বঙ্গ-নিউজঃ
এবিএম আবদুল্লাহ
মেডিসিন বিভাগ
বিএসএমএমইউ, শাহবাগ, ঢাকা
রোজা রাখার উদ্দেশ্য শরীরকে দুর্বল করে অকর্মণ্য করা নয়, বরং শরীরকে সামান্য কিছু কষ্ট দিয়ে দৈহিক ও আত্মিক উৎকর্ষ সাধন। শুধু তাই নয়, অনেক রোগের বেলায় রোজায় ক্ষতি না হয়ে বরং বহু রোগব্যাধির প্রতিরোধক এবং আরোগ্যমূলক চিকিৎসা লাভে সহায়ক হয়। রোজায় স্বাস্থ্যের সমস্যার চেয়ে বরং স্বাস্থ্যের উপকারই বেশি হয়।
ডায়াবেটিস রোগী
রোজা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রোগীদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ ও রহমতস্বরূপ। ডায়াবেটিস রোগীরা সঠিক নিয়মে রোজা রাখলে নানারকম উপকার পেতে পারেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল উপায় হলো খাদ্য নিয়ন্ত্রণ আর রোজা রাখা হতে পারে এক অন্যতম উপায়। যারা ইনসুলিনের ওপর নির্ভরশীল নন, তাদের ক্ষেত্রে রোজা রাখা হতে পারে আদর্শ চিকিৎসা ব্যবস্থা। যারা ইনসুলিন নেন তাদের ক্ষেত্রেও রোজা অবস্থায় ওষুধের মাত্রা কমাতে সহায়ক। শুধু রক্তের গ্গ্নুকোজই নয়, রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণেও রোজা মোক্ষম। এর সঙ্গে সঙ্গে রোজা ডায়াবেটিস রোগীকে সংযম, পরিমিতিবোধ ও শৃঙ্খলার শিক্ষা দেয়, যা ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় অপরিহার্য।
হৃদরোগী এবং উচ্চ রক্তচাপ
রোজার মাধ্যমে ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ হওয়ার ফলে যারা হৃদরোগে অথবা উচ্চ রক্তচাপে ভুগেন তাদের জন্য রোজা অত্যন্ত উপকারী। এতে শরীরের, বিশেষ করে রক্তনালির চর্বি হ্রাস পায়, রক্তনালির এথেরোসেক্লরোসিস কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
পেপটিক আলসার
এক সময় ধারণা ছিল, পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন না, তাদের ঘন ঘন খেতে হবে, অনেকক্ষণ পেট খালি রাখা যাবে না। অনেকে মনে করেন, রোজা পেপটিক আলসারের ক্ষতি করে এবং এসিডের মাত্রা বাড়ায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসব ধারণা ঠিক নয়। রোজায় নিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়ার ফলে এসিডের মাত্রা কমে যায়। তাই সঠিকভাবে রোজা রাখলে এবং সঠিক খাবার দিয়ে সেহরি ও ইফতার করলে রোজা বরং আলসারের উপশম করে, অনেক সময় আলসার ভালো হয়ে যায়। এ ছাড়া রোজা গ্যাস্ট্রাইটিস, ওইউ ইত্যাদি রোগেরও উপকারী।
রক্তের কোলেস্টেরল ও অতিরিক্ত ওজন
যাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, রোজা তাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। রোজা ভালো কোলেস্টেরলকে (এইচডিএল) বাড়াতে এবং মন্দ কোলেস্টেরলকে (এলডিএল) ও ট্রাইগ্গি্নসারাইড কমাতে সাহায্য করে। তদুপরি, রোজা ওজন কমানোর আরেকটা সহজ সুযোগ। ওজন কমে যাওয়ায় বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে থাকা যায়, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, বাতের ব্যথা, অস্টিও আর্থ্রাইটিস, গাউট ইত্যাদি।
শ্বাসকষ্ট বা এজমা রোগী
যারা এসব রোগে ভোগেন, তাদেরও রোজা রাখতে কোনো অসুবিধা নেই। রোজায় এ ধরনের রোগ সাধারণত বৃদ্ধি পায় না। বরং চিন্তামুক্ত থাকায় এবং আল্লাহর প্রতি সরাসরি আত্মসমর্পণের ফলে এ রোগের প্রকোপ কমই থাকে। প্রয়োজনে রাত্রে একবার বা দু’বার ওষুধ খেয়ে নেবেন, যা দীর্ঘক্ষণ শ্বাস নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ ধরনের ওষুধ বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। দিনের বেলায় প্রয়োজন পড়লে ইনহেলার জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যায়, যা রোজার কোনো ক্ষতি করবে না।
রোজা যেহেতু আল্লাহতায়ালার জন্য এবং আল্লাহর পুরস্কার দেবেন, তাই কেউ যদি মনে করেন আমি আল্লাহর জন্যই রোজা রাখব, যা হওয়ার হবে, তার কোনো সমস্যাই হবে না। আর যারা মনে করবে রোজা রাখলে নানা রকমের সমস্যা হবে, রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে, নানা রকম জটিলতা হবে, তাদের বেলায় এসব সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। দৈহিক রোজার সঙ্গে সঙ্গে অন্তরের রোজাটাই আসল, তাই কোনো অজুহাত বা আলস্য করে রোজা পালন থেকে বিরত থাকা উচিত নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৫:৪৩ ৪৬২ বার পঠিত