বঙ্গ-নিউজঃ কান উত্সবে গত প্রায় একযুগেরও বেশি সময় ধরে যাতায়াত স্বপন আহমেদের। ব্যক্তিজীবনেও তিনি ফ্রান্সেরই নাগরিক। তাই চিরচেনা সিনেমার উত্সবের শহর কানকে তিনি যতটা খুঁটিয়ে দেখেন, অন্য কোনো বাঙালির পক্ষে তা দুরূহ। গত ২ বছর ধরেই ইত্তেফাক বিনোদন-এ কান উত্সব নিয়ে সরাসরি দেখা অভিজ্ঞতার গদ্য লিখছেন তিনি। এ বছর আজ প্রকাশ পেল তার প্রথম কিস্তি।কান শহরে তারকাদের আগমন শুরু হয়েছে তিন দিন আগে। গত ১১ মে উডি এল্যানের ‘ক্যাফে সোসাইটি’র মাধ্যমে এবারের আসরের পর্দা উঠলো। এরপর প্রতিদিন চলছে লড়াই। তবে এই লড়াই, মস্তিষ্কের লড়াই। এ লড়াই সৃষ্টির লড়াই।
বরাবরের মতো এবারো প্রতিযোগিতায় থাকা ২১টি ছবির মধ্যে উপমহাদেশের কোনো ছবির স্থান হয়নি। মার্ক্সে দ্যু ফিল্মে ভারত ও বাংলাদেশের ছবি রয়েছে। হোক না পুরোটাই বাণিজ্যিক লক্ষ্যে, কিন্তু ভালো ছবি বানানোর জন্য ছবির বাণিজ্যটাও দরকার।
এরইমধ্যে কানের লাল গালিচায় পা রেখেছেন জর্জ ক্লুনি, জুলিয়া রবার্টস, নাওমি ওয়াটস, ক্রিস্টেন স্টুয়ারটস, ব্ল্যাক লাইভিল, ঐশ্বরিয়া রায়সহ অনেকেই। ইত্তেফাকের পাঠকদের জন্য যখন আমার কানের অভিজ্ঞতা লিখছি ততোক্ষণে পেরিয়ে গেছে আমার স্ত্রী মালিহাকে শুভ জন্মদিন বলার সুযোগ।
সারাদিন কানে ঘুরাঘুরি, সন্ধ্যায় তৌকীর আহমেদ ও বিপাশা হায়াতকে নিয়ে রেড কার্পেট ডিঙিয়ে ‘মা মুত’-এর প্রিমিয়ার শো দেখে এসে হয়তো এই ক্ষণটির অপেক্ষা করছিল সে। দেখা হলো, হলো শুভেচ্ছা বিনিময়। বাংলাদেশের মেধাবী এই নির্মাতা তৌকীর আহমেদের সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় দীর্ঘদিনের। সেই সূত্রে এবারের উত্সবে হাজির হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইতেই নিজের ছবি নিয়ে উচ্ছ্বাস আর কৌতুহল প্রকাশ করলেন তিনি। এটা খুবই স্বাভাবিক। এছাড়া ‘অজ্ঞাতনামা’র জন্য দারুণ এক প্লট বের করেছেন নির্মাতা তৌকীর। আমি ব্যক্তিগতভাবেও তার নির্মাণশৈলী পছন্দ করি। এছাড়া বিদেশি ফটোগ্রাফাররা যখন রেড কার্পেটে আমাদের নির্মাতা তৌকীরের ছবি তোলার জন্য উন্মুখ বা রেড কার্পেটের বাইরে আমাদের সুপারস্টার বিপাশা হায়াতের আলাদা ফটোশুটের অনুরোধ এসব বিষয়গুলো যেন নিজেকে আরো খানিকটা গর্বিত করে তুলছিল একজন বাংলাদেশি নির্মাতা হিসেবে। এবার কানে এসে উত্সবের প্রধান ভবন পালে দ্য ফেস্টিভালের লনে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম-এর ছবি ‘অজ্ঞাতনামা’র বিশাল পোস্টার দেখে আপ্লুত হয়েছি, যেখানে লেখা রয়েছে ‘A film from Bangladesh’। ছবিটির প্রিমিয়ার শো হবে ১৭ মে প্যালেস আই-তে। এরইমধ্যে কান থেকে আমন্ত্রিত হয়েছেন প্রযোজক ফরিদুর রেজা সাগর ও ইবনে হাসান খান।
কান উত্সবে সাধারণত কয়েকটি বিভাগে প্রদর্শিত হয়। অফিশিয়াল সিলেকশন্স (কম্পিটিশন্স, আউট অব কম্পিটিশন্স, উঁন সারটেন রিগারডস), কান ক্লাসিক (পুরোনো ছবি), সিনে ফাউন্ডেশন (ছাত্রদের জন্য), শর্টফিল্ম কর্ণার, মার্ক্সে দ্যু ফিল্ম (বাণিজ্যিক প্রদর্শনী),
এর বাইরে ফরাসি ডিরেক্টরস গিল্ডদের (ডিরেক্টরস ফোরটনাইট), ও ক্রিটিকস উইক চলে সমান্তরালভাবে। ডিরেক্টরস ফোরটনাইটে তারেক মাসুদ (মাটির ময়না) পুরস্কার জিতে এনেছিলেন, যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্জিত আমাদের সবচেয়ে বড় ও একমাত্র প্রাপ্তি। এবার জুরিদের প্রধান হয়েছেন ম্যাড ম্যাক্স-এর পরিচালক ডেভিড মিলার, তবে তার বিচারের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২২ মে পর্যন্ত। তবে সারাদিনে রোদজ্বলা শহরে শিল্পপ্রেমী মানুষরা আমাদের মতো পর্যটকদের খুব ভালোভাবে রিসিভ করেন। তারা দেখলেই আমাদের সাথে সিনেমার গল্প জুড়ে দেন। বিষয়টি বেশ ভালো লাগে। পুরো শহর যেন জানে সিনেমাপাগল একদল মানুষ এখন কানে। তাদের নিজের ডায়েরিতে লিখে চলছেন সেলুলয়েডের নিজস্ব নথি।
বাংলাদেশ সময়: ০:৫২:৪৭ ৫৩১ বার পঠিত