বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ নির্বাচনে থাকা না-থাকা নিয়ে মতভেদ থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচনেও থাকতে চায় বিএনপি। চতুর্থ ধাপের প্রার্থী মনোনয়নের কাজও শুরু করেছে দলটি। কাল মঙ্গলবার থেকে চতুর্থ ধাপের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দেওয়া শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপির নির্বাচন সমন্বয়ের সঙ্গে যুক্ত একজন নেতা জানিয়েছেন।ছয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপ শেষ হয়েছে। তৃতীয় ধাপে ২৩ এপ্রিল ৬৮৫ ইউপির ভোট অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপে ৭১৩টি ইউপিতে ভোট হবে আগামী ৭ মে। এই ধাপের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত।
ইউপি নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপে অংশ নিয়েছে বিএনপি। তৃতীয় ধাপের জন্যও প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। অবশ্য দলটির অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেন না। হুমকি-ধমকি দেন। কেন্দ্র দখল ও ভোট ডাকাতি করে জয় ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় নির্বাচনে থাকা না-থাকা নিয়ে দলের মধ্যে নানা আলোচনা তৈরি হয়। মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দলীয় প্রধান নির্বাচন বর্জনের একরকম সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনে থাকা না-থাকা নিয়ে গত রোববার রাতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে নির্বাচনে থাকার পক্ষে-বিপক্ষে মত দেন নেতারা। নির্বাচনে থাকার পক্ষেই বেশির ভাগ নেতা মত দিয়েছেন। আজ খালেদা জিয়া মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এবং জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।
তবে কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপির ইউপি নির্বাচন সমন্বয়ে যুক্ত একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেবে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তৃতীয় ধাপের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ ধাপের মনোনয়নের কাজ শুরু করার জন্য তাঁদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ সকাল থেকে তাঁরা কাজও শুরু করেছেন। এই দুটি নির্বাচন দেখে পঞ্চম ও ষষ্ঠ ধাপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অবস্থা একই রকম থাকলে শেষ পর্যায়ে নির্বাচন বর্জন করা হতে পারে।
বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক প্রথম আলোকে বলেন, ইউপি নির্বাচনে বিএনপির থাকার সম্ভাবনাই বেশি। বিএনপির আরেকটি সূত্র জানায়, গত শনিবার রাতে খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন কয়েকজন পেশাজীবী তাঁকে নির্বাচন বর্জন না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, গত রোববার রাতের বৈঠকে নির্বাচনে থাকার পক্ষে যাঁরা মত দিয়েছেন তাঁদের মূল যুক্তি ছিল, মাঠ ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। গত দুই বছরে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা মামলা-মোকদ্দমায় এলাকাছাড়া হয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাঁরা প্রকাশ্যে আসতে পারছেন। যতটুকুই করা যাচ্ছে তা দলের জন্য ভালো হচ্ছে। কেউ কেউ বলেছেন, হামলা-নির্যাতন-দখল-কারচুপি হবে-এসব জেনেই বিএনপি নির্বাচনে গেছে। এখন সরে আসা ঠিক হবে না। এই সরকার ও কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না-এ কথা প্রতিষ্ঠিত করা গেছে। নির্বাচন বর্জন করলে এই আলোচনা ঘুরে যেতে পারে। তাই এ সুযোগ আরও কাজে লাগাতে হবে। নির্বাচনে থাকলে জনগণ আরও বুঝতে পারবে এই সরকার ও কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না।
অন্যদিকে যাঁরা নির্বাচন বর্জনের পক্ষে ছিলেন তাঁদের মূল যুক্তি হলো, এই নির্বাচনে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষের মর্যাদা নষ্ট হচ্ছে। কারণ কিছু জায়গায় প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। বেশির ভাগ জায়গায় নৌকা ধানের শীষের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভোট পাচ্ছে। তাঁরা মনে করছেন এতে প্রতীকের মর্যাদা নষ্ট হচ্ছে। তাঁরা বলেছেন, এই নির্বাচনে এখন থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। কারণ থেকে বিএনপির কোনো লাভ হচ্ছে না। বিএনপির নেতা-কর্মীরা কোনো কর্মকাণ্ড চালাতে পারছেন না, হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সব দখল করে নিচ্ছে। বর্তমান সরকার ও কমিশনের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তা ইতিমধ্যে প্রমাণ হয়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকে কেউ কেউ বিএনপির প্রতীক না নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার কথা বলেছেন। তবে তাতে বিএনপির প্রধান সায় দেননি বলে সূত্র জানিয়েছে। ওই সূত্র জানায়, বিএনপি নির্বাচনে থাকলে ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪২:৫৬ ৩০৬ বার পঠিত