কাউন্সিলের ২০ দিন পর শনিবার বিএনপির সাতজন নতুন যুগ্ম-মহাসচিব ও আটজন সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। মনোনীত ১৫ জনের মধ্যে ১২ জনই এ দুই পদে এবারই প্রথম। পুরনোদের মধ্যে মধ্যে মহাসচিব পদে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ফজলুল হক মিলন ও আসাদুল হাবিব দুলুই শুধু সপদে বহাল রয়েছেন। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বিএনপির মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও কোষাধ্যক্ষের পর যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক পদে মনোনীতরা বাদে সদ্য সাবেক ওই দুই পদের বাকি নেতাদের (১০ জন) ভাগ্যে কী ঘটছে। তারা আরো বড় কোনো পদে কে কে যাবেন আর কেউ বাদ পড়ছেন কি না? ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সর্বশেষ বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ওই বছরের জানুয়ারিতে দলটির নির্বাহী কমিটিসহ অন্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে সাতজনকে যুগ্ম-মহাসচিব এবং ছয়জনকে (তখন ছয় বিভাগ ছিল) সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। বিএনপির ওই কমিটিতে যুগ্ম-মহাসচিব ছিলেন- আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কবির রিজভী। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন- ঢাকা বিভাগে ফজলুল হক মিলন, চট্টগ্রামে গোলাম আকবর খোন্দকার, খুলনায় মশিউর রহমান, রাজশাহীতে হারুনুর রশিদ, বরিশালে মজিবুর রহমান সরোয়ার এবং সিলেট বিভাগে এম. ইলিয়াস আলী। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় সাড়ে ছয় বছর পর গত ১৯ জানুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এর ২০ দিন পর শনিবার দলের যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হলো। নতুন যুগ্ম মহাসচিব পদে মনোনীতরা হলেন- ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, হারুনুর রশিদ ও শাহ লায়ন আসলাম চৌধুরী। নতুন সাংগঠনিক সম্পাদকেরা হলেন- ঢাকা বিভাগে ফজলুল হক মিলন, চট্টগ্রামে ডা. শাহাদাত হোসেন, খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু, রাজশাহীতে অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বরিশালে বিলকিস শিরিন, রংপুরে আসাদুল হাবিব দুলু, ময়মনসিংহে ইমরান সালেহ প্রিন্স ও ফরিদপুরে শামা ওবায়েদ। তবে সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে কারো নাম ঘোষণা করা হয়নি। বর্তমানে দায়িত্বরত নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ রয়েছেন। নতুন যুগ্ম-মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের ১৫ জনের ১২ জনই নতুন। এবারই তারা এই দুই পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেন। পূর্বের কমিটির ৬ নম্বর যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নতুন কমিটিতে ২ নম্বর যুগ্ম মহাসচিব হয়েছেন। খালেদা জিয়া-তারেক রহমান তথা জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় তাদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে সক্রিয় তিনি। এর পুরস্কারস্বরূপই হয়তো তার এই পদোন্নতি। অন্যদিকে, বিগত দুটি আন্দোলনে বিএনপির চরম দুর্দিনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ৭ নম্বর যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে নতুন কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে। তবে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের পদ থেকে পুরনো যারা বাদ পড়েছেন তারাও গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। আন্দোলন চলাকালে অনেকে চরম নিষ্ক্রিয় থেকে সংগঠনের দুর্বলতা প্রমাণে সহায়তা করলেও নতুন কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন তারাও। সূত্র মতে, সদ্য সাবেক যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, বরকত উল্লাহ বুলু ও মো. শাহজাহান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হচ্ছেন! তবে আমান ও বুলু বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদেও জায়গা পেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতে বিচারাধীন সদ্য সাবেক যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে নেয়া হতে পারে। দলের জন্য অপরিসীম ত্যাগ, অবর্ণনীয়-অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার এবং ঝুঁকি নিয়ে সংগঠনের দায়িত্ব পালনের পুরস্কার দেয়া হবে তাকে। আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ সালাহউদ্দিন আহমেদকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। এক পর্যায়ে ওই বছরের মে মাসে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে তার সন্ধান পাওয়া যায়। সদ্য সাবেক ছয়জন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে মজিবুর রহমান সরোয়ার ও হারুনুর রশিদ নতুন কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব হয়েছেন। মশিউর রহমান সম্প্রতি ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির পুনরায় সভাপতি হয়েছেন। বিএনপির গঠনতন্ত্রে ‘এক নেতার এক পদ’র বিধান সংযোজিত হওয়ায় তাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। গোলাম আকবর খোন্দকারকে নতুন কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান করা হতে পারে। তবে ফজলুল হক মিলন নতুন কমিটিতে স্বপদে বহাল আছেন। এদিকে, বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ‘নিখোঁজ’ ইলিয়াস আলী স্বপদে বহাল থাকছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘তারা (বিএনপির সদ্য সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক) বাদ পড়ছেন কি পড়ছেন না সে প্রশ্ন এখুনি আসছে কেন? সবেমাত্র (শনিবার) তো নাম ঘোষণা হয়েছে। এমনও তো হতে পারে, তাদের জন্য আরো বেটার কিছু অপেক্ষা করছে। তারা হয়তো আরো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকতে পারেন।’
বাংলাদেশ সময়: ১৩:২১:১২ ২৬৩ বার পঠিত