বঙ্গ-নিউজঃ গাইবান্ধায় রাস্তার পাশের গাছ ও বাঁশের সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণভাবে টানানো প্রায় দুইশ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক তার প্রাণহানীর কারণ ঘটালেও সংস্কারের উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।
সদর থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, এসব তার প্রায়ই ছিঁড়ে পড়ে বিপদ ঘটাচ্ছে। গত ১৫ নভেম্বর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত আট জনের।
এসব লাইন ‘আগেই টানানো হয়েছে’ জানিয়ে দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করেছেন গাইবান্ধা বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ।
বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের স্থানীয় এক কর্মকর্তা জানান, গাইবান্ধায় এ বিভাগের অধীনে ৮৯৪ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চলন লাইন রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২০০ কিলোমিটার খোলা লাইন গাছ বা বাঁশে ঝুলছে।
এ ধরনের লাইনের একটি বড় অংশ রয়েছে সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দাসপাড়া, ধনকুটি, কুটিপাড়া, কুপতলা ইউনিয়নের বুড়ির খামার, বোয়ালি ইউনিয়নের খেয়াঘাট, কয়ারপাড়া, পুলবন্দি, ত্রিমোহনী, রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের বালুয়া, জগতরায় গোপালপুর, পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর, কুমেতপুর, সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া, ফুলছড়ি উপজেলার মদনেরপাড়া, ভাষারপাড়া, বালাসি গ্রামে।
বৃহস্পতিবার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোথাও হাট-বাজার, কোথাও বসতবাড়ির উপর দিয়ে লাইন টানা হয়েছে। নিরাপদ খুঁটি বা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উপর দিয়ে তার নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক স্বপন মিয়া জানান, গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কের লক্ষ্মীপুর বাজারের কাছে দাসপাড়ায় তাজা গাছ ও বাঁশ বাগান ঘেঁষে লাইন টানানো হয়েছে।
“এভাবে লাইন টানানোয় শত শত মানুষ আর যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।”
একই গ্রামের কৃষক লাল মিয়া বলেন, সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে তার থাকায় গবাদি পশু বেঁধে রাখাও বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।
পলাশবাড়ী উপজেলার কুমেতপুর গ্রামের চাকরিজীবী মুকুল মিয়ার অভিযোগ, ‘ঘুষ নিয়ে’ যত্রতত্র এভাবে সংযোগ দিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
গাইবান্ধা শহরের ব্রিজ রোডের বাসিন্দা প্রকৌশলী রমজান আলী বলেন, “এভাবে তার নেওয়ায় গাছে বিদ্যুৎ সঞ্চলিত হয়ে অপচয় বাড়ছে। তাছাড়া শর্ট সার্কিট হয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ ঘটাচ্ছে।”
গাইবান্ধা সদর থানার তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ নভেম্বর সদরের কুপতলা গ্রামের তহমিনা আক্তার (২৫) ও রায়হান কবির (১৪), ৪ জানুয়ারি সাদুল্লাপুরের নিজপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলাম (৪০), ১১ জানুয়ারি ফুলছড়ির পূর্বছালুয়া গ্রামের ট্রাকচালক রতন মিয়া (৩৫), ২০ মার্চ সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর গ্রামের আব্দুল্যাহ মিয়া (৩৬), ৮ এপ্রিল সদরের ফলিয়া গ্রামের রিফাত মিয়া (১৩), ১১ মে পলাশবাড়ীর শাহপুর গ্রামের সাজু মিয়া (৫০) ও ১২ মে সাদুল্লাপুরের জামুডাঙ্গা (ছড়ারপাড়) গ্রামের মিজানুর রহমান (২৮) এসব তারের কারণে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে নিহত হয়েছেন বলে মামলা হয়েছে।
গাইবান্ধা বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, প্রায় ৪২ হাজার ২৩৬ জন বাণিজ্যিক, আবাসিক ও অনাবাসিক গ্রাহক রয়েছে এই বিভাগে, যাদের কাছ থেকে মাসে প্রায় আড়াই কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে।
“সরকার সারাদেশে বিদ্যুতায়নের কথা বলছে। এজন্য প্রতিদিনই নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু লেখালেখি করেও লাইন সংস্কার করা হচ্ছে না।”
নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ দাবি করেন, তিনি দায়িত্ব পালনকালে কোনো খোলা তারে লাইন টানা হয়নি। এগুলো দীর্ঘদিন আগের তার।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “শহরের বাইরে লাইন সংস্কারের কোনো কর্মসূচি এখন নেই। তবে এ বিষয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”
বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৩:৪৩ ৩৯০ বার পঠিত