বঙ্গ-নিউজঃ
‘তাকে বর্ণনা করতে যেও না, শুধু দেখে যাও।’ একদা বলেছিলেন লিওনেল মেসির এক সময়ের কোচ পেপ গার্দিওলা। অর গতকাল পানামা কোচ হার্নান দারিও গোমেজ বলেন, ‘লিওনেল মেসি স্রেফ একটা দৈত্য। ও মাঠে নামার আগে আমরা প্রায় সমান তালে লড়েছিলাম। কিন্তু সে মাঠে নামার পর সব বদলে গেল। মেসির সামনে সামান্য একটা ভুল করলে সেটির চড়া মূল্য দিতে হয়।’ গোমেজ তো একথা বলবেনই। ৬১তম মিনিটে মাঠে নেমে মাত্র ১৯ মিনিটের ব্যবধানে করলেন তিন তিনটি গোল। টিভি পর্দায় বা শিকাগোর সোলজার ফিল্ড স্টেডিয়ামে বসে যারা ম্যাচের সাক্ষি হয়েছেন তারা নিজেরাই বিবাদে জড়াতে পারেন কোন গোলটার চেয়ে কোনটা সুন্দর এমন আলোচনায়। অথচ যে মানুষটার উপস্থিতিতে মাঠে এমন জাদকরী পরিবর্তন, নিজের উজ্জ্বল পারফর্মেন্স দিয়ে যিনি বাকিদেরও মাঠে অনুপ্রাণিত করলেন সেই মেসির নাকি ‘ব্যক্তিত্ব নেই’। অথচ এগুলোই একজন অধিনায়কের আসল দায়িত্ব হওয়া উচিত নয় কি? যাকে ফুটবলের আদর্শ মানেন সেই ডিয়েগো ম্যারাডোনার কাছ থেকে এমন সমালোচনা নিশ্চয় তাতিয়ে তুলেছিল সময়ের সেরা খেলোয়াড়কে। এতেই এক দিনে তাঁর প্রাপ্তির খাতায়ও যোগ হলো বেশ কিছু। হ্যাটট্রিক হলো, দল ৫-০ গোলের বড় ব্যবধানে জিতল, কোপা আমেরিকার শতবর্ষী আসরের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হল। সেই সাথে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে গোল সংখ্যাটাও বাড়িয়ে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা বাতিস্তুতার আরো কাছাকাছি পৌঁছানো গেলো। যেখানে আর মাত্র ৪ গোল করলেই রেকর্ডটা নিজের করে নিতে পারবেন মেসি। এমন ফর্ম যদি অব্যাহত থাকে তাহলে কে জানে এই আসরেই হয়তবা সেই রেকর্ডের সাথে ২৩ বছরের অধরা ট্রফিটাও দখলে নিতে পারেন। এর জন্য অবশ্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আপাতত চোট কাটিয়ে দলে ফিরতে পেরেই খুশি ৫ বারের বর্ষসেরা, ‘আমি খুশি, খুশি ফিরতে পেরে, বিশ্রামের পর আবারো খেলতে পেরে। আমি সব সময়ই খেলতে চেয়েছি ফলাফলের জন্যে, গোলের জন্যে। বিশ্বাস করুন আমি খুব খুশি।’ আগুস্তো ফার্নান্দেজের বদলি হিসেবে মাঠে নামার ৭ মিনিট পরই পানামার রক্ষনের ভুলে ডি বক্সে বল পেয়ে যান মেসি। ঠাÐা মাথায় বাঁ পায়ের শটে তা জালে পাঠাতে একদম ভুল হয়নি বার্সা তারকার। এর ১০ মিনিট বাদেই শিকাগোর প্রায় ৫৪ হাজার দর্শক সাক্ষি হয় এক শৈল্পিক ফ্রি-কিকের। বাঁ পায়ের বাঁকানো শট মানব দেওয়ালের উপর দিয়ে গোলপোষ্টের দূরূহ কোন বরাবর ধেয়ে আসতে দেখছেন পানামা গোলরক্ষক। কিন্তু বিশাল ডাইভিংয়েও বলের নাগাল পেলেন না তিনি। মাঠের দর্শকেরা তখন বিস্ময়ে আবøুত। এর ৯ মিনিট বাদেই পানামা রক্ষন ব্যুহ ভেদ করে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন ফুটবল জাদুরক। এসময় পানামার তিনজন রক্ষণের খেলোয়াড় তাঁকে আটকানোর শুধু বৃথা চেষ্টাই করেন মাত্র। শেষ সময়ে বদলি খেলোয়াড় আগুয়েরোর করা গোলেও আছে মেসির অবদান। তবে আর্জেন্টিনার এমন সব প্রাপ্তির দিনে অস্বস্তি হয়ে এসেছে এঞ্জেল ডি মারিয়ার ইনজুরি। ম্যাচের প্রথমার্ধের শেষ সময়ে ঊরুর চোটে হঠাৎই মাঠে বসে পড়েন ডি মারিয়া। এরপর মাঠ ছাড়েন খুঁড়িয়ে। এখনো অবশ্য জানা জায়নি তার চোট কতটা গুরুতর। প্রধমার্ধে আর্জেন্টিনা প্রভাব দেখায় ডি মারিয়ার নৈপূণ্যেই। তার দুর্দান্ত ফ্রি-কিক থেকেই ম্যাটের সপ্তম মিনিটে দলকে এড়িয়ে নেন নিকোলাস অটেমেন্ডি। চিলির বিপক্ষেও নায়কের ভমিকায় ছিলেন ডি মারিয়া। ২-০ গোলের জয়ে সেদিন একটি গোল করেছিলেন অপরটি করিয়েছিলেন। দলের এমন একজনের ছিটকে পড়াটা দলের জন্য কতটা ধাক্কা তা কোচ মার্টিনোই জানেন। আর্জেন্টিনার বড় কোন টুর্নামেন্ট আসলেই যেন ডি মারিয়াকে জেকে ধরে চোট। গত ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে তো মাঠেই নামতে পানেনি। গেল কোপার ফাইনালেও আধা-ঘণ্টার মাথায় মাঠ ছাড়েন চোট নিয়ে। ২০০৭ অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপেও চোটের কারনে ছিলেন দর্শক হয়ে। আর্জেন্টিনার জয়ের দিনে যোগ করা সময়ের পেনাল্টি গোলে ২-১ ব্যবধানের জয় পেয়েছে চিলি। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের হয়ে বলিভিয়ার বিপক্ষে জয়সূচক দুটি গোলই করেন বায়ার্ন মিউনিখ ফুটবলায় ভিদাল। প্রথম ম্যাচে বলিভিয়া হেরেছিল পানামার কাছে। ফলে ‘ডি’ গ্রæপে এখন চিলি ও পানামার পয়েন্ট সমান ৩ করে। তবে গোল ব্যবধানে এগিয়ে চিলিই। আগামী বুধবার আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ আসর থেকে বিদায় নিশ্চিত হওয়া বলিভিয়া। একই দিনে পরের রাউন্ডের জন্য লড়বে চিলি ও পানামা। শেষ আট নিশ্চিত করার লড়াইয়ে বাংলাদেশ সময় আগামীকাল সকাল ৭টায় পেরুর বিপক্ষে মাঠে নামবে ব্রাজিল।
বাংলাদেশ সময়: ০:২৪:৪০ ৩৮৬ বার পঠিত