বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
মাক্রোসফট,অ্যাপলসহ যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি ডলার কর ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অক্সফামের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেট জগতের বড় নাম অ্যাপল, ওয়ালমার্ট, জেনারেল ইলেকট্রিক, মাইক্রোসফটসহ অন্তত ৫০টি প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি দিয়েছে।
অক্সফাম বলছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো ২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এক লাখ ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ‘ট্যাক্স হ্যাভেনে’ পাঠিয়েছে। ‘ট্যাক্স হ্যাভেন’ হচ্ছে সেসব দেশ বা এলাকা, যেখানে বিনা প্রশ্নে অর্থ রাখা যায়। অক্সফামের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যে পরিমাণ কর ফাঁকি দিয়েছে তা রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা স্পেনের অর্থনৈতিক উৎপাদনের চেয়ে বেশি। এ অর্থ এক হাজার ৬০৮টি অফশোরভিত্তিক সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানে অস্বচ্ছ ও গোপন নেটওয়ার্কে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি পানামা পেপারসে প্রকাশিত ট্যাক্স হ্যাভেনে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেট ৫০টি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিষয় নিয়ে অক্সফামের ‘ব্রোকেন অ্যাট দ্য টপ’ শীর্ষক বিশ্লেষণ তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অক্সফাম বলছে, প্রতিবেদনটিতে বৈশ্বিক কর ব্যবস্থার বিশাল নিয়মানুগ অপব্যবহারের বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল কর ফাঁকির দিক থেকে অক্সফামের তালিকার শীর্ষে রয়েছে। তিনটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৮১ বিলিয়ন ডলার ট্যাক্স হ্যাভেনে নিয়ে যায়। অ্যাপলের পরে আছে জেনারেল ইলেকট্রিক। ট্যাক্স হ্যাভেনে অবস্থিত ১১৮টি সাবসিডিয়ারিতে ১১৯ বিলিয়ন ডলার রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। তিন নম্বরে থাকা মাইক্রোসফট ১০৮ বিলিয়ন ডলার ট্যাক্স হ্যাভেনে নিয়ে গেছে। এ ছাড়াও আছে ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান পিফাইজার, গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ও এক্সন মবিল।
অক্সফাম তুলনা করে দেখিয়েছে, অফশোর কোম্পানিগুলোতে এক লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার রাখলেও ২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই ৫০টি প্রতিষ্ঠান এক লাখ কোটি ডলার করও দিয়েছে। তবে এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানগুলো ১১ লাখ কোটি ডলালেরও বেশি ঋণ, বেল আউট ও ঋণের জামিন পেয়েছে। সব মিলিয়ে ট্যাক্স হ্যাভেনে অর্থ রাখায় মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের মুনাফার তুলনায় কার্যকর কর হার কম দেখিয়েছে। তারা এ সুবিধা পেতে লবিস্টদের পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থও খরচ করে।
অক্সফামের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত লবিস্ট বা তদবিরকারীদের পেছনে এই ৫০টি প্রতিষ্ঠান ২৬০ কোটি ডলার খরচ করেছে। দেখা গেছে, লবিস্টদের পেছনে প্রতি এক মার্কিন ডলার খরচে প্রতিষ্ঠানগুলো ১৩০ ডলার কর অব্যাহতি পায় এবং চার হাজার ডলার করে ঋণ পায়।
অক্সফামের জ্যেষ্ঠ কর পরামর্শক রবি সিলভারম্যান বলেন, ‘আমাদের কাছে বৈশ্বিক কর ব্যবস্থার অপব্যবহারের সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে। ধনী ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলো কর ফাঁকি দেবে আর আমাদের কর দিয়ে যেতে হবে-এ অবস্থা চলতে পারে না। সারা বিশ্বের সরকারগুলোকে এই ট্যাক্স হ্যাভেন যুগের সমাপ্তি টানার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
অক্সফামের তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ব্রিটিশ দ্বীপ বারমুডা অর্থ রাখার জনপ্রিয় স্থান। ২০১২ সালে বারমুডা থেকে ৮০ বিলিয়ন ডলার মুনাফা দেখায় মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো যা জাপান, চীন, জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো বড় অর্থনীতির দেশ থেকে করা সম্মিলিত মুনাফার চেয়েও বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৫:৩৯ ৪৫৫ বার পঠিত