বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ ষোলশহর রেলক্রসিংয়ে তেলবাহী ওয়াগন ও বিআরটিসি বাসের সংঘর্ষের কারণ হিসেবে রেল কর্মকর্তা এবং দুর্ঘটনা কবলিত বাসটির যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে।চট্টগ্রামে তেলের ট্রেনের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ; নিহত ২
বাসযাত্রীদের দাবি, ট্রেন আসার ঠিক আগ মুহূর্তে হুইসেল শুনে তড়িঘড়ি রেলক্রসিংয়ের সিগন্যাল বার নামানো হয়েছিল। কিন্তু আগেই রেললাইনে উঠে পড়া বাসটি সড়কের মুখে ট্রাফিক সিগন্যাল থাকায় আর সরতে পারেনি।
তবে রেল কর্মকর্তারা বলছেন, সময়মতই নামানো হয়েছিল সিগন্যাল বার। কিন্তু সংকেত অমান্য করে বাসটি লাইনে উঠে পড়ায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার সকাল ১১টা ১০ মিনিটে এ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মরিয়ম বিবি (৪০) এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরেক নারী (৩০)।
নগরীর দুই নম্বর গেট মোড়ের অদূরে পূর্ব-পশ্চিমমুখী রেললাইন। অক্সিজেন-বায়েজিদ-দুই নম্বর গেট সড়কটিতে উত্তর-দক্ষিণমুখী যান চলাচল করে। রেলক্রসিং অতিক্রম করেই দুই নম্বর গেট মোড়ে আসতে হয়।
ঘটনাস্থলে দেখা যায়, রেলক্রসিংসংলগ্ন সড়কে লালখান বাজার-মুরাদপুর ফ্লাইওভারের র্যাম্পের জন্য মাটি খোঁড়া হচ্ছে। এ কারণে অনেকদিন ধরেই সড়কের ওই অংশ এবড়ো-থেবড়ো হয়ে আছে।
রেলক্রসিংয়ে সড়কের দুই বিপরীতমুখী অংশের মধ্যে সড়ক বিভাজকও নেই। অস্থায়ী প্রতিবন্ধকতা বসিয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাক্স’র কর্মচারীরা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন।
রেলক্রসিংটিতে সিগন্যাল বার ফেলা হলেও সড়ক বিভাজক না থাকায় প্রায়ই বিপরীতমুখী সব যানবাহন উল্টো লেনে ঢুকে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই নম্বর গেট রেলক্রসিং অংশে উত্তর-দক্ষিণমুখী ছিল বিআরটিসির বাসটি (চট্ট মেট্রো ব- ১১-০৭-৫)। আর পূর্ব থেকে পশ্চিমে হাটহাজারীর দিকে যাচ্ছিল তেলবাহী পিডিবি শাটল ট্রেনটি।
ট্রেনটি বাসের পেছনের অংশে সজোরে আঘাত করার আগেই বিপদ আঁচ করতে পেরে অধিকাংশ বাসযাত্রী নেমে পড়েন।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসে থাকা শিক্ষার্থী সাইফুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসটি নতুন পাড়া থেকে টাইগার পাস যাচ্ছিল। বাস যখন লাইনের ওপর ওঠে তখন দুটি সিগন্যাল বারের কোনোটিই ফেলা ছিল না।
“এর কিছুক্ষণ পর দূর থেকে ট্রেনের হুইসেল শোনা যাচ্ছিল। হুইসেল শোনার পর সড়কের ডান পাশের সিগন্যাল বারটি ফেলা হয়। আমরা ছিলাম রেললাইনের বাম পাশে।”
বাম পাশের সিগন্যাল বারটি শেষ পর্যন্ত ফেলা হয়নি দাবি করে সাইফুর বলেন, বাসচালকের সহকারী আমাদের নামতে নিষেধ করে। তারপরও কেউ জানালা দিয়ে, কেউ দরজা দিয়ে নেমে পড়ে।
“শেষ মুহূর্তে বাসচালক গাড়িটি রেললাইন থেকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে অল্প একটু সামনে এগিয়ে নেয়। তারপর চালক বাস থেকে নেমে পালিয়ে যায়।”
দুই নম্বর গেটে ট্রাফিক সিগন্যালে অন্যান্য গাড়ি থাকায় বাসচালক আর সামনে এগোতে পারেনি বলে জানান তিনি।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জামাল আহমদ বলেন, “সিগন্যাল বার নামানো ছিল না। বাসটি লাইনে ওঠার পর সামনে গাড়ি থাকায় আর নামতে পারেনি।”
তবে এ অভিযোগ নাকচ করে পূর্ব রেলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল আলম বলেন, “বার ফেলা হয়েছিল। ওই অবস্থাতেই বাসটি লাইনে ঢুকে পড়ে।”
তারপরও বাসযাত্রী ও স্থানীয়দের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
জিআরপি থানার ওসি হিমাংশু দাশ রানাও একই দাবি করেছেন।
“গেটম্যান ঠিক সময়েই বার ফেলেছিল। কিন্তু বাসটি তারপরও লাইনে উঠে পড়ে। পরে অবস্থা বুঝে বাসচালক বায়ে মোড় নিতে চায়। না পেরে, বাসের সামনের অংশ একটু এগিয়ে দিয়ে পেছনের অংশ রেললাইনের ওপর রেখে দেয়।”
নিহতদের নিয়েও ভিন্নমত
পুলিশের দাবি নিহত দুই নারীই পথচারী। বাসটির পেছনের অংশে ধাক্কা দেয়ার পর ট্রেনের সঙ্গে আটকে গেলে সেটিকে টেনে প্রায় ৩০ গজ নিয়ে যায়। এসময় বাসের ধাক্কায় হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে ধারণা পুলিশ ও রেল কর্মকর্তাদের।
পুলিশ কর্মকর্তা হিমাংশু দাশ রানা বলেন, “নিহত দু’জন পথচারী।”
তবে বাসযাত্রীদের দাবি নিহত মরিয়ম বাসেই ছিলেন।
বাসযাত্রী সাইফুর রহমান বলেন, “মরিয়ম বেগম তার তিন সন্তানকে নিয়ে বাসেই ছিলেন।”
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাক্স’র নিরাপত্তারক্ষী জামাল হোসেন জানিয়েছেন, ট্রেন ধাক্কা দেওয়ার পরপর বাস থেকে তিনজন রাস্তায় ছিটকে পড়ে।
“তাদের মধ্যে দু’জন মহিলা ও একজন পুরুষ। বেশি আহত এক মহিলার সারা গায়ে ছিল রক্ত। কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে পুলিশ এলে আমিসহ ধরে তাদের গাড়িতে তুলে দিই।”
বাংলাদেশ সময়: ২২:০৪:২৭ ৪৮১ বার পঠিত