বঙ্গ-নিউজঃ সংবাদপত্র ও বাকস্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র অর্থহীন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
‘দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ’ পত্রিকার নবযাত্রা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার প্রকাশক মো. তাজুল ইসলাম, এমপির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি ও পত্রিকার সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদ খান।
সমাজ বিনির্মাণে সাংবাদিকদের ভূমিকা তুলে ধরে দীর্ঘ বক্তব্য প্রধান করেন প্রধান বিচারপতি। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সংবাদপত্রের দায়িত্বও তুলে ধরেন। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক সমাজে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতার গুরুত্বও তুলে ধরেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সংবাদপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রকৃত সুন্দর হলো বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ব্যতীত গণতন্ত্র অর্থহীন। রাষ্ট্র যখন বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে তখনই বলা যায় যে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে গণতন্ত্র গুণগত এবং দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এবং আমাদের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা তথা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যা মৌলিক অধিকার হিসেবে আমাদের মহান সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে।’
বিচার বিভাগের সঙ্গে সংবাদপত্রের ইতিবাচক সম্পর্কের ওপরও জোর দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় বিচার বিভাগের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগ স্বাধীন না হলে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা পায় না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন সাংবাদিকরা। ফলে বিচার বিভাগ ও সাংবাদিকদের মধ্যে সুসম্পর্ক অত্যাবশ্যক। মিডিয়া বিচার বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রম বিষয়ে সময়োপযোগী সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে নিরন্তর সহযোগিতা করে বিচার বিভাগের যুগান্তকারী সংস্কার সাধনে গুরুত্ব ভূমিকা পালন করছে।’
এ ক্ষেত্রে কিছু গণমাধ্যমের নেতিবাচক ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কিছু কিছু সংবাদপত্র ব্যক্তিগত বিদ্বেষ, একপেশে খবর, অদূরদর্শী এবং পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর জন্য নৈতিকতা-বিবর্জিত সংবাদ প্রচার করে বিচার বিভাগ তথা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। অনেক সময় মিডিয়া ট্রায়ালের ফলে বিচারক এবং বিচারপ্রার্থী জনগণ বিব্রত হয় যা অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।’
বিচার বিভাগেরও ত্রুটি থাকতে পারে বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি। সে ক্ষেত্রেও সমালোচনায় বস্তুনিষ্ঠ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘বিচার বিভাগও ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। আশা করি, বিচার বিভাগের কার্যক্রম সম্পর্কে সংবাদ ও মিডিয়া কনস্ট্রাকটিভ অ্যান্ড ফেয়ার (গঠনমূলক ও স্বচ্ছ) সমালোচনা করবে। বিদ্বেষ প্রসূত হয়ে বিচার বিভাগকে হেয় প্রতিপন্ন করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
নারীর ক্ষমতায়ন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায়ও সংবাদপত্রের ভূমিকাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘নারী ও শিশু অধিকার ও মানবাধিকার বিষয়ে আমাদের সমাজ তথা রাষ্ট্র এখনো যথেষ্ট যত্নবান নয়। ফলে অহরহ নারী অধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। একটি সভ্য সমাজে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদাহরণমূলক এগিয়ে আসলেও এখনো বহু ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। রাষ্ট্রে সমতা বিধানে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। একইভাবে যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে তারও প্রতিকার করতে হবে।’
বাংলাদেশ সময়: ০:৪২:২৪ ৪০০ বার পঠিত