সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন মাশরাফি বিন মুর্তজাবঙ্গনিউজ ডটকমঃচার বছরের ব্যবধানে আবারও এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ। এবার টি-টোয়েন্টি সংস্করণে হওয়া এই টুর্নামেন্টে দেখা গেল মাশরাফি বিন মুর্তজার অসাধারণ নেতৃত্বের আরেকটি নিদর্শন। গতকাল শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন ভারতের বিপক্ষে দলের শক্তি-সম্ভাবনা নিয়ে…
* বাংলাদেশ আবারও খেলতে যাচ্ছে এশিয়া কাপের ফাইনাল। কীভাবে দেখছেন?
মাশরাফি বিন মুর্তজা: এটা শুধুই আরেকটি ম্যাচ। ফাইনাল বলে হয়তো এর মেজাজটা আলাদা হবে। তবে অন্য সব ম্যাচের মতোই দেখছি। গত তিন ম্যাচে যেভাবে খেলেছি, এটাতে সেভাবেই খেলতে চাই।
* শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। এতে কি বলা যায়, টি-টোয়েন্টিতে বড় দল হয়ে উঠছে বাংলাদেশ?
মাশরাফি: শ্রীলঙ্কা এখনো এশিয়া ও টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এই টুর্নামেন্টে হয়তো তারা ভালো করতে পারেনি, তবে তারা ভালো দল। এমনকি পাকিস্তানও। আমরা আগের চেয়েও ভালো খেলেছি, কিন্তু এখনো উন্নতির অনেক কিছু আছে, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। এশিয়ার বড় শক্তি হয়ে গেছি, এমন কিছু নয়।
* অধিনায়ক হিসেবে এ পর্যন্ত খেলা ম্যাচগুলোর মধ্যে এটিই কি সবচেয়ে বড়?
মাশরাফি: অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বড় ম্যাচ ছিল ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। এটি অন্যতম বড় ম্যাচ অবশ্যই। তুলনা করলে ওই ম্যাচটি আরও বড় ছিল।
* যেহেতু ফাইনাল ম্যাচ, চারপাশ থেকে নানা চাপ থাকবে। সেই চাপ থেকে কীভাবে দূরে থাকছেন?
মাশরাফি: এসব আসলে চিন্তার বিষয় নয়। পেশাদার হিসেবে আমাদের শুধু ম্যাচ নিয়ে ভাবা উচিত। আমরা সেটাই চাচ্ছি এবং করছি। ছেলেরা যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে। আমরা চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে খেলছি না। এশিয়া কাপে আগে যেভাবে খেলেছিলাম, চেয়েছি সেখানে যেন উন্নতি করতে পারি। পারফরম্যান্সের গ্রাফের ঊর্ধ্বমুখী মানে এই নয়, আমরা বড় দল হয়ে গেছি।
* ভারতের ব্যাটিং অর্ডার বিশ্বের অন্যতম সেরা। তাদের আটকাতে আপনাদের ভাবনা কী?
মাশরাফি: ভারতের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। ওদের ওপরের ছয় ব্যাটসম্যানই বিশ্বমানের, বিশেষ করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে। নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় আটকানোর সুযোগ নেই। ওরা অবশ্যই চড়াও হওয়ার চেষ্টা করবে। তবে যতটা সম্ভব সেটা যাতে কম হয়, সেই চেষ্টা করব।
* যদি আবারও ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, বাংলাদেশ পারবে উতরে যেতে?
মাশরাফি: ও রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে হয়তো ভালো ফলই হবে। তবে বলতে পারব না, আগের ফাইনালে কাছাকাছি গিয়েছি বলে এবার আমরা চ্যাম্পিয়ন হব। তবে যদি ওই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়, তবে আগের তুলনায় ভালো খেলতে পারব। আবার বলছি, টি-টোয়েন্টি খেলাটাই হলো নির্দিষ্ট দিনে যে ভালো খেলবে, সে জিতবে।
* যেহেতু ঘরের মাঠে খেলা, সবই আপনাদের পক্ষে থাকবে। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে আপনার দলে শক্তির জায়গাটা কোথায়, যেটি দিয়ে ভারতকে হারানো সম্ভব?
মাশরাফি: শক্তির জায়গা বলতে, দলে বেশ কজন তরুণ ক্রিকেটার আছে। তারা শুধু সম্ভাবনাময় নয়, নিজেদের সম্ভাবনা কাজেও লাগাতে পারে। এই ম্যাচে ভারত পরিষ্কার ফেবারিট, এটা সবাই জানে। কিন্তু আমরা খেলছি দল হিসেবে। এখনো আমাদের দলে সে রকম ক্রিকেটার গড়ে ওঠেনি, যারা একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে। গত দুই ম্যাচে আমরা দল হিসেবেই খেলেছি। আর এটা আমাদের ভালো সুযোগ। দর্শক, মাঠ—সবই আমাদের পক্ষে। তবে ক্রিকেটে এটাই শেষ কথা নয়। সবকিছু পক্ষে থাকলেই যে দিন আমাদের হবে, এর নিশ্চয়তা নেই।
* ফাইনালের এক দিন পরই আপনাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মিশন শুরু। এক দিকে ভারতে উড়াল দেওয়ার তাড়া, আরেক দিকে ফাইনাল। এতে মানসিক চাপ তৈরি করে কি না।
মাশরাফি: এটা কঠিন হবে, সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের কিছু করার নেই। যদি আমরা ৬ তারিখে গিয়ে এক দিন বাড়তি পেতাম, তাহলে দেখা যেত। তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য এটা ভালো হয়েছে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই এত বড় ম্যাচ খেলার মানসিকতা এখনই গড়ে উঠবে তাদের। সেভাবেই নিজেদের তৈরি করবে। পেশাদার ক্রিকেটারের জীবন এমনই। এর মধ্যে আনন্দ আছে, সেটা অনুভব করতে হবে। ফাইনালে না উঠলে হয়তো এমন স্বাদ পেতাম না। মনে করি, দলের সবাই এটা উপভোগ করছে।
* ভারতের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের এশিয়া কাপ। প্রথম ম্যাচের হার কি কোনো প্রভাব ফেলবে ফাইনালে?
মাশরাফি: প্রথম ম্যাচে ২০০ রানে জিতলেও সেটা কোনো কাজে লাগত না। অধিনায়ক হিসেবে আমাকে সেটা কোনো সাহায্য করত না। তবে দল হিসেবে খেললে আত্মবিশ্বাস ভালো থাকে। এক-দুজনের পারফরম্যান্স দিয়ে ম্যাচ জেতা যায় না, বিশেষ করে আমাদের দলে। দল হিসেবে খেলছি, আপাতত সেটাতেই মন দিচ্ছি।
* ভারতের বিপক্ষে মুস্তাফিজুর রহমান হতে পারত আপনার প্রধান অস্ত্র। কিন্তু তাঁকে ছাড়াই খেলতে হচ্ছে…
মাশরাফি: এ মুহূর্তে আমরা আমাদের সেরা বোলারকে ছাড়া খেলছি। কিন্তু মুস্তাফিজের জায়গায় তাসকিন ও আল আমিন দারুণ করেছে গত ম্যাচে। এটা দলের জন্য ভালো ব্যাপার, সেরা বোলার না থাকার পরও অন্যরা দায়িত্ব নিচ্ছে ও পারফর্ম করছে।
* এই ধরনের ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা খুব একটা হয় না বাংলাদেশের। চারদিকে এত উন্মাদনা, কীভাবে দেখছেন সবকিছু?
মাশরাফি: এ রকম পরিস্থিতিতে অনেক সময় এলোমেলো হয়ে যেতে হয়। তবে এ ধরনের ফাইনালে তারাই জেতে, যারা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না। চেষ্টা করব যেভাবে খেলছি, সেই স্বাধীনতা নিয়ে খেলার। এমন হাইপের ম্যাচ খেলার অভ্যাস যেহেতু খুব বেশি নেই, চেষ্টা করছি চাপ থেকে যতটা মুক্ত থাকা যায়।
* এশিয়া কাপ জিতলে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সেটি কতটা প্রভাব ফেলবে, আর না জিতলেই বা কী হবে?
মাশরাফি: না জিতলে কিছুই হবে না। এমন নয় যে, তাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট এখানেই থেমে যাবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। এই টুর্নামেন্টে খুব ভালো একটি বার্তা দিতে পেরেছি, আমরা টি-টোয়েন্টিতেও এগিয়ে যাচ্ছি। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে জিতলে অসম্ভব ভালো লাগবে। কিন্তু না জিতলে সব শেষ হয়ে যাবে না। আমরা ঠিকই সামনের দিকে এগিয়ে যাব, ভালো করব।
* এটাই কি ঘরের মাঠে আপনার শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ?
মাশরাফি: আপনাকে কে বলেছে শেষ ম্যাচ? আমি তো বলিনি। আমার শুরু বা শেষ কোনো ব্যাপার নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এটা বড় ম্যাচ। কাজেই এখানে সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করব।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৬:৪৩ ২১৩ বার পঠিত