স্থানীয় শিল্প সংরক্ষণে আগামী বাজেটে এক গুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সম্পূর্ণ তৈরি পণ্য ও বিলাসী পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক হার আরোপসহ বিনা শর্তে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ, মূলধনী যন্ত্রপাতি, মৌলিক কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানিতে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক শিল্পায়ন, স্থানীয় শিল্পের বৈষম্যহীন প্রতিরক্ষণ নীতিমালা প্রবর্তন এবং ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য দেশে উৎপাদিত পণ্য ও আমদানি করা তৈরি পণ্যের মধ্যে মোট কর আপাতনের পার্থক্য ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।এফবিসিসিআই স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষায় বিভিন্ন আমদানি পণ্যে বিদ্যমান শূন্য শুল্কস্তর উঠিয়ে দিয়ে উচ্চ শুল্ক আরোপের দাবি জানিয়েছে। প্রয়োজনে শূন্য শুল্ক হারের পরিবর্তে ৩ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ সংরক্ষণমূলক শুল্ক (আরডি), ৫ শতাংশ অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট (এটিভি), ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়করসহ (এআইটি) প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি সাফটা চুক্তি সংশোধন করে ভারতের মতো কিছু কিছু ভারতীয় পণ্যে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সাফটা চুক্তির আলোকে সার্কভুক্ত দেশ থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এফবিসিসিআইয়ের সব প্রস্তাবই গুরুত্বের সঙ্গে যাছাই-বাছাই করা হচ্ছে। ২৮ এপ্রিল এফবিসিসিআইয়ের পরামর্শক কমিটির সভায় আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করা হবে। অর্থমন্ত্রী এ বৈঠকে প্রধান অতিথি থাকবেন। জানা গেছে, এফবিসিসিআইয়ের বাজেট প্রস্তাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তা না হলে অতিরিক্ত করভারে শিল্প বাণিজ্য খাতে বিনিয়োগ ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। করের আওতা বৃদ্ধি এবং কর হার কমিয়ে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
শুল্ক সংক্রান্ত প্রস্তাবে শুল্ক কাঠামো পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিনা শর্তে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও মৌলিক কাঁচামাল আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। বর্তমানে শুল্ক ১ শতাংশ থাকলেও ক্ষেত্রবিশেষে এর সঙ্গে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ও অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট (এটিভি) দিতে হয়। এছাড়া মধ্যবর্তী কাঁচামাল বা উপকরণ আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশের স্থলে ৩ শতাংশ রাখা এবং মধ্যবর্তী কাঁচামাল, অত্যাবশ্যকীয় ও অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ছাড়া ১০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
প্রস্তাবে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় সম্পূর্ণ তৈরি পণ্য ও বিলাসী পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে রেগুলেটরি ডিউটি, এটিভি, এআইটি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া শুল্ক মূল্য নির্ধারণে অনিয়ম ও জটিলতা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য মূল্যের ক্রমাগত হ্রাস-বৃদ্ধিজনিত জটিলতা নিরসনে মোটরযান, জ্বালানি তেল, লৌহ শিল্প খাতসহ অন্যান্য নির্ধারিত খাতে স্পেসিফিক ডিউটি আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। পণ্য আমদানিকালে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) পরোক্ষ করে রূপান্তরিত হয়ে উদ্যোক্তাদের চলতি মূলধনে বাড়তি চাপ হিসেবে আরোপিত হয় বলে মনে করে এফবিসিসিআই। এর ফলে পণ্য মূল্য ও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায় যা ভোক্তা সাধারণ, সার্বিক শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থী। এ কারণে রফতানির ক্ষেত্রে এবং আমদানি পর্যায়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি, মৌলিক কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামাল ও উপকরণের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আন্ডার ইনভয়েস এবং মিস ডিক্লারেশনের মাধ্যমে পণ্য আমদানি বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নিয়মিতভাবে মূল্যের খাতভিত্তিক ডাটা আহরণ এবং সব বন্দরে স্ক্যানার ও স্বয়ংক্রিয় পরিমাপক স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সব শুল্ক ভবন, স্থলবন্দর এবং স্থল শুল্ক স্টেশনে আন্ডার ইনভয়েস এবং মিস ডিক্লারেশন নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে এনবিআর এবং এফবিসিসিআইয়ের মধ্যে অংশীদারিত্বমূলক কার্যক্রম গ্রহণে কমিটি গঠন এবং কমিটির সুপারিশের আলোকে কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০:৪১:১৭ ৩৪১ বার পঠিত