বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ সরকার উত্খাতের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন সেই বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী। গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা আগে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিবের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।আসলাম চৌধুরীকে গ্রেফতারের বিষয়টি ইত্তেফাককে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার পথে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার খিলক্ষেতে তিনশ ফুট প্রশস্ত রাস্তা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসলামের সঙ্গে গাড়িতে থাকা তার এক সহযোগী এবং চালককেও আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত ৫ মে প্রথম ইত্তেফাকে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। ওইদিন ইত্তেফাকের শিরোনাম ছিল “সরকার উত্খাতে এবার ‘মোসাদ’র অর্থায়ন”। এরপর ধারাবাহিকভাবে ইত্তেফাকে এ নিয়ে রিপোর্ট ও ছবি ছাপা হয়েছে। প্রথমদিকে বিএনপি ও আসলাম চৌধুরী নিজে বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে সবাই স্বীকার করেন ইত্তেফাকের ছবি ও রিপোর্ট সত্য। আসলাম চৌধুরী নিজেও মোসাদ নেতার সঙ্গে বৈঠকের কথা স্বীকার করেন। এরপরই গোয়েন্দারা তার ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। অবশেষে গতকাল তিনি গ্রেফতার হলেন।
দুপুরে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার সাংবাদিকদের জানান, আসলাম চৌধুরীর বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সকল স্থল ও বিমানবন্দরে তার ছবি পাঠানো হয়েছে। যেখানেই তাকে পাওয়া যাবে তাকে গ্রেফতার করা হবে। এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আইএস নিয়ে প্রচারণা, বিএনপি নেতার মোসাদ এজেন্টদের সঙ্গে বৈঠক সবই একই সূত্রে গাঁথা। এগুলো বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আমরা তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।’
আসলাম চৌধুরীকে কী অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ নাজমুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, ‘সরকার উত্খাতের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন আমরা খুঁজে বের করব তার সঙ্গে আরো কারা জড়িত। এর বাইরে তার বিরুদ্ধে নাশকতা, গাড়িতে আগুন দেওয়াসহ বহু মামলা রয়েছে। সেসব বিষয়েও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ৩৫টি মামলা রয়েছে। তাছাড়া ৩০০ কোটি টাকা ঋণখেলাপির অভিযোগেও অভিযুক্ত তিনি।
চট্টগ্রামের স্থানীয় নেতা থেকে হঠাত্ করেই বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দলের যুগ্ম মহাসচিব হওয়াকে অনেকেই ভালোভাবে দেখেননি। দলের অনেকে তখন সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, নিশ্চয়ই ভেতরে এমন কিছু ঘটেছে যাতে এক লাফে তিনি যুগ্ম মহাসচিব হয়েছেন। ইত্তেফাকের হাতে থাকা ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইসরাইলের ক্ষমতাসীন দল লিকুদ পার্টির নেতা ও ইসরাইলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির প্রধান মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে দিল্লিতে শুধু একটি নয় একাধিক বৈঠক করেছেন আসলাম চৌধুরী।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইত্তেফাকে বলেন, ‘ইত্তেফাকে এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের পর পুলিশ সদর দফতর থেকে বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছিল। আসলাম চৌধুরীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল। সদর দফতরের ওই টিমের তথ্যের ভিত্তিতেই গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। শুধু দিল্লিতে নয়, লন্ডনেও মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বিএনপি নেতাদের যে বৈঠক হয়েছে সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ওই বৈঠকে কারা ছিলেন সে ব্যাপারে তথ্য নেয়া হবে। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে, বিএনপির একজন শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারক ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।’
আসলাম চৌধুরীকে গ্রেফতারে নেতৃত্ব দেয়া এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘তাকে গাড়িসহ সহকারী ও ড্রাইভারকে নিয়ে আসা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যালয়ে আনার পর তিনি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন, তার বৈঠকের বিষয়টি দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকেই জানতেন। নিজের স্বার্থে এই বৈঠক করতে যাননি। দলের অনুমতি নিয়েই তিনি দিল্লি গেছেন। তবে লন্ডনে তিনি যাননি বলে দাবি করেছেন। এখন তাকে এই বিষয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই ষড়যন্ত্র চক্রের সঙ্গে আরো কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হবে।’
আসলাম চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উল্লেখ করে গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নজরদারিতে আছে (আসলাম), আরো তথ্য কালেকশন করে পরবর্তী অ্যাকশনে যাব।’ বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কহীন একটি দেশের রাজনীতিকের সঙ্গে বিএনপি নেতার বৈঠকের বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আর কারা কারা এ বিষয়ে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করছি। আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে। যারা জড়িত থাকুক, সবাইকে খুঁজে বের করব। তারা কীভাবে জড়িত, কোন পর্যন্ত ক্ষতি করেছে- সব কিছু জানিয়ে দেব।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মোসাদ বিভিন্ন কায়দায় আমাদের এখানে নানা ধরনের অপতত্পরতা চালানোর চেষ্টা করছে। এখন পর্যন্ত যাদের নাম আসছে, তাদের গতিবিধির উপর আমরা নজরদারি করছি। তাদের সঙ্গে এখানে কারা কারা সম্পৃক্ত আছে সেইগুলো আমাদের গোয়েন্দারা দেখছে।’
বিএনপির বিষয়ে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, ‘তারা যে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে, তারই আরেকটা বহিঃপ্রকাশ মোসাদের সঙ্গে যুগ্ম মহাসচিবের বৈঠক।’ এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাজধানী থেকে বিএনপির এই নেতাকে গ্রেফতার করল গোয়েন্দারা।
ইসরাইলের মেন্দি এন সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনসের ফেইসবুক পেইজেও দেখা যায় তাদের একাধিক ছবি। লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি ইসরাইলের বর্তমান সরকারের উপমন্ত্রী এম কে আয়ুব কারার একজন সাবেক উপদেষ্টা। তিনি নিজের নামে মেন্দি এন সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস প্রতিষ্ঠানটি চালান।
আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করছেন, শেখ হাসিনা সরকারকে উত্খাত করতে বিএনপি ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে মিলে ‘ষড়যন্ত্র’ করছে। বিষয়টি জেনে ঢাকায় ফিলিস্তিনি চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন হবে ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’। তবে বিএনপি মোসাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ওই সফর ছিল আসলামের ‘ব্যক্তিগত’।
বাংলাদেশ সময়: ০:৩৪:২২ ৪১৪ বার পঠিত