বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃবঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মন্তব্যে আওয়ামী লীগে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের নীতিনির্ধারক নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের আকস্মিক তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ। গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার/পৌরসভা নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে হঠাৎ করেই ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের তৎপরতা নিয়ে আলোচনা হয়। এ আলোচনায় টিভি টকশোতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কিছু মন্তব্য নিয়েই প্রধানত আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই আলোচনায় কেন্দ্রীয় নেতারা মহান মুক্তিযুদ্ধে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের ভূমিকা এবং ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেছেন। বৈঠকে সাম্প্রতিক সময়ে দুটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শো অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মন্তব্যকে ‘আপত্তিকর’ বলে মন্তব্য করেছেন নেতারা। এ প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, হঠাৎ করেই ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাদের ওপর কড়া নজর রাখার পরামর্শ দেন কেউ কেউ। এ বৈঠকে বলা হয়েছে, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ওয়ান-ইলেভেনের অন্যতম কুশীলব। ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’র সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। এখন তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতেও দ্বিধা করছেন না। নেতাদের কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মইনুল হোসেনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য এই বিষয়ে বিশদ কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা থাকায় ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মইনুল হোসেনকে মনোনয়ন দিতে চাননি বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তার (মইনুল হোসেন) মায়ের অনুরোধে বঙ্গবন্ধু তাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেন। শুক্রবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার/পৌরসভা নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতাদের তিনজন সমকালের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো অনুষ্ঠানে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক বিয়োগান্ত ঘটনা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন মইনুল হোসেন। ওই বৈঠকে বলা হয়েছে, টকশো অনুষ্ঠানে মইনুল হোসেন বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় কান্নাকাটি করলে হবে না। সুযোগটা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আমি কষ্ট পেয়েছি। শুক্রবার ছিল। আমি গাড়িতে একা বের হই। আমি কল্পনাও করতে পারি নাই, বঙ্গবন্ধু মারা যাবেন। অথচ একটা মারামারি, কাটাকাটি হবে না। আমি একা। রাস্তা সব ঠাণ্ডা। আমি বাসায় গিয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম, যদি ভুল করে না থাকি মনে হলো- স্বস্তির ভাব।’ বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, মইনুল হোসেন অশোভনীয় ভাষায় বর্তমান সরকারের পাশাপাশি রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতাদের কড়া সমালোচনা করেছেন। মইনুল হোসেন রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণেই ওয়ান-ইলেভেনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল বলে দাবি করেছেন। তিনি ওয়ান-ইলেভেনের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের দুষেছেন। আবার ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের পক্ষে নানা যুক্তিও দাঁড় করিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, তার পুরো বক্তব্যই ছিল আপত্তিকর। বৈঠকে ওয়ান-ইলেভেনে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বোর্ড বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন আহমেদ, রাশিদুল আলম, মাহবুবউল আলম হানিফ, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ড. আবদুর রাজ্জাক, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সমকালকে বলেন, ‘শেখ সাহেব আমাকে ছেলের মতো দেখতেন। তবে আমি ঠিকই বলেছি। আমার ভাষা হয়তো ঠিক হয়নি। কিন্তু এটা তো ঠিক, তার (বঙ্গবন্ধু) মৃত্যুর পর কেউ রাস্তায় নামেনি। এটা আমার কাছে আশ্চর্যজনক লেগেছে। খারাপও লেগেছে। ভেবেছিলাম, আন্দোলন হবে। কিন্তু হলো না। রাস্তায় কেউ বের হলো না। রাগ-ক্ষোভ দেখলাম না। আজকে যারা বঙ্গবন্ধুর জন্য কান্নাকাটি করেন, ওই দিন তো তাদের কাউকে কান্নাকাটি করতে দেখিনি। এখন আমার বক্তব্য নিয়ে যে যার মতো যা খুশি ভাবুন, আমি বিতর্কে যাব না।’
বাংলাদেশ সময়: ১১:২১:৫৭ ৩৫২ বার পঠিত