বঙ্গ-নিউজঃ
হার্ভার্ডে না গেলেও কয়েকজন গবেষকের নামের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। এদের একজন সারা লাজার, স্নায়ুবিজ্ঞানী, ম্যাসাচুসেট্স জেনারেল হাসপাতাল ও হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলে কাজ করেন। সারা লাজার মস্তিষ্ক কীভাবে পরিচালিত হয় তার গভীরে প্রবেশ করছেন নিরবচ্ছিন্ন গবেষণার মাধ্যমে। অনুসন্ধিত্সুরা তার লেখা খুঁজে বের করে পড়ছেন, যেখানে তিনি আবিষ্কার করেছেন মানুষের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে কীভাবে মানুষ মননশীলতার উচ্চস্তরে প্রবেশ করতে পারে নিজ ঐকান্তিক চেষ্টায়। হ্যাঁ, আমিও পারি। মহিলার কাছে শিখে আমরা সবাই পারি। সাংবাদিক ব্রিজিড স্কাল্টে লিখছেন ২৬ মে, ২০১৫ সালে তাকে ইন্টারভিউ করতে গিয়ে। তাকে করা হয়েছে অনেক প্রশ্ন, তার মধ্যে একটি : ধ্যান ও মনোবীক্ষণ দ্বারা ব্রেনের দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে কীভাবে ধাবিত হলেন? সারা লাজার : একবার আমি ও আমার বন্ধু বোস্টনে ম্যারাথন নিয়ে কিছু ক্রীড়াবিদকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। যখন দৌড় দিতে গিয়ে আমি জখম হলাম, আমার থেরাপিস্ট বললেন, দৌড়িও না, নিজেকে একটু প্রসারিত কর। আমি যোগ করতে বসে গেলাম। বুঝতে পারলাম আমার কাছে শক্তি ফিরে এসেছে। এরপর আমি ভাবলাম কেমন করে আমি এ থেকে আরও বেশি উপকার পেতে পারি। আমার যোগের শিক্ষক বললেন, এতে আমার মধ্যে যে দয়াদাক্ষিণ্যের কোটর আছে তাও সম্প্রসারিত হবে এবং সত্যি সত্যি আমার নিজকে বললাম, তাই তো, তাই তো, তাই তো, আমি আগের চেয়ে অনেক বেশি শান্ত এবং ধীরে ধীরে অনেক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য উপযুক্ত হলাম। আমার মধ্যে দয়া প্রসারিত হলো এবং অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করার একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। ভাবলাম এটা হয়তো খুবই সাময়িক, তা নয়। পড়াশোনা শুরু করলাম এবং দেখলাম যে, ধ্যানের মধ্যে আমি আমার স্ট্রেস, ডিপ্রেশন, চিন্তা, ব্যথা ও নিদ্রাহীনতা ভুলে নতুন জীবনে প্রবেশ করলাম। সেই সময়টা আমি মলিকিউলার বায়োলজিতে পিএইচডি করছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে ওটি বাদ দিয়ে বর্তমান বিষয়ে পিএইচডি করা স্থির করলাম। সুযোগ পেলে আমি হার্ভার্ড নিউরোসায়েন্সে ভর্তি হতাম ও নতুন জীবনের যে আহ্বান সারা লাজারের বক্তব্যে পেলাম, তাতে এমন একটি বিষয়ে পিএইচডি করাই আমার জন্য সমীচীন হতো। এ নিবন্ধটি আমার নাতি-নাতনি অথবা তাদের বন্ধুদের দৃষ্টিতে এলে তারা নিশ্চয়ই অনুপ্রাণিত হবে। পুরো নিবন্ধটিই প্রশ্ন ও উত্তরের মাধ্যমে এগিয়ে চলতে পারত, কিন্তু তা আমি করব না, কারণ আমার বক্তব্য আরও গভীরে। সারা দিন যে নামাজ পড়ছি তার প্রশিক্ষণ কোথাও পাই কি? না পিতা-মাতা, না ইমাম, না পীর সাহেব। এরা আমাদের মঙ্গল চান, কিন্তু নিজেদের মঙ্গল নিজেই নির্ধারণে সক্ষম হননি বিধায় নামাজের প্রশিক্ষণ রয়ে গেছে অবহেলিত। স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাজের কোনো কথা বললে উল্টো আমার দিকে তাকায়, ভাবে এ আবার কোন গ্রহের লোক। কিছুদিন আগে একটি লেখা বেরোয় বেশ কদিন ধরে, তাতে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার সুযোগ পাই। অনেকে ভাবেন সম্ভবত ‘প্রার্থনার স্বাদ’ পেয়ে গেছি। পাইনি। এখনো চেষ্টা করে চলেছি। সারা লাজার পথ দেখিয়েছেন। আমার ইচ্ছা তার সঙ্গে দেখা করি এবং মস্তিষ্কের কোটরে আল্লাহতায়ালার যে অলঙ্ঘনীয় বিধান কাজ করছে তার কিছুটা শেখার চেষ্টার করি। বিভিন্ন লেখায় যা বলতে চেয়েছি তারই পরিণামে চলেছি সারা লাজারের পথে। বিজ্ঞান ছাড়া জ্ঞান পরিপূর্ণ হবে না, আবার কোরআনের জ্ঞান ছাড়া বিজ্ঞানের যাত্রা পূর্ণতা পাবে না। চলেছি দুটির সমন্বয়ে। যখন সিজদা দিই, তা শুধু আমার পরিপূর্ণ শরীরের সিজদা নয়, তা হলো পরিপূর্ণ নিউরোপ্যাথের সিজদা। পূর্ণ সিজদার মূল্য বুঝলে, তখন হব অন্য মানুষ। যে কারণে পঙ্গুর গিরি লঙ্ঘন, অন্ধের ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম। নিজের মধ্যেই সম্ভাবনার বীজ প্রত্যক্ষ করে নিজেই অবাক। নিজের মধ্যে আবিষ্কার করি নিজকে। কবি নজরুল ইসলাম খানিকটা তার ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় যেভাবে নিজকে খুঁজে পেয়েছেন। অবশ্যই বিদ্রোহী নই, সমর্পিত, প্রথমে বিজ্ঞানে এবং পরে ‘ইলমান’ অর্থাৎ প্রভুর জ্ঞানে। দুটিই জ্ঞান। একটি ছাড়া আরেকটি অসম্পূর্ণ। যখন এটি লিখছি তখন প্রভু আমাকে আদেশ করছেন, আমি লিখছি না, প্রভু লিখছেন। প্রভু বলছেন, আগে ভেবে দেখ আমার কাছে আসবে কিনা। যদি আসতে চাও তাহলে নিয়ত ঠিক কর। বল আসবে। ‘আনকারিব’। আমার কাছে এসো। সব বুঝিয়ে দেব। আর কাউকে প্রয়োজন হবে না। আমিই যথেষ্ট। কী চাও, প্রথমে ঠিক করে এসো। যা চাও তার লিস্ট করে এসো। নিউরোপ্যাথের সব স্নায়ু, পরমায়ু আমার হাতে। এক মুহূর্তে তুমি তার নাগাল পাবে। যদি বিদ্রোহী হও তাহলে তাদের চূড়ামণি হয়ে সারা জীবন অন্বেষণই থাকবে ললাটের লিখন। যারা অন্বেষণ করেছে তারা আমার কাছে এসেছে কিন্তু আমাকে পায়নি। পথ পেয়েও পায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ৯:২৪:২২ ৩৫৫ বার পঠিত