আন্দোলনে টানা ১৬ দিন অচলের পর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণা দেয়।
ছাত্রদের সন্ধ্যা ৬টা ও ছাত্রীদের বুধবার সকাল ৯টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার প্রকৌশলী আহসান হাবীব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সাড়ে তিন ঘণ্টা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। দুপুরে পুলিশ গিয়ে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় আন্দোলনকারীদের।
এ সময় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাস। এরপর পরিস্থিতি সামলাতে প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে পুলিশ ২৭ জন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে। এছাড়া পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী পরিচালক হায়াতুজ্জামান বলেন, গ্রীষ্মকালীন ছুটি এগিয়ে এনে ২৭ এপ্রিল থেকে ১১ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। ছেলেদের মঙ্গলবার বিকেল ৬টার মধ্যে ও মেয়েদেরকে বুধ সকাল ৯টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ ২৭ জন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে বলে প্রাথমিকভাবে শুনেছি।
মঙ্গলবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করে। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপাচার্য প্রফেসর আবদুস সাত্তারকে অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীরা।
দুপুরে পুলিশ ক্যাম্পাসে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করেছে। এতে ২০জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এ সময় ১৮/২০জনকে আটক করেছে বলে আন্দোলনকারীদের দাবি করেছে।
কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন জানান, সকাল থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত উপাচার্য প্রফেসর আবদুস সাত্তার তার কক্ষে অবরুদ্ধ ছিলেন। খবর গেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়ে উপাচার্যকে মুক্ত করে।
তিনি বলেন, উপাচার্য প্রফেসর আবদুস সাত্তারকে অবরুদ্ধ করার ঘটনায় ২৭ জন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা দিলে আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে মূল সড়কে অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রীকে মারপিট করে কর্মচারী বদিউজ্জামান বাদলের ভাই শরীফ। এ বিষয়টি জানালেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এক পর্যায়ে কর্মচারী বাদল তার বহিরাগত বন্ধুদের সঙ্গে ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ হয়।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত প্রতিবেদনে কর্মচারী বদিউজ্জামান বাদল ও শিক্ষার্থী নাসির উদ্দিন বাদলকে স্থায়ী বহিস্কার এবং আরও ৪ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির সুপারিশ করলে ১০ এপ্রিল ক্যাম্পাসে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে।
শিক্ষার্থীরা বাদলের স্থায়ী বহিস্কার ও পাঁচ শিক্ষার্থীর বহিস্কার প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নেমে পড়ে ছাত্রছাত্রীরা। ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা ১৬দিন ধরে আন্দোলন করে আসছে।
অপরদিকে কর্মকর্তা কর্মচারীরা বদিউজ্জামান বাদলের আজীবন বহিস্কার প্রত্যাহার ও পাঁচ শিক্ষার্থীর শাস্তির দাবিতে পাল্টা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে অচল হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস।
বাংলাদেশ সময়: ৫:৪৬:৩৮ ৩০৮ বার পঠিত