বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বিশ্বের একশ’টিরও বেশি সংবাদপত্রের যৌথ তদন্তে উঠে আসা পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে যেমন রয়েছে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও তাদের স্বজনদের নাম, তেমনি এসেছে ৫০০ ভারতীয়র নাম, যাতে রয়েছেন বলিউড কিংবদন্তি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, নায়িকা ঐশ্বরিয়া রাই, ইন্ডিয়া বুলসের প্রতিষ্ঠাতা সমির গেহলত, ডিএলএফ কর্মকর্তা কে পি সিংহ, সাবেক সলিসিটর জেনারেল হরিশ সালভে, কলকাতার ব্যবসায়ী শিশির বাজোরিয়ার মতো বিখ্যাতরাও। তাদের সবার বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দিতে বিদেশে বিভিন্ন সংস্থায় বিনিয়োগ করার অভিযোগ উঠেছে। পানামা পেপারসের দ্বিতীয় পর্বে এসেছে শিল্পপতি গৌতম ও করন থাপা, .রাজনীতিবিদ অনুরাগ কেজরিওয়াল, সাবেক ক্রিকেটার অশোক মালহোত্রা প্রমুখের নাম। তবে গতকাল মঙ্গলবার অমিতাভ বচ্চন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘কোথাও কোনো শিপিং কোম্পানির সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিশ্বাস এতে আমার নামের অপব্যবহার করা হয়েছে। পরিচালক থাকা তো দূরের কথা আমি এ ধরনের কোনো কোম্পানির নামও শুনিনি।’ এক বিবৃতিতে এ অভিনেতা বলেন, ‘আমি আমার সব কর পরিশোধ করেছি।’ অমিতাভ জানান, ভারতীয় আইন মেনেই তিনি বিদেশে টাকা পাঠিয়েছেন, তাও কর দেওয়ার পর। তিনি আরও জানান, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসও বলেনি, তিনি কোনো অন্যায় করেছেন। ভারতে ৫০০ ব্যক্তির কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তে সোমবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিভিন্ন আর্থিক ও গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দেন। খবর :বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ফোর্বস, ভয়েস অব আমেরিকা। অমিতাভের পুত্রবধূ ঐশ্বরিয়া রাইয়ের মিডিয়া উপদেষ্টার দাবি, তাদের নিয়ে পানামা পেপারসের এসব তথ্য ভুল ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী। সাবেক সলিসিটর জেনারেল হরিশ সালভে বলেছেন, তিনি কোনো আইন লঙ্ঘন করেননি। অন্যদিকে বিদেশে ব্যবসা থাকলেও কোনো কর ফাঁকি দেননি বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী তথা বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়া। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, ওই দিন সকালেই বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদি জেটলিকে সিবিডিটি, আরবিআই এবং এফআইইউকে (ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট) নিয়ে একটি গোষ্ঠী গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) কর্তৃক ফাঁস হওয়া ওই গোপন তালিকা সম্পর্কে তদন্ত করবে ভারতের কালো টাকা-সংক্রান্ত বিশেষ তদন্তকারী দলও। জেটলি জানিয়েছেন, বিশেষ গোষ্ঠী ওই আমানতগুলোর ওপর ধারাবাহিকভাবে নজরদারি চালাবে এবং যে আমানতগুলো অবৈধ হবে, সেগুলোর মালিকদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেটলি জানিয়েছেন, আগামী দিনে আরও অনেক নাম উঠে আসতে পারে। এর আগেও এ ধরনের তথ্য ফাঁস হয়েছিল। ২০১১-তে এইচএসবিসি অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের নাম প্রকাশ্যে এসেছিল। ৫৬৯ অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে চিহ্নিত করা গেছে। এর মধ্যে ৩৯০টি বেআইনি। ১৫৪টি ক্ষেত্রে মামলা করা হয়েছে। ২০১৩ সালে আইসিআইজে যে ৭০০ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করেছিল, তদন্তের ভিত্তিতে সে ক্ষেত্রে বেআইনি কারবারিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে ভারতের ৫০০ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছেন অমিতাভ বচ্চন ও তার পুত্রবধূ ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। ওই নথি অনুযায়ী, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস ও বাহামায় ১৯৯৩ সালে তৈরি চারটি সংস্থার পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন অমিতাভ। ওই সংস্থাগুলোর মূলধনের পরিমাণ ছিল ৫ থেকে ৫০ হাজার ডলারের মধ্যে। কিন্তু তারা কোটি কোটি ডলার দামের জাহাজ কেনাবেচা করেছেন। ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে ২০০৫ সালে নথিবদ্ধ সংস্থা অ্যামিক পার্টনার্সের পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন ঐশ্বরিয়া, তার বাবা, মা ও ভাই। পরে ঐশ্বরিয়ার অনুরোধে তাকে পরিচালকের বদলে শেয়ারহোল্ডার করা হয়। অর্থমন্ত্রী জানান, ওই কমিটিতে রিজার্ভ ব্যাংক, আয়কর দপ্তর, আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ও কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের কর্মকর্তারা থাকবেন। প্রতিটি নাম ধরে ধরে চুলচেরা বিচার করা হবে। প্রয়োজন হলে বিদেশি সরকারেরও সাহায্য নেওয়া হবে। কেউ আইন ভেঙে থাকলে তাকে রেয়াত দেওয়া হবে না। কালো টাকা উদ্ধারের আগেই একটি বিশেষ দল তৈরি হয়েছিল। তারাও বিষয়টির তদন্ত করবে। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার মতে, ‘এ ধরনের কমিটি গড়ে সরকার অনেক তৎপরতা দেখায়। আদপে এটি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার কৌশল।’
বাংলাদেশ সময়: ৩:২৬:১৬ ৩৯৫ বার পঠিত