বঙ্গ-নিউজঃকান (ফ্রান্স) থেকে: যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান পরিচালক জিম জারমাশের মুখে নিজের রূপের প্রশংসা শুনে পারলে টেবিলের নিচে ঢুকে যান ইরানি অভিনেত্রী গোলশিফতেহ ফারাহানি। লজ্জায় লালও হয়ে গেলেন!’একটা ছিলো সোনার কন্যা মেঘবরণ কেশ’- গোলশিফতেহকে দেখে এই গানটাই মনে পড়লো বেশি করে। গলা, নাক আর কানে কোনো অলঙ্কার নেই। তবুও কতো সুন্দর! মেঘকালো চুলগুলো একপাশে গুছিয়ে রাখা। সেই মেঘে খেলে যাচ্ছে ঢেউ! গত ১৬ মে ইরানি সৌন্দর্য নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হলেন তিনি।
এদিন ৬৯তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে দেখানো হয়েছে গোলশিফতেহর নতুন ছবি ‘প্যাটারসন’। এবারের স্বর্ণপাম জয়ের অন্যতম দাবিদার জিম জারমাশের ছবিটি। এতে বাস ড্রাইভার প্যাটারসনের (অ্যাডাম ড্রাইভার) উচ্চাভিলাষী স্ত্রী লরার ভূমিকায় দেখা গেছে ৩২ বছর বয়সী এই তারকাকে।
এ নিয়ে দশবার কানের প্রতিযোগিতা বিভাগে স্থান পেলো জিম জারমাশের ছবি। ১৯৯৩ সালে `কফি অ্যান্ড সিগারেটস’র জন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের স্বর্ণপাম জিতেছিলেন তিনি। তারও আগে ১৯৮৪ সালে `স্ট্রেঞ্জার ইন প্যারাডাইস’ তাকে এনে দিয়েছে ক্যামেরা দ’র পুরস্কার। ২০০৫ সালে ‘ব্রোকেন ফ্লাওয়ার্স’ ছবির সুবাদে জিম জেতেন গ্রাঁ প্রিঁ।
এমন খ্যাতিমান নির্মাতার ছবিতে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত গোলশিফতেহ। তিনি তো বলেই ফেললেন, “এটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ঘটনা। এখনও নিজেকে প্রশ্ন করি, এটা কি সত্যিই হয়েছে? ১২ বছর বয়সে তার ‘কফি অ্যান্ড সিগারেটস’ প্রথম দেখেছিলাম। তখন থেকেই তিনি আমার পছন্দের নির্মাতা। তার সঙ্গে কাজ করতে পারা অবিশ্বাস্য ব্যাপার মনে হচ্ছে। কখনও স্বপ্নও দেখিনি তার পরিচালনায় অভিনয় করবো। তিনি সত্যিই অসাধারণ।”
সংবাদ সম্মেলনে গোলশিফতেহ আসতেই তাকে ‘গোলি, গোলি’ বলে ডাকছিলাম। ডাকতেই তিনি ক্যামেরায় তাকিয়ে হাসলেন। সেই হাসিতে যেন মুক্তো ঝরে! মাঝে মধ্যে মুচকি হাসছিলেন। সাদা মিনিড্রেসের হাতের অংশ বেশ বড়। এতে দারুণ মানিয়েছে তাকে।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে গোলশিফতেহ জানালেন, তার জন্ম সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে। ছোটবেলা থেকে সংগীত বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি গানবাজনাও করেন তিনি। ইরানে নিষিদ্ধ হওয়ায় তিনি এখন ফ্রান্সপ্রবাসী। ইরান ছাড়া প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘আমি ইরান ছাড়তে চাইনি, ছাড়তে হয়েছে। তবে যেখানেই যাই, নিজের কাজের প্রতি আমি সবসময় আন্তরিক।’
দারিউস মেহেরজুইয়ের ‘দ্য পিয়ার ট্রি’র মাধ্যমে রূপালি পর্দায় গোলশিফতেহর পথচলা শুরু হয়েছিলো সেই ১৯৯৮ সালে। একই পরিচালকের ‘সানতুরি’ (২০০৭) তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। এর আগের বছর তিনি কাজ করেন বাহমান গোবাদির ‘হাফ মুন’ (২০০৬) ছবিতে। এছাড়াও কাজ করেন আসগর ফারহাদির ‘অ্যাবাউট ইলি’ (২০০৯), আতিক রহিমির ‘দ্য প্যাশেনস স্টোন’ (২০১২), হানের সেলিমের ‘মাই সুইট পেপার ল্যান্ড’ (২০১৩) ছবিতে।
ফ্রান্স, স্পেন এবং হলিউডেও এখন পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন গোলশিফতেহ। কাজ করেছেন লিওনার্ডো ডিক্যাপ্রিওর সঙ্গে রিডলি স্কটের ‘বডি অব লাইস’ (২০০৮) ও ক্রিশ্চিয়ান বেলের সঙ্গে ‘এক্সোডাস: গডস অ্যান্ড কিংস’ (২০১৪), রোল্যান্ড জোফির ‘দেয়ার বি ড্রাগনস’ (২০১১), মারজান সাতরাপির ‘চিকেন উইথ পামস’ (২০১১), সিয়েনা মিলারের সঙ্গে ‘জাস্ট লাইক অ্যা ওম্যান’ (২০১২), জন স্টুয়ার্টের ‘রোজওয়াটার’ (২০১৪), লুই গ্যারেলের ‘টু ফ্রেন্ডস’ (২০১৫), অ্যান্টোনিও ব্যান্ডেরাসের সঙ্গে ‘অ্যাল্টামিরা’ (২০১৬) ছবিতে। এখন তার হাতে আছে জনি ডেপের সঙ্গে ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান: ডেড মেন টেল নো টেলস’। এটি মুক্তি পাবে ২০১৭ সালে।
ফ্রান্স সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৬
বাংলাদেশ সময়: ১৯:০০:৫১ ৪৬১ বার পঠিত