বঙ্গনিউজ ডটকমঃ পছন্দসই জায়গা নিশ্চিত করতে না পারায় জাতীয় সম্মেলন নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তায় পড়েছে বিএনপি। এর মধ্যে সম্মেলনের মূল আকর্ষণ মহাসচিব পদ ঘিরে দলের প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে নানামুখী তৎপরতা চলছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১৯ মার্চ দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হলেও গতকাল সোমবার পর্যন্ত জায়গা ঠিক করতে পারেনি দলটি। সম্মেলন প্রস্তুতির জন্য গঠিত কমিটির বৈঠকগুলোও হচ্ছে না। এ পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী করছেন বিএনপির নেতারা।
বিএনপির পক্ষ থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন—তিন জায়গার যেকোনো একটিতে সম্মেলন করতে অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। এর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জন্য গণপূর্ত বিভাগের অনুমোদন পাওয়া গেছে। কিন্তু পুলিশের অনুমতি এখনো মেলেনি। আবার নিরাপত্তা ও পারিপার্শ্বিক সমস্যার কথা বিবেচনা করে বিএনপিরও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলন আয়োজন নিয়ে অনাগ্রহ আছে।
এ অবস্থায় ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে সম্মেলন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। পরদিন এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সম্মেলনের জন্য মিলনায়তন ভাড়া দেয় না। এতে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা বিব্রত হন।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির দপ্তর ও যোগাযোগ-বিষয়ক উপকমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী গত রাতে , ‘ইচ্ছা করলে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ ভাড়া দিতে পারত। কিন্তু সরকারের চাপে তারা এ কাজটি করল।’
তাহলে কি ১৯ মার্চ সম্মেলন হচ্ছে না? এই প্রশ্নে বিএনপির নেতারা বলেছেন, তাঁরা জায়গা খুঁজছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির প্রকাশনাবিষয়ক উপকমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার চাচ্ছে আমাদের যত অসুবিধা করা যায়, যত দেরি করা যায়। না হলে একটি দলের সম্মেলনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট জায়গা পেতে এত অসুবিধা হবে কেন? আমরা জায়গা খুঁজছি। গাছতলা, বটতলা—যেখানেই হোক সম্মেলন আমরা করবই।’
এই পরিস্থিতিতে নতুন করে দলের মহাসচিব পদ নিয়েও নানামুখী তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিএনপির সূত্র জানায়, এই সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসচিব হচ্ছেন, তা নেতা-কর্মীদের কাছে অনেকটা নিশ্চিত বা মীমাংসিত বিষয় বলে বিবেচিত হচ্ছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের কেউ কেউ তরিকুল ইসলামকে মহাসচিব করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
বিএনপির উচ্চ ও মধ্যম সারির দুজন নেতা জানান, মির্জা ফখরুল ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হওয়ার পর থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কয়েকজন নেতার বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। মূলত ওই অংশটি এখন তাঁর বিরোধিতায় সক্রিয় হয়েছে। এ তৎপরতায় দলে পুরোনো বাম ধারার কয়েকজন নেতাও সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। তাঁরা তরিকুল ইসলামকে মহাসচিব হতে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে এ বিষয়ে চেষ্টা-তদবিরও করছেন। তাঁরা মনে করছেন, তরিকুল ইসলাম জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ নেতা। এই ক্রান্তিকালে তিনি দায়িত্ব নিলে দল উপকৃত হবে। তরিকুলের ব্যাপারে লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও সায় আছে বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে। সমস্যা কেবল তরিকুল ইসলামের শারীরিক অসুস্থতা।
অবশ্য এ তৎপরতার সঙ্গে জড়িত বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, তরিকুল ইসলাম শারীরিক কারণে কিছুটা পিছটান দিয়ে আছেন, এটা সত্য। কিন্তু তিনি মানসিকভাবে দৃঢ়চেতা। তবে এই বয়সে কারও সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা নিয়ে তাঁর মধ্যে অস্বস্তি আছে। তিনি এখন সত্তরোর্ধ্ব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে সুস্থ নই। তবু আমি দল করি। একেবারেই যদি কাউকে পাওয়া না যায়, সে ক্ষেত্রে দায়িত্ব দিয়ে দিলে তো দলের স্বার্থে বিকল্প চিন্তা করতে হবে।’
মির্জা ফখরুলকে মহাসচিব চান—দলের এই অংশের নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলের জন্য তাঁর অনেক ত্যাগ আছে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের পদে আসীন হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ৮৪টি মামলা হয়েছে, ছয় দফায় তিনি ৩২২ দিন কারাবন্দী ছিলেন। তা ছাড়া ফখরুল একজন সৎ ও সজ্জন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। তাঁর বক্তব্য সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পায়। ফলে যেকোনো বিচারেই তাঁর মহাসচিব হওয়া উচিত।
মির্জা ফখরুলের বিরোধী অংশের নেতা-কর্মীদের বক্তব্য হচ্ছে ফখরুলের সাংগঠনিক দক্ষতা ও প্রজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তিনি সাহসী নন। বিগত আন্দোলনে তা দেখা গেছে। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তিনি অনেক নেতার তুলনায় কনিষ্ঠ। এ কারণে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হওয়ার পর থেকেই তিনি দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতার সমর্থন পাননি। ফলে তিনি দলে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হননি। এর বিপরীতে জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ নেতা হিসেবে দলে তরিকুল ইসলামের ভালো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তিনি মহাসচিব হলে কোনো পক্ষ বিরোধিতার সাহস দেখাবে না।
মহাসচিব পদের এই টানাপোড়েনের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তরিকুল ইসলাম ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) ও আমার কাছে বলেছেন, তিনি মহাসচিব হতে আগ্রহী নন।’ তাঁর নিজের আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মহাসচিব হতে আমার কোনো সমস্যা নেই। হয়তো তাই একটি কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে। মহাসচিব পদটি আমার কাছে ইমম্যাটারিয়্যাল (গুরুত্বপূর্ণ না)। আমি এটার জন্য রাজনীতি করি না।’
বাংলাদেশ সময়: ১০:১৯:৪৬ ২৪৪ বার পঠিত