বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
নেছার এ নিশানঃ
ঘরের মাঠে ২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেবার পাকিস্তানের কাছে মাত্র দুই রানে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয়েছিলেন সাকিব-মুশফিকরা। আবারো বাংলাদেশের সামনে বাঁধা সেই পাকিস্তান। তবে এবার ফাইনালে ওঠার পথেই বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শহীদ আফ্রিদির দল। এশিয়া কাপে বাংলাদেশ নিজেদের রাউন্ড রবিন লিগের চতুর্থ অর্থাৎ শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে। বুধবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেয়িামে অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায়। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি, বিটিভি, মাছরাঙা টিভি এবং স্টার স্পোর্টস ১ ও ৩। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দু’দলই হার দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু করেছিল। তাও আবার একই প্রতিপক্ষ ভারতের বিপক্ষে। এমনকি কাকতলীয়ভাবে এই দু’দল সেই হার ভুলে ছন্দে ফিরেছে একই দল সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে। বাংলাদেশ কিছুটা এগিয়ে পাকিস্তানের চেয়ে। আমিরাতের পর শ্রীলঙ্কাকেও হারিয়েছে মাশরাফি বাহিনী। যে জয় ফাইনালের সুবাস এনে দিয়েছে বাংলাদেশ শিবিরে। প্রায় চার বছর আগে এই এশিয়া কাপেই তো টানা চারটি হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম ইকবাল। চার বছর পর বুধবারের ম্যাচ দিয়ে এশিয়া কাপে ফিরছেন টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সফল এই বাঁহাতি হার্ড হিটার ওপেনার। এশিয়া কাপে এদিন তার টানা পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরির অপেক্ষা। পাকিস্তানের বিপক্ষে মুস্তাফিজুর রহমানকে না পাওয়ায় কিছুটা হতাশা বাড়ালেও তামিম ফেরায় ওপেনিং নিয়ে আত্মতৃপ্তিও বেড়েছে টাইগারদের। পাকিস্তানের বিপক্ষে বুধবারের ম্যাচে জয় পেলেই ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা আরো জোরালো হবে স্বাগতিকদের। তাই ২০১২ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলার স্বপ্নে বিভোর টাইগাররা। মঙ্গলবার বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের আগে স্বাগতিক অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা বলেন, ‘আমাদের সামনে আসলেই ফাইনাল খেলার ভালো সুযোগ আছে। সর্বশেষ দুটি ম্যাচ যেভাবে খেলেছি, সেভাবে খেলতে পারলে অবশ্যই সুযোগ কাজে লাগানো যাবে। কিছু ভুলও অবশ্য ছিল। কিন্তু আমরা প্রয়োজনের সময় দরকারি কাজগুলো করতে পেরেছি বলেই ম্যাচ দুটি জিতেছি।’ বাংলাদেশের সামনে ‘সাইনবোর্ড’ ঝুলছে যে, জিতলেই ফাইনালের হাতছানি। প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের জন্য ম্যাচটি টুর্নামেন্টে টিকে থাকার মঞ্চ। হারলেই পত্রপাঠ বিদায়ের কাছে চলে যাবে শহীদ আফ্রিদির দল। তবে বোলিংয়ের দিক থেকে দু’দলই দারুণ শক্তিশালী। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচ থেকে চার পেসার খেলিয়ে আসছে বাংলাদেশ। এদিকে পাকিস্তানও প্রথম ম্যাচে চার পেসার নিয়ে নেমেছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য তারা তিন পেসার খেলিয়েছিল। তবে বুধবার বাংলাদেশ শিবিরের জন্য বড় ধাক্কা পেস বোলিংয়ের বড় অস্ত্র মুস্তাফিজকে না পাওয়া। ডান পাঁজরের ইনজুরির কারণে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছেন বাঁহাতি পেসার। ব্যাটিংয়ে অবশ্য শক্তি যুক্ত হয়েছে। দলে ফিরেছেন তামিম ইকবাল। পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) ধারাবাহিক রান পাওয়া তামিম রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। মুস্তাফিজ না থাকায় বুধবার বাংলাদেশের একাদশে চার পেসার দেখা না গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। দলে থাকা বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার রনিও সুযোগ পেতে পারেন। তামিম ফেরায় মিঠুনকে বসতে হচ্ছে বলা যায়। মুস্তাফিজের জায়গায় তামিম, আর মিঠুনের জায়গায় রনি, নাসির বা আরাফাত সানির একাদশে ফেরার সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া পাকিস্তানের বিপক্ষে নাসিরের রেকর্ডও যথেষ্ট ভালো। মঙ্গলবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচকে সামনে রেখে মিরপুরের ইনডোরে সবার ডানের নেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ স্পিন বলে লম্বা লম্বা শট খেলছিলেন। তার পাশেই আল-আমিনের করা একটা সাকিব আল হাসান রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলছেন তো আরেকটা বল সজোরে মারছেন। সাকিবের পাশে মুশফিকের চিরচেনা সুইপ শটগুলো বার বার মারার চেষ্টা করেন। চতুর্থ নেটে মাশরাফি। ম্যাচের আগের দিনে নেটে টাইগার অধিনায়ক বোলিং করেন না! অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রার পরামর্শেই তিনি এই নিয়ম মেনে চলেন। তবে ম্যাচের আগের দিন ব্যাটিংটা ঠিকই করলেন মাশরাফি। তাদের আগেই লম্বা সময় নিয়ে মাঠে ঘাম ঝরিয়েছেন সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। সবই যেন বুধবারের ম্যাচ কীভাবে খেলতে হবে তার ড্রেস রিহার্সেল। যদিও ব্যাটিং নিয়েই বাংলাদেশের যত ভয়, ব্যাটিংয়ে ভালো স্কোর করতে পারলে বোলারদের জন্য কাজটা যে অনেক সহজ হয়ে যায়। অপরদিকে পাকিস্তানেরও বড় শক্তি পেসাররা। বিশেষ করে আমির দুর্দান্ত বোলিং করছেন। ইরফান, সামিদের সামলাতেও পরীক্ষা দিতে হবে বাংলাদেশকে। টপঅর্ডার নড়বড়ে হলেও পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা ছন্দ ফিরে পাচ্ছেন। শোয়েব মালিক, উমর আকমল শেষ ম্যাচে রান পেয়েছেন। মঙ্গলবার ছিল পাকিস্তানের দলের ঐচ্ছিক অনুশীলন। তাই এদিন অনুশীলনে ঘাম ঝরাতে আসেননি অধিনায়ক আফ্রিদি, আমির, ইরফান, হাফিজ ও সামিরা। মোহাম্মদ আমির সবুজ উইকট পেয়ে দুর্দান্ত বোলিং করছেন। সোমবার পাকিস্তানের এই বোলিংয়ের বিপক্ষেও ১২৯ রান করে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এটা বাংলাদেশের জন্য কিছুটা স্বস্তিরই। পাকিস্তানের বোলিং কোচ আজহার মাহমুদ বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে বলেন, ‘এখানে সবাইকেই রান পেতে কষ্ট করতে হচ্ছে। উইকেটে অনেক সুইং ও বাউন্স আছে। পাকিস্তানের বোলিং সব সময়ই প্রধান শক্তি। কিন্ত ছেলেরা ব্যাটিংটাও ভালো করার চেষ্টা করছেন।’ তবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি-২০তে দু’দলের লড়াইয়ের অতীত ইতিহাস পাকিস্তানের পক্ষেই কথা বলছে। ৮ ম্যাচের ৭টিতে জিতেছিল পাকিস্তান। তবে সবশেষ লড়াইয়ের কথা বললে জয়ের সুখস্মৃতি রয়েছে মাশরাফি বাহিনীর। গত বছরের এপ্রিলে এই মিরপুরে আফ্রিদির দলকে হারিয়েছিলেন মাশরাফিরা। যদিও এশিয়া কাপের ওয়ানডে ম্যাচে ১২ বার মুখোমুখি হয় দু’দল। কিন্তু একবারও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। একদিকে বাংলাদেশের ফাইনালে ওঠার হাতছানি। অপরদিকে পাকিস্তানের টুর্নামেন্টে টিকে থাকার লড়াই। তাই এবার দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, স্বাগতিক বাংলাদেশকে হারিয়ে ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখবে আফ্রিদির দল, নাকি পাকিস্তানকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে খেলার সম্ভানাকে আরো উজ্বল করবেন টাইগাররা।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৫০:০৮ ২৮৪ বার পঠিত