বঙ্গ-নিউজঃ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মোটরসাইকেলে দুই জনের বেশি যাত্রী চড়া নিয়ন্ত্রণ এবং বাধ্যতামূলকভাবে হেলমেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন রকমের আপস করা হবে না।
তিনি শুক্রবার রাজধানীর ইস্কাটনের বিয়াম ফাউন্ডেশনের শহীদ নুরুল আমিন হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
বাংলাদেশে রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সূচনা বক্তব্য দেন ।
ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বলেন, ‘মোটরসাইকেলে শিশুদের সহযাত্রী করা যাবে না । পৃথিবীর কোনো দেশে মোটরসাইকেলে শিশুরা আরোহী হয় না। অথচ এখানে পুরো পরিবার নিয়ে বিপজ্জনকভাবে মোটরসাইকেলে চড়তে দেখা যায়। এক্ষেত্রে কোন সহনশীলতা দেখানো যাবে না। কারণ, বিষয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সারা বাংলাদেশে বিষয়টিকে কঠোরভাবে দেখতে হবে।’
তিনি বিআরটিএ’র সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও দায়িত্বশীলদের মোটরসাইকেলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে নির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।
মোবাইল কোর্ট করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হলেও ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা রাস্তা থেকে কমছে না বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জনগণের ঈদযাত্র নির্বিঘœ এবং যানজট নিরসনে রাজধানীর আশেপাশের মহাসড়কগুলোর ১৪টি পয়েন্টে ঈদের পাঁচদিন আগ থেকে এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে। পয়েন্টগুলোতে প্রতিদিন তিন শিফটে স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবেন। ইতোমধ্যেই এই স্বেচ্চাসেবক নিয়োগের কাজ চলছে, এবং তাদেরকে ন্যূনতম ভাতাও দেয়া হবে।
পুরনো পিকআপ কেটে গাজীপুরে লেগুনা তৈরী করা হচ্ছিল এবং এর বিরুদ্ধে সম্প্রতি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। তাৎক্ষণিক পরিদর্শনকালে অভিযান চালিয়ে মন্ত্রী সেগুলোকে জব্দ করার নির্দেশ দেন। শুধু জব্দ করলে হবে না, পুনরায় যাতে কেউ এসব অপরাধ ও অবৈধ কাজ করতে না পারে, সেজন্য কাজের ফলোআপ করতে হবে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ বিআরটিএ’কে দালাল মুক্ত দেখতে চায়। আমরা হয়রানি ও দালালমুক্ত বিআরটিএ দেখতে চাই। তাৎক্ষণিক পরিদর্শন ও অভিযানসহ নানা কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বিআরটিএ এখন ৬০ ভাগ দুর্নীতিমুক্ত। কিন্ত শতকরা ৪০ ভাগ এখনও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি’।
ওবায়দুল কাদের বিআরটিএকে আরও সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অপরিণত বয়সী চালকদের ঢাকাসহ সারা দেশে নিয়ন্ত্রণের জন্য বিআরটিএ কর্মকর্তাদের বিশেষ নজর রাখতে হবে।
তিনচাকার মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমন, করিমন-এ কথা উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী আরও বলেন, এগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে যানজট ও দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়। যানজট নিরসনে রাস্তাঘাট অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, রিক্সা, অটোরিক্সা, নসিমন, করিমন তৈরীর কারাখানা বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠার সংবাদ পাওয়া যায়। এইগুলো কঠোরভাবে বন্ধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই ব্যাটারির জন্য বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে। তেমনি দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী গণপরিবহনের ভাড়ার প্রশ্নে, গাড়ির ফিটনেসসহ অন্যসব নীতিগত প্রশ্নে জনগণকে জিম্মি করে কারও সাথে আপস না করতে বিআরটিএ-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, প্রকৃতপক্ষে এটাই হবে বিআরটিএ-এর নীতি।
বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, সরকার নতুন করে আর কোন সিএিনজি অটোরিক্সার অনুমোদন দেয়নি এবং দেয়ার চিন্তা-ভাবনাও করছে না।
সিএনজি অটোরিক্সায় মিটারে যাওয়া নিশ্চিত করার জন্য বিআরটিএকে মোবাইল কোার্টের মাধ্যমে কার্যক্রম জোরদার করার পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বা যাত্রীদের যাতে চালকরা হয়রানি না করতে পারে, সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, মহাসড়কের পাশে যতো অবৈধ স্থাপনা আছে তা উচ্ছেদ করা হবে। কারো মুখের দিকে তাকিয়ে উচ্ছেদ বন্ধ করা যাবে না।
তিনি যানজট নিরসনে রাস্তা দখলমুক্ত রাখার উপর জোর দিয়ে বলেন, এজন্য বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে জোরালো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারও মুখ দেখে কাজ করলে চলবে না। বিআরটিএ’কে তার নিজস্ব নিয়ম অনুয়ায়ী কাজ করেতে হবে।
সড়ক পরিবহন আইন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে- এ কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইতোমধ্যেই আইনটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। পার্লামেন্টে আসবে। এই আইনটি পাশ হলে গণপরিবহন ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে শৃংখলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
গাড়ির ফিটনেস ও ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, উড়ালসেতুসহ যত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করিনা কেন, যদি ট্রাফিক বিশৃংখলা থাকে তাহলে কিছুই কাজে দেবে না। আমরা ট্রাফিক আইন সঠিকভাবে মানছি না।
তিনি ফিটনেসবিহীন গাড়ি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও দমনে করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, তা না করতে পারলে যানজট নিয়ন্ত্রণ হবে না, জনগণের ভোগান্তি কমবে না। ফুটপাথ যদি জনগণের জন্য ছেড়ে দিতে না পারি, যতই মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস, ফোরলেন প্রকল্প করি না কেন, জনগণের কোন লাভ হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১০:১৫:৪৫ ৪১৩ বার পঠিত