প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারের তীব্র সমালোচনা করেছে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে)। বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এই সমালোচনার কথা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে অবিলম্বে শফিক রেহমানের মুক্তি দাবি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর নিপীড়নের সমাপ্তি দাবি করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ৮১ বছর বয়সী শফিক রেহমানকে শনিবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয় তার বাসভবন থেকে। এ সময় কর্তব্যরত পুলিশ অফিসাররা ছিলেন সাদা পোশাকে। তারা বৈশাখী টিভির সাংবাদিক পরিচয়ে শফিক রেহমানের বাসভবনে প্রবেশ করে তাকে গ্রেপ্তার করেন। এরপর তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার প্রচেষ্টায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছে। শফিক রেহমান জামিনের আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর করা হয়। বিবৃতিতে শফিক রেহমানকে বাংলাদেশের একজন প্রবীণ সাংবাদিক ও সম্পাদক উল্লেখ করে বলা হয়, তিনি বর্তমানে ‘মৌচাকে ঢিল’ নামে একটি সাপ্তাহিক সম্পাদনা করেন এবং বাংলাভিশন টিভিতে ‘লাল গোলাপ’ নামে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ও প্রযোজনা করে আসছেন। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবেও তাকে বিবেচনা করা হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শফিক রেহমান এর আগে যুক্তরাজ্যে বসবাস করতেন এবং বিবিসিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যও লিখতেন তিনি। ১৯৮৪ সালে শফিক রেহমান সাপ্তাহিক যায়যায়দিন চালু করেন। তৎকালীন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সমালোচনামূলক ভাষ্য ছাপার মাধ্যমে সাপ্তাহিকটি পরিচিত হয়ে ওঠে। পরে এরশাদ সাপ্তাহিকটি নিষিদ্ধও করেন। এরপর শফিক রেহমানকেও যেতে হয় নির্বাসনে। ১৯৯১ সালে এরশাদের পতনের পর সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পুনরায় ছাপা হতে শুরু করে। ২০০৬ সালে সাপ্তাহিকটি দৈনিকে রূপ নেয়। এতে তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জোরপূর্বক এর মালিকানা বিক্রি করতে হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। আইএফজের বিবৃতিতে বিবিসিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আটক করা বিরোধীদলপন্থি সম্পাদকের মধ্যে শফিক রেহমান তৃতীয়। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ৩৬টিরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে ছয়টি মামলা ছিল রাষ্ট্রদ্রোহিতার এবং অনেক মামলা ছিল মানহানির। ৩রা ফেব্রুয়ারি এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে মাহফুজ আনাম স্বীকার করেছিলেন, প্রায় এক দশক আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থার সরবরাহকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তার পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল, যেসব তথ্য পত্রিকাটি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি। একে নিজের সম্পাদকীয় বিবেচনার ভুল হিসেবেও স্বীকার করে নেন তিনি। এর পরপরই তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করা হয়। আইএফজের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রবীণ একজন সাংবাদিকের গ্রেপ্তারে আইএফজে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সরকারের সমালোচনাকারী সম্পাদকদের বিরুদ্ধে আইনি হয়রানির বর্তমান প্রবণতা বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পরিস্থিতিতে তীব্র উদ্বেগ তৈরি করেছে। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়ার সময়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর হামলা বন্ধ করার জন্য আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই।’
বাংলাদেশ সময়: ১৪:০৫:১৮ ৪৭৮ বার পঠিত