বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ সিটি করপোরেশনের আদলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বিভক্ত কমিটি ঘোষণা করেছে দলটি। ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ এর পাশাপাশি দুই সিটির অন্তর্গত ঢাকা উত্তরের ২৬টি থানা ২৬টি ওয়ার্ড, ৯টি ইউনিয়ন ও ১০টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড এবং দক্ষিণের ২৪টি থানা ৫৭ ওয়ার্ড ও ৭টি ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত কমিটি নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মাঝে। ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, নব্যগঠিত কমিটিতে স্থান না পাওয়া নেতারাও।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক হওয়া নেতাদের অভিযোগ, নব্যগঠিত কমিটিতে অরাজনৈতিক ব্যক্তিতের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবসায়িরা দলীয় পদ অর্জন করেছেন। তাছাড়া এক-এগারোর প্রেক্ষাপটে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে যাদের পাওয়া যায়নি তারাই নতুন কমিটিতে স্থান পেয়েছে। বাদ পড়েছেন দলের ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতারা।
কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনে যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে এটা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা নির্বাচনের পদ্ধতি হতে পারে না। দুইজন সমন্বয়কের মাধ্যমে কমিটির নেতা নির্বাচনের সুপারিশ নিয়ে নেতা নির্বাচিত করা হয়েছে। ‘বহিরাগত’দের সুপারিশে গঠিত কমিটি দলের জন্য অনাকাঙ্খিত বলে মনে করেন কেউ কেউ।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কমিটি একপক্ষীয় হয়েছে। কোনো একটি বিশেষ গ্রুপকে প্রাধান্য দিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা তো দীর্ঘদিন দায়িত্বে ছিলাম। এখন ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে নব্য গঠিত কমিটি।
অপর এক নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদকপন্থী এক নেতা বলেন, একটি বিশেষ বলয়কে প্রাধান্য দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। যারা এক-এগারোর পর দলীয় প্রধানের বিরোধীতা করেছিল, তারাই সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, মেয়র হয়েছে এবং নগর আওয়ামী লীগের নেতা হয়েছে। আমরা কখনও দলের মধ্যে বলয় সৃষ্টি করিনি। আমাদের নগরের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদককে কোথাও রাখা হয়নি এবং উনাকে চাপে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ঢাকার দুই কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ৪ জনই পেশায় ব্যবসায়ী। তবে দুই কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজনীতিতে অধিক সক্রিয়। থানা কমিটির অনেক ক্ষেত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাই স্থান পেয়েছেন। থানা এবং ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ব্যবসায়ীরাই প্রাধান্য পেয়েছেন।
রাজধানীর রমনা থানা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক নেতা ফয়জুল মুনির চৌধুরী বলেন, নেতারা যাদের ভালো মনে করেছেন তাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমার থানার কমিটিটা পলিটিক্যাল কমিটি হয়নি। রমনা থানায় উনাকে সেক্রেটারি করার কারণটা আমি জানি না। সভাপতি যিনি হয়েছেন উনি কখনও রাজনীতির মাঠে ওইভাবে সক্রিয় ছিলেন না।
ক্যান্টনমেন্ট থানার সদ্য সাবেক সভাপতি শফি আহাম্মেদ বলেন, তৎকালীন থানা সম্মেলনে সভাপতি পদে কাউন্সিলররা আমাকে সমর্থন দিয়েছিল। পরে আমাকে সভাপতি করে সমন্বয়ক ফারুক খান-এর কাছে একটি কমিটি দেওয়া হয়েছিলো। যেখানে সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি কাজী রফিকুল ইসলাম সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি (কাজী রফিকুল ইসলাম) ওই সম্মেলনে সহ-সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু কি কারণে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে, আমি জানি না। আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আমার মনে হয় বর্তমান সভাপতির বাড়ি ফরিদপুর অঞ্চলে, ফারুক খানও ফরিদপুর অঞ্চলের লোক তাই তাকে ( রফিকুল) সভাপতি করা হয়েছে।
মতিঝিল থানার সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু বলেন, আমি ২৪ বছর ধরে ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগে দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের নেতা আজিজ ভাই মারা গেছেন, আমাদের কেউ দেখে নাই। কমিটির কোথাও আমাদের রাখা হলো না। এটা উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত ভাবে হয়েছে। থানা সম্মেলনে আমার নাম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলো। রাজ্জাক ভাই আমাকে কি কারণে বাদ দিলেন, সেটা তিনিই জানেন। আমি জানি না আমার কি অপরাধ? দলের জন্য কতকিছু করেছি, এক-এগারোর সময় নেত্রীর মুক্তি আন্দোলন করেছি। সিটি নির্বাচনের সময় দল থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দল দেয়নি। ভেবেছিলাম দলে রাখা হবে।
নব নির্বাচিত কমিটি ঢাকা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, আমি মনে করি আমাদের নেত্রীর নির্দেশে যে কমিটি গঠন হয়েছে সেটা অত্যন্ত ভালো কমিটি হয়েছে।
নব নির্বাচিত কমিটির ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত বলেন, নেত্রী আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি সবার সঙ্গে মিলেমিশে দায়িত্ব পালন করবো। যদি কোনো সমস্যা হয়, সেটা সবার সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১:২৩:১৮ ৩৪০ বার পঠিত