বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ কোচিং করানোর ক্ষেত্রে জেল-জরিমানার বিধান রেখে শিক্ষা আইন-২০১৬ এর খসড়া প্রণয়ন করেছে সরকার। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বাণিজ্যে জড়িত অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া নোটবই-গাইড বই প্রকাশ ও পড়ানোর ক্ষেত্রেও একই ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে খসড়া আইনে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দিলে অর্থদণ্ড বা কারাদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে। এই আইনের খসড়ার ওপর মতামত চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তৃতীয়বারের মতো এটি মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত মতামত দেয়া যাবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালীন মানসিক বা শারীরিক শাস্তি দেয়া যাবে না। এটি লঙ্ঘন করলে তিনি অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা তিন মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রণয়নকৃত বই ব্যতীত অন্য কোনো বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে না। এই বিধান লংঘন করলে প্রকাশক ও প্রতিষ্ঠান প্রধান অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা ছয়মাসের কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া এসব অপরাধে জড়ালে এমপিও ( বেতন ভাতাদির সরকারি অংশ) স্থগিত, কর্তন বা বাতিলের কথাও বলা হয়েছে খসড়া আইনে।
শিক্ষানীতি-২০১০ এর আলোকে শিক্ষা আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। খসড়ায় শিক্ষার চারটি স্তর রাখা হয়েছে। এগুলো হল: প্রাক-প্রাথমিক (৪ বছর থেকে ৬ বছর), প্রাথমিক (প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম), মাধ্যমিক (নবম থেকে দ্বাদশ) এবং উচ্চশিক্ষা (দ্বাদশ শ্রেণি থেকে স্নাতক ও তদূর্ধ্ব) । এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকসহ প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক এবং এই শিক্ষা শিশুর অধিকার হিসেবে গণ্য হবে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে পাণ্ডুলিপির অনুমোদন নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বা প্রকাশক কেবল সহায়ক শিক্ষা উপকরণ বা সহায়ক পুস্তক বা ডিজিটাল শিখন-শেখানো সামগ্রী প্রকাশ করতে পারবেন। কোনো নোট গাইড প্রকাশ করতে পারবে না।
আর খসড়া আইনে নোট গাইডের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এনসিটিবি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদন ছাড়া যে পুস্তকসমূহে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুর আলোকে শুধু বিভিন্ন পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্নাবলীর উত্তর লিখা থাকে যা অধ্যয়ন করলে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রতিভা বাধাগ্রস্ত হয়, শিক্ষার্থীরা মূল পাঠ্যপুস্তক পাঠে উত্সাহ হারায়।
প্রাথমিক ও ইবতেদায়িতে সাধারণ ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল অনুমোদন ছাড়া চালালে তিন লাখ টাকা জরিমানা বা ৬ মাসের জেল বা উভয় দণ্ড ভোগ করতে হবে বলে বলা হয়েছে।
শিক্ষা আইনের খসড়া অনুসারে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে এক ব্যক্তি একাধিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবেন না। বর্তমানে এক ব্যক্তি চারটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারেন। আইনের প্রস্তাবনায় পরিচালনা কমিটির ব্যাপারে আলাদা বিধিমালা তৈরি করার কথা বলা হয়েছে।
বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য ফি যৌক্তিক হারে নির্ধারণের জন্য একটি ‘রেগুলেটরি কমিশন’গঠনের কথা বলা হয়েছে খসড়ায়।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের জানুয়ারিতে এ বিষয়ে প্রথম সভা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। ওই সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (আইন ও অডিট) এবং শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কয়েকজন সদস্যকে শিক্ষা আইনের খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়। এই কমিটি ২০১২ সালে শিক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করে। পরে নানা তথ্য সংযোজন বিয়োজন শেষে ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট জনমত যাচাইয়ের জন্য শিক্ষা আইনের খসড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
খসড়া আইনের বিষয়ে মতামত দিতে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। খসড়ায় অনিয়মের জন্য শিক্ষকদের শাস্তি ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক সংগঠনসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে আপত্তি ওঠে। এরপর ২০১৪ সালে আবারও আইন প্রণয়নে উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ২৮ আগস্ট প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন ২০১৪ এর খসড়া পর্যালোচনায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ বত্সরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদানের কথা বলা হয়। কিন্তু এভাবে কর্মশালা ও সভা করেই সময় ক্ষেপণ হয়।
দেড় বছর পর পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস বা এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রেখে ২০১৫ সালে ২০ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে শিক্ষা আইনের খসড়া প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। গণমাধ্যম ও নানা মহল থেকে সমালোচনা আসতে থাকায় এ বিষয়ে ফের সিদ্ধান্ত নিয়ে খসড়া প্রকাশ করা হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়। এর পরে আর প্রকাশ করা হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৪:৪৪ ৩৫১ বার পঠিত