বঙ্গ-নিউজঃবিএনপির পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে দীর্ঘসূত্রতায় অপেক্ষা বাড়ছে পদপ্রত্যাশী ত্যাগী নেতাদের। কী পদ পাবেন, আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে কী, নাকি হতাশা মিলবে- এমন নানা টেনশনে কাটছে তাদের প্রতিটি প্রহর। নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার সেই টেনশনের কথা তুলে ধরে বলছিলেন, ‘কেন্দ্র মূল্যায়ন করবে এই আশায় বুক বেঁধে আছি। কবে কমিটি হবে জানি না, কিন্তু রাজনীতি করতে চাই বলে খুব টেনশনে আছি।’জানা গেছে, দলের বড় নেতাদের এই টেনশন আরো বড়। স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান কিংবা গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পদ যাদের লক্ষ্য, তারা কমিটিকেন্দ্রিক ভাবনায় বিভোর। অন্য দিকে কমিটি গঠনের মাঝপথে পুরো প্রক্রিয়া ভিন্ন দিকে মোড় নেয়ায় দলে নিষ্ক্রিয় হিসেবে যারা নেতাকর্মীদের কাছে বিবেচিত, তাদের এত দিনের লবিং-তদবির বিফলে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কমিটি গঠনের স্বাভাবিক গতিতে ছেদ পড়ায় দলটির তৃণমূলেও কিছুটা হতাশার ছাপ ফুটে উঠেছে। দ্রুত কমিটি গঠনের কাজ শেষ করে রাজনৈতিক কর্মসূচির দিকে মনোযোগ দেয়ার দাবি এখন তাদের।
কাউন্সিলের পর তিন দফায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদে নেতা মনোনয়ন দেয়ার পর কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে বিএনপির কমিটি গঠনপ্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে গেছে। জানা গেছে, ঘোষিত পদগুলোতে জায়গা পাওয়া দু-একটি নাম নিয়ে দলের ভেতরে তীব্র আপত্তি তোলা হয়েছে। কিভাবে সেই পরিস্থিতি সামলে সমাধানে পৌঁছা যায় তা নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা বিশাল কলেবরের কমিটি নিয়েও তাই শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ, যাতে করে সঠিকভাবে ত্যাগী ও যোগ্যদের মূল্যায়ন করা যায়।
দলের মধ্য সারির এক নেতা বলেছেন, ত্যাগী ও যোগ্যদের মূল্যায়ন করা না হলে হতাশা বাড়বে। ক্ষোভও ছড়িয়ে পড়তে পারে। জানা গেছে, কমিটি গঠনপ্রক্রিয়ায় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতামতকে আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
এ দিকে কমিটি গঠনের প্রবণতা অনুযায়ী সাবেক ছাত্রনেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রমোশন দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে দলের নীতিগত সিদ্ধান্তও রয়েছে। সিনিয়র বহু নেতা ও বুদ্ধিজীবী বিএনপি চেয়ারপারসনকে সাবেক ছাত্রনেতাদের অগ্রাধিকার দিয়ে কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। এ কারণে নির্বাহী কমিটিতে পদধারী নেতাদের প্রমোশন হচ্ছে, এটা অনেকটাই নিশ্চিত। আর দীর্ঘ দিন ধরে পদবঞ্চিত সাবেক ছাত্রনেতাদেরও ভাগ্য খুলছে।
সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে নতুন করে যারা পদ পেতে চান, তাদের উল্লেখযোগ্য হলেন : সানাউল হক নিরু, কামরুজ্জামান রতন, মোস্তফা খান সফরী, নুরুল ইসলাম নয়ন, দুলাল হোসেন, ওমর ফারুক শাফিন, আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, হাসান মামুন, রুহুল আমিন বাবলু, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, শামসুজ্জামান মেহেদী, হায়দার আলী লেলিন, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, সাঈদ ইকবাল মাহমুদ টুকু, আব্দুল মতিন, আসাদুজ্জামান পলাশ, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, ইঞ্জিনিয়ার মানিক, রফিক আহমেদ ডলার কাজী, রওনাকুল ইসলাম টিপু, রুহুল আমিন আকিল ও মাহবুবুল হাসান পিংকু ভূঁইয়া। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পদবঞ্চিত ছাত্রনেতারাও পদ পেতে মরিয়া। লবিং, তদবির চালাচ্ছেন পুরোদমে।
যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঝুলে আছে : বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দুই সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে বিএনপির হাইকমান্ডের নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তা ঝুলে আছে। বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আগে না পরে এই দু’টি সংগঠনের কমিটি হবে, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। তবে মূল দলের কমিটি ঘোষণার আগে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ‘সুপার ফাইভ’ ঘোষণা করতে হাইকমান্ডকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যাতে করে এই দুটো সংগঠনে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের কেউ বাদ পড়লে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে সম্মানজনক জায়গা করে দেয়া যায়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য ছাত্রদলের সাবেক নেতাদেরই প্রথম পছন্দ বিএনপির। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে- সাবেক ছাত্রদল সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র ছাত্রনেতাদের দিয়ে যদি এই দুটি সংগঠন সাজানো হয়, তাহলে তারা দক্ষতার সাথে ‘চেইন অব কমান্ড’ অক্ষুণ্ন রেখে দল চালাতে পারবে। তবে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান নেতাদের একটি অংশ চাচ্ছেন, তাদের মধ্য থেকেই যেন নতুন নেতৃত্ব বেছে নেয়া হয়।
জানা গেছে, যুবদলের সভাপতি হিসেবে দু-তিনটি নাম আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও বর্তমান সেক্রেটারি সাইফুল আলম নিরব। সেক্রেটারী হিসেবে আলোচনায় আছেন যুবদলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। নেওয়াজকে সেক্রেটারি করার জন্য যুবদলের বেশ কিছু নেতা দলের মহাসচিবসহ বিভিন্ন নেতার কাছে ইতোমধ্যে দাবি তুলে ধরেছেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রশীদ হাবিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি হাসান মামুন এবং যুবদল উত্তরের সভাপতি মামুন হাসান খসড়া তালিকায় রয়েছেন।
বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ম মোজাম্মেল হককে যুবদলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা না হলে নির্বাহী কমিটিতে জায়গা করে দেয়া হবে।
অন্য দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা শফিউল বারী বাবু নতুন কমিটিতে সভাপতি হওয়ার আলোচনায় রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমীরুল ইসলাম আলীম ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল। যুবদল কিংবা স্বেচ্ছাসেবক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য আলোচনায় আছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রশীদ হাবিবও। স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহসভাপতি পদে আলোচনায় আছেন বর্তমান সহসভাপতি আসাদুজ্জামান নেসার, সরোয়ার হোসেন, সাইফুল ইসলাম পটু ও আনু মো: শামীম আজাদ। স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সিনিয়র সহসভাপতি মুনির হোসেনকে বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে নিয়ে যাওয়া হবে। আর সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ইয়াসিন আলী আলোচনায় রয়েছেন।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, যুবদল কিংবা স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটিতে বর্তমান কমিটির ‘সক্রিয়’ নেতাদের কাউকে কাউকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ও উপকমিটিতে স্থান দেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ৭:১৮:০৮ ৫৪০ বার পঠিত