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যারা দেশকে হেয়-প্রতিপন্ন করতে চায় সেই চক্রই এসব অস্ত্র মজুদ করেছিল।’
নাম্বারবিহীন গাড়িটি অস্ত্র নিয়ে কিভাবে পুলিশের চেকপোস্ট অতিক্রম করল-এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, মিরপুর ব্রিজ ও আশুলিয়া স্টেশনের দূরত্ব এক কিলোমিটার। এক কিলোমিটার ব্যবধানে দুপাশে পুলিশের দুটি স্থায়ী চেকপোস্ট রয়েছে। তিনি দাবি করেন, চেকপোস্টের দিক থেকে গাড়িটি আসার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, ‘দিয়াবাড়ীর পর থেকে উত্তরার ১৪, ১৫, ১৬ সেক্টরে বিস্তীর্ণ এলাকায় মাত্র রাস্তাঘাট তৈরি হচ্ছে। সেখানে আমাদের কোনো জনবলও নেই। আমাদের ধারণা কোনো এক সময় অস্ত্রগুলো উত্তরাতে আনা হয়েছিল এবং উত্তরার ভেতর দিক থেকেই গাড়িটা এসে এখানে অস্ত্রগুলো ডাম্পিং করে গেছে।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, আমাদের এক পুলিশ সদস্য তার পরিবারকে নিয়ে বৌদ্ধ মন্দির দেখার জন্য গিয়েছিলেন। ফেরার পথে তিনি দেখতে পান একটা গাড়ি থেকে বস্তা জাতীয় কিছু ফেলা হচ্ছে। তখন তার ধারণা হয়েছিল হয়তো লাশ ফেলা হচ্ছে। কারণ তুরাগ এলাকায় ইতিপূর্বে অজ্ঞাত লাশ ফেলার অনেক ঘটনা ঘটেছে। সেটা মনে করেই তিনি (্ওই পুলিশ কনস্টেবল) তার মোটরসাইকেল একটু এগিয়ে নিয়ে থেমে থানার ওসিকে ফোন করেন। ২০ মিনিটের মধ্যে ওসি তার দলবল নিয়ে পুরো এলাকা ঘেরাও করে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার শুরু করে। ততক্ষণে গাড়িটি উত্তরার দিকে পালিয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০:৪৫:৪০ ৪২৫ বার পঠিত