বিনিয়োগ উন্নয়নে দেশে স্থিতিশীলতা দরকার। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। সহিংসতা দমনের মধ্যদিয়ে সরকার দেশে রাজনৈতিক একটা স্থিতিশীলতা আনতে পেরেছে। কিন্তু এ স্থিতিশীলতা বিনিয়োগের অনিশ্চয়তা দূর করতে পারেনি। কারণ আগামী নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান ও সে নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ এবং গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার বিষয়টি এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। বিনিয়োগ উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকতা এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পালাবদলও একটি বড় ফ্যাক্টর।গতকাল শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) উদ্যোগে আয়োজিত উন্নয়ন সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন।
বিআইডিএসএর মহাপরিচালক ড. কেএস মুরশীদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মুখ্য আলোচকের বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই এলাহি চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক সৈয়দ সাদ আন্দালিব প্রমুখ। এ ছাড়া উš§ুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা এতে অংশ নেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, দেশে জিডিপির ২৮ শতাংশ বিনিয়োগ হচ্ছে। এ পরিমাণ বিনিয়োগ মোটেও কম নয়। এর থেকে কম বিনিয়োগ নিয়েও ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া আমাদের চেয়ে ভালো করছে। উন্নয়ন অর্থনীতির একটি দেশে বৈষম্য থাকবে এটিই স্বাভাবিক। তবে সরকার বেশি আয়ের লোকের ওপর করারোপের মাধ্যমে সে বৈষম্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের ব্যয়ভার কমাতে অত্যাবশ্যকীয় নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক ও করারোপ হ্রাসেরও পরিকল্পনা আছে সরকারের। তবে এগিয়ে যাওয়ার সময় এখন বাংলাদেশের। জনসংখ্যার বড় একটি অংশ প্রায় সাড়ে ৫ কোটি লোক তরুণ প্রজšে§র। এ প্রজš§ জনগণ উন্নয়নের পথে হাঁটছে। তারা আরও উন্নয়নের দিকে যেতে চায়। কারণ তরুণ প্রজšে§র সংখ্যাগরিষ্ঠতার হার ২০৩৮ সাল পর্যন্ত থাকবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আগে ১ শতাংশ মানুষ প্রযুক্তিতে দ ছিল, এখন তা ৭ শতাংশ অতিক্রম করেছে। আমাদের ল্য এই হার উন্নয়নের মাধ্যমে ২০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া।
মুস্তফা কামাল দাবি করেন, অনেকেই উন্নয়ন অংশীদার আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে প্রশ্ন। তিনি বলেন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কম। আমি বলি দেখুন, দেশে ুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) খাতে নীরব বিপ্লব ঘটে চলেছে। এখানে বিপুলসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। তারা নিজেরাই আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করতে পারছে। বাড়ছে শিার হার। রপ্তানি, রিজার্ভ ও রেমিট্যান্সও বাড়ছে। তাই বিশ্বব্যাংক, এডিবি কিংবা আইএমএফ কে কি বলল, সেটিতে কান না দিয়ে আপনারা (সাধারণ মানুষ) আমাকে (পরিকল্পনামন্ত্রী) বিশ্বাস করুন। প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখুন। অপো করুণ। দেখবেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হবেই।
ড. তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী বলেন, সঠিক নেতৃত্ব ছাড়া কোনো দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয় না। আবার নেতৃত্বদানকারীর সাহস, উদ্ভাবনী মতা, সৃষ্টিশীলতাও থাকতে হয়। তিনি বলেন, সৌভাগ্য আমাদের সে দূরদর্শী নেতৃত্ব এখন সরকার পরিচালনায় রয়েছে। জ্বালানি উপদেষ্টা দাবি করেন, দুঃখ হয় সরকারের অনেক অর্জনকেও বিভিন্ন মহল থেকে খাটো করে দেখা হয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হয়। দুর্নীতি ও সুশাসনকে ইস্যু খোঁজা হয়। অথচ দেখুন যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ ট্রিলিয়ন ডলারের দুর্নীতি হয়। এর জন্য কেউ জেলে যায় না। অথচ ওয়েস্টার্নদের অনেকে আমাদের উপদেশ দেয়। আমাদের সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
ড. তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী বলেন, সরকার যেমন উন্নয়নে বিশ্বাসী। তেমনি সুশাসন প্রতিষ্ঠায়ও সর্বোচ্চ নজর দিচ্ছে। ইতোমধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পে অনেক বাড়তি ব্যয় কমে এসেছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের কাউকে ছাড় না দিয়ে শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সহিংসতা ঠেকালেই বিনিয়োগ বাড়ে না। বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য আগে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করতে হবে। তিনি দাবি করেন, আগামী নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান ও সে নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ ও গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার বিষয়টি এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। বিনিয়োগ উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকতা এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পালাবদলও একটি বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করেন তিনি।
ড. জিল্লুর রহমান আরও বলেন, দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্রমশ বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উন্নয়নধর্মী চিন্তা, ব্যক্তি ও পারিবারিক স্বচ্ছতা বাড়ানোর উচ্চাশা থেকে। মানুষ এখন ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে না। রাজনৈতিক তদবিরের জন্যও অপো করে না। নিজেরাই নিজেদের উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কথা হলো সাধারণ মানুষ এই উন্নয়নের স্রোতে সামাল হতে প্রস্তুত। কিন্তু সেখানে সরকার কতটা প্রস্তুত সেটি এখন প্রশ্নের মুখে।
তিনি দাবি করেন, দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। পদ্ম সেতু, মেট্রোরেলের মতো মেঘা প্রকল্পের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। হবেও। তবে উন্নয়নের যে মূল স্রোত শিা, তার কিন্তু গুণগত উন্নয়ন হয়নি। কারিগরি শিার হারও হতাশাব্যঞ্জক। সাধারণ শিা মানুষকে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। মাস্টার্স পাস করা একজন ছেলে যদি পিয়ন পদের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ধরনা দেয়, তাহলে দারিদ্র্যের সংজ্ঞা নতুন করে লিখতে হবে। এই দিয়ে মধ্যম আয়ের দেশের যাত্রার পথ কতটা প্রশস্ত হবে, সেটি ভেবে দেখার সময় এসেছে বলে তিনি মনে করেন।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুর?শিদ বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনা অসীম। এ উন্নয়নে দেশের সব মানুষের ভূমিকা রয়েছে। তবে সুশীল সমাজ একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছেÑ আমাদের দেশে এই সুশীল সমাজের বড় একটা অংশ রাজনৈতিক ও আঞ্চলিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত। এই দ্বিধাবিভক্তি আমাদের উন্নয়ন ল্যকে দীর্ঘসূত্রতায় ফেলে দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০:১৭:১৪ ৪২৬ বার পঠিত