কম্পিউটার থেকে অর্থ ভাগ-বাটোয়ারার চুক্তিপত্র উদ্ধার * ২০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৭০ ভাগ জাপানি সাসুকির, * ১৫ ভাগ মধ্যস্থতাকারী ও ১৫ ভাগ ছিল শালিকার * শ্রীলংকা ফেরত সিআইডির তদন্ত দলের হাতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় শ্রীলংকার কথিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘শালিকা ফাউন্ডেশন’-এর ৬ পরিচালকসহ সাতজনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। একই সঙ্গে শালিকা ফাউন্ডেশনের পরিচালকের জাপানি বন্ধু সাসুকি তাদাসির ব্যাংক হিসাব জব্দ করতেও প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। শ্রীলংকা ফেরত বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডির তদন্ত টিম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ পুলিশের তিন সদস্যের টিমের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে শ্রীলংকার আইনশৃংখলা বাহিনী শালিকা ফাউন্ডেশনের ৬ পরিচালক ও একজন মধ্যস্থতাকারীর ব্যাংক হিসাব জব্দের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর আগে ২২ মার্চ সংগঠনটির পরিচালকদের শুধু দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। যাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে তারা হলেন, শালিকা ফাউন্ডেশনের পরিচালক এইচজি শালিকা পেরেরা, মায়োরিন রানাসিংহে, প্রদীপ রোহিথা, শান্তা নালাকা ওয়ালাকুলুয়ারসি, সঞ্জিভা তিশা বান্দারা ও সিরানি ধাম্মিকা ফেরানান্দো। এছাড়া, শালিকা পেরেরার সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী জয়দেবা’র ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়। এই জয়দেবার ব্যবহৃত ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকে চুরির টাকা ভাগ-বাটোয়ারার একটি চুক্তিপত্র জব্দ করেছে শ্রীলংকা সফরে যাওয়া বাংলাদেশ পুলিশের তদন্ত দল। এ চুক্তিপত্রে কে কত টাকার ভাগ পাবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে লেখা আছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার জান্নাত আরা বুধবার যুগান্তরকে বলেন, শ্রীলংকা থেকে পাওয়া সব তথ্য যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা পাচারের খবর প্রথম প্রকাশিত হয় গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের পত্রিকা দ্য ইনকোয়ারারে। এই খবর প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয়। গঠন করা হয় একাধিক তদন্ত কমিটি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল গত ৬ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত শ্রীলংকা সফর করে। তারা ৯ দিন শ্রীলংকায় অবস্থান করে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান, ডকুমেন্ট সংগ্রহ এবং বৈঠক করেন।
শ্রীলংকা সফরকারী পুলিশের তদন্ত দল সূত্র জানায়, চুক্তিপত্রের তথ্য অনুযায়ী শালিকার জাপানি বন্ধু সাসুকির পাওয়ার কথা ছিল ৭০ ভাগ, শালিকা ফাউন্ডেশনের নামে ১৫ ভাগ এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবে জয়দেবার নেয়ার কথা ছিল ১৫ ভাগ অর্থ। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে চুরি হওয়া ১০১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার যায় শ্রীলংকার বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শালিকা ফাউন্ডেশনের নামে। লোপাটের ৮১ মিলিয়ন পাঠানো হয় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) মাকাতি সিটির জুপিটার শাখার চার অ্যাকাউন্টে। কিন্তু হ্যাকাররা সংগঠনটির নামের বানানে ভুল করায় শালিকা ফাউন্ডেশনের নামে যাওয়া অর্থ স্থানান্তর আটকে দেয়।
সফরকারী তদন্ত দলের সূত্র আরও জানায়, শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের অনুরোধে চুরির তদন্ত করেছে পুলিশ। এ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিতে গত ২৮ জানুয়ারি কলম্বোর বেসরকারি প্যান এশিয়া ব্যাংকে শালিকা ফাউন্ডেশনের নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এই হিসাব খোলার ৬ দিন পর ওই অ্যাকাউন্টে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জমা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল অর্থ চুরির ঘটনা গত ৪ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত হয়। অর্থ লোপাট নিয়ে ম্যানিলাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ইনকোয়ারার’ প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ও শ্রীলংকা পাচার করা অর্থ উদ্ধারে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে।
জানা গেছে, ঢাকার আইনশৃংখলা বাহিনী শালিকার বন্ধুর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে জাপানে চিঠি পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে ইন্টারপোলের সঙ্গেও তথ্য বিনিময় করেছে সিআইডি। জাপানি ব্যক্তির সঙ্গে শ্রীলংকার মধ্যস্থতাকারী জয়দেবার একাধিক তথ্য বিনিময় হয়েছে মেইল বার্তায় এ সংক্রান্ত তথ্য উদ্ধার করেছে সফরকারী তদন্ত দল। এছাড়া, শ্রীলংকার শালিকা ফাউন্ডেশনের সব পরিচালক, মধ্যস্থতাকারীদের আরও কঠোর নজরদারির আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের তদন্ত দল। তারা যাতে কোনোভাবে দেশত্যাগ করতে না পারে সে বিষয়ে জোর নজরদারি রাখার দাবি জানানো হয়েছে তদন্ত দলের পক্ষ থেকে। মার্চ মাসে পরিচালকদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলেও ঢাকার টিম যাওয়ার পর এদের সবার পাসপোর্ট জব্দ করেছে সে দেশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৯:৪২ ৪২৭ বার পঠিত