বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি, ভারতের সঙ্গে ওয়ানডে আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট-ক্রিকেটের তিন সংস্করণের আন্তর্জাতিক অভিষেককেই দুর্দান্ত সাফল্যে রাঙিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। পরশু আইপিএল অভিষেককেও করে রাখলেন স্মরণীয়। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে বেশ বড় ব্যবধানেই হেরেছে তাঁর দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। হারের মধ্যে হায়দরাবাদের সান্ত্বনার নুড়িপাথর ছিল মুস্তাফিজের দুর্দান্ত বোলিং।
বিরাট কোহলি-এবি ডি ভিলিয়ার্স যখন তুলাধোনা করেছেন ‘হায়দরাবাদি’ বোলারদের, তখন কাটারের মায়াবী বিভ্রম ছড়িয়ে লাগামটা টেনে ধরেছেন মুস্তাফিজ। কিন্তু বেঙ্গালুরুর রানের বান যেখানে ছুটেছে প্রবল বেগে, মুস্তাফিজ একা সেটি আর কতটা থামাতে পারেন! হায়দরাবাদের অন্য পাঁচ বোলার ওভারপ্রতি দিয়েছেন ১২.৩১ রান; মুস্তাফিজের ইকোনমি সেখানে ৬.৫০, ২ উইকেট নিয়েছেন টানা দুই বলে। কোহলি, ডি ভিলিয়ার্স, সরফরাজ খানের ঝোড়ো ইনিংসগুলো নিয়ে তাই যতটা না আলোচনা হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি বোধ হয় মুস্তাফিজের বোলিং।
হায়দরাবাদ অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের প্রশংসা তো তিনি পেয়েছেনই। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমও মেতেছে মুস্তাফিজ-বন্দনায়। তবে দলের অন্যতম সেরা অস্ত্রকে ওয়ার্নার ঠিকমতো ব্যবহার করতে পেরেছেন কি না সেই প্রশ্নও উঠেছে। ম্যাচ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও হল্যান্ডের হয়ে খেলা পেসার ডার্ক ন্যানেসের বিশ্লেষণ, ‘মুস্তাফিজের বোলিং দেখে বোঝা গেছে, তাকে তার দল ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেনি।’
আইপিএলে যে মুস্তাফিজ ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছেন তার প্রমাণ তো পরশু মিলেছে। মাঠের বাইরেও তাঁর সময়টা কাটছে বেশ, কাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে সেটি বললেন হায়দরাবাদের ম্যানেজার বিজয় কুমার, ‘এখানে সে খুবই ভালো আছে। ধীরে ধীরে মানিয়ে নিচ্ছে। খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।’
যেহেতু বাংলা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ভাষায় অভ্যস্ত নন, মুস্তাফিজ সে ক্ষেত্রে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন কীভাবে? বিজয় বললেন, মুস্তাফিজের ভাষাগত সমস্যার সমাধান হয়েছে একটু অন্যভাবে, ‘সে মানিয়ে নিচ্ছে। তাকে এক-দুই শব্দে সংক্ষেপে বলা হয়, যাতে সহজেই বুঝে নিতে পারে। আর ক্রিকেটের বিষয়গুলো তো বোঝেই। যেহেতু ইংরেজি ভালো বোঝে না, এ কারণে টিম মিটিংয়ে আলোচনায় ওভাবে অংশ নিতে পারে না। কিন্তু সহজ জিনিসগুলো বুঝতে পারে। সবার সঙ্গে ভালোভাবেই সে মিশতে পারছে।’
পরের পরিকল্পনা কী, কোথায় খেতে যাবেন-এমন অতিপ্রয়োজনীয় দু-একটি বিষয় ছাড়া ম্যানেজারের কাছে খুব একটা জানারও থাকে না মুস্তাফিজের। তবে ক্রিকেটের এই বোলিং বিস্ময় বেশ অনুভব করছেন, ইংরেজিটা তাঁকে রপ্ত করতে হবে। হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, ‘আইপিএলের পর আমি কাউন্টি (সাসেক্সে) খেলতে যাব। ইংরেজিটা শেখা তাই প্রয়োজন।’
কথায় চৌস্ত না হলেও মাঠে তিনি ঠিকই দুর্দান্ত। সেখানে কথা বলেন বল দিয়েই। সহজাত প্রতিভা আর অসাধারণ ক্রিকেটীয় বুদ্ধিমত্তায় ক্রিকেটের সব সংস্করণে নিয়মিত আলো ছড়াচ্ছেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই কাটার রূপ নিয়েছে শিল্পে। আর সেটি দেখার জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকেন হাজারো দর্শক। হায়দরাবাদের সতীর্থ আশিস নেহরা আগ থেকেই মুগ্ধ তাঁর বোলিংয়ে, ‘ওর স্লোয়ারগুলো ঈশ্বরপ্রদত্ত।’
ক্রমেই ব্যাটসম্যানদের খেলা হয়ে উঠেছে ক্রিকেট। সেখানে মুস্তাফিজ যোগ করেছেন ভিন্ন মাত্রা, ভিন্ন রোমাঞ্চ। এই বাঁহাতি পেসারের বোলিং দেখাটাই এখন দারুণ উপভোগ্য।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৭:০২ ৪২৫ বার পঠিত