বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালায় ১০ লাখ চালক

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালায় ১০ লাখ চালক
মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০১৬




বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃগত কয়েক মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েছে। দুর্ঘটনায় বিপুল সংখ্যায় প্রাণহানি ঘটছে। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে শত শত মানুষ। এর পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে চালকদের অদক্ষতা এবং অসাবধানতা।

দেশে সড়ক যোগাযোগে অন্যতম দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। খোদ সংস্থাটির কর্মকর্তারাই স্বীকার করছেন, দেশের মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৭০ থেকে ৮০ ভাগই ঘটে চালকের অসতর্কতা এবং অযোগ্যতার কারণে।

চালকদের অযোগ্যতার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশে ১০ লাখের বেশি গাড়ি চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। ভূয়া লাইসেন্স সংগ্রহ করে কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছে তারা। ফলে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। দীর্ঘ হচ্ছে অকালে প্রাণ হারানো মানুষের তালিকা।

গত কয়েক বছরে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর কারণ পর্যালোচনায় দেখা যায়, এসব দুর্ঘটনা যান্ত্রিক ত্রুটি, সিগন্যাল অমান্য করা, মাতাল হয়ে গাড়ি চালনা, বেপরোয়া গাড়ি চালনা, ওভারটেকিং, পাল্লাপাল্লি, ভুক্তভোগীর অসতর্কতা, চালকের অসতর্কতা, সড়কে বিদ্যমান অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা, গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ, পেছন দিকে আঘাত এবং গাড়ি উল্টে যাওয়া জনিত কারণে ঘটেছে।

এর মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটি, ভুক্তভোগীর অসতর্কতা এবং সড়কে বিদ্যমান অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা ছাড়া বাকি সবগুলোই চালকের অক্ষমতা, অসতর্কতা কিংবা অযোগ্যতার ফল।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে জাতীয় মহাসড়ক রয়েছে ৩ হাজার ৫৪৪.০৬ কিলোমিটার (কিমি), আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ হাজার ২৭৮.০৭ কিমি এবং জেলা সড়ক ১৩ হাজার ২৪৭.৭৯ কিমি। মোট সড়কের দৈর্ঘ্য ২০ হাজার ৯৪৭.৭৩ কিমি। 

সারাদেশের এসব সড়কে চলাচল করে ২৪ লাখ ৯১ হাজার ২৯৯টি বিভিন্ন আকারের মোটরযান (৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত)। এসব গাড়ির জন্য লাইসেন্সধারী ড্রাইভারের সংখ্যা ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৪৬৫ জন। অর্থাৎ দেশে ৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৩৪টি মোটরযান চালায় ভুয়া ড্রাইভার। যাদের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।

সংস্থাটির হিসেবে, খোদ ঢাকাতেই লাইসেন্সবিহীন চালকের সংখ্যা তিন লাখের বেশি। এছাড়া সারাদেশে লাইসেন্সধারী ১৫ লাখ গাড়িচালকের লাইসেন্সও পুরোপুরি বৈধ নয়। জানা গেছে, দেশে আধুনিক বা মানসম্মত কোনো ড্রাইভিং স্কুল না থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা নিম্নমানের ড্রাইভিং স্কুল বা সিনিয়র ড্রাইভারদের কাছে কোনো প্রকার চালনা শেখে। স্বল্প সময়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেই তারা গাড়িচালনা পেশায় যোগ দেয়। এছাড়া দীর্ঘদিন গাড়ির হেলপার থেকে পরে গাড়ির ড্রাইভার হয়েছেন অসংখ্য বাস ও ট্রাক ড্রাইভার।

এসব হিসাব আমলে নিলে দেশে দক্ষ এবং বৈধ চালকের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি হবে না বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা। সে হিসেবে দেশে ২০ লাখের বেশি মোটরযান চলে অদক্ষ চালকের হাতে।

এসব অনুপযুক্ত ও অনভিজ্ঞ চালকের কারণে প্রতিদিনই ঘটেছে সড়ক দুর্ঘটনা। যা কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ, পঙ্গু করে দিচ্ছে মানুষকে।

বিআরটিএ’র পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) বিজয় ভূষণ পাল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ভূয়া লাইসেন্স কিংবা বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালিয়ে আসছে এক শ্রেণির অদক্ষ চালক। এসব চালকের অধিকাংশেরই ব্যস্ততম সড়কে গাড়ি চালানোর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। যে কারণে তারা সড়ক ও মহাসড়কে প্রায়শঃই দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এসব অবৈধ ও ভুয়া চালকদের ধরার জন্য নিয়মিতভাবে বিআরটিএ’র মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষেত্রেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন, পুরো দেশে এক সঙ্গে অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। এছাড়া এক রাস্তায় অভিযান পরিচালনা করা হলে তাদের সিন্ডিকেট খবরটা জানিয়ে দেয়, ফলে ওই পথের সবাইকেই ধরা সম্ভব হয় না।’

বিআরটিএ’র এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স, ভুয়া লাইসেন্স, বাড়তি ভাড়া আদায় এবং গাড়ির ফিটনেস বা অন্য কাগজপত্র না থাকলেও সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

এদিকে দেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বৈধ লাইসেন্সধারী চালকের কোনো বিকল্প না থাকলেও সরকারিভাবে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

২০১০ সালের দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে যৌথ পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পণা করে। কিন্তু এখনো সেই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি।

সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে দেশে সরকারিভাবে একমাত্র বিআরটিএ নিয়মিত চালকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ হাজার পেশাজীবী গাড়িচালককে শূধু দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস, ভূয়া ও জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রতিরোধ এবং দেশে দক্ষ শিক্ষিত গাড়িচালক তৈরি করা এই উদ্যোগের উদ্দেশ্যে। তবে, প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম সংখ্যক গাড়িচালক এই প্রশিক্ষনের সুযোগ পাচ্ছে।

অথচ প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক গাড়ি নামছে রাস্তায়। সে অনুপাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেয়া হচ্ছে না। বিআরটিএ’র তথ্য মতে, শুধু ২০১০ সালেই সারাদেশে ১ লাখ ৬১ হাজার গাড়ি নিবন্ধন হয়েছে । ২০১১ সালে নিবন্ধন হয় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮৬ গাড়ি। ২০১২ সালে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮৬, ২০১৩ সালে ১ লাখ ৬০ হাজার ৭০৫, ২০১৪ সালে ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৯ এবং ২০১৫ সালে ৩ লাখ ২১ হাজার ২১৫টি গাড়ি নিবন্ধন হয়। এমনকি শুধু গত মাসে সারাদেশে নিবন্ধন হয় ২৮ হাজার ১টি গাড়ি।

ক্রমবর্ধমান চালকের প্রশিক্ষণের সুবিধা জোরদার হচ্ছে না। লাইসেন্স গ্রহণের সংখ্যাও বাড়ছে না সে হারে। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ার আশঙ্কা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৫৯:২০   ২৭২ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আজকের সকল পত্রিকা’র আরও খবর


নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন হাজী মোহাম্মদ হারিজ খান
সেরে উঠলেন ক্যানসার রোগীরা
আশুলিয়ায় খুশবু রেস্তোরাঁ উদ্বোধন
ধর্মপাশায় ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে শিক্ষকদের কর্মসূচী
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি পণ্য সরবরাহ
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি পণ্য সরবরাহ
বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের প্রতি দায়িত্ব পালনে কূটনীতিকদের আন্তরিক হতে হবে: শেখ হাসিনা
শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় ইদুর নিধন
শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় ইদুর নিধন

আর্কাইভ