নাঈম ও নাদিয়া, এলিটা ও আশফাক নিপুণবঙ্গনিউজ ডটকমঃএলিটা ও আশফাক নিপুণ, নাদিয়া ও নাঈম আর শখ ও নিলয়-ছোট পর্দা এবং সংগীত জগতের খুব পরিচিত মুখ। সম্প্রতি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু তার আগে আছে কিছু গল্প। পরিচয়, প্রেম এবং…। ভালোবাসা দিবসের আগে এই তিন তারকা দম্পতির কথা তুলে ধরা হলো এখানে।
বিচ্ছেদ থেকে কাছে আসা
গত ৭ জানুয়ারি বিয়ের কাজটি সেরে নেন শখ ও নিলয়। টিভি নাটকের আলোচিত এই জুটি তাঁদের কাছে আসার গল্পটা জানাতে ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় এসেছিলেন প্রথম আলোর কার্যালয়ে। শখ বললেন, ‘২০১০ সালে একটি মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করতে গিয়ে আমাদের প্রথম দেখা। সেদিন মেকআপ রুমে অনেক ভিড় ছিল। বসার জায়গা নেই। নিলয়কে অনুরোধ করি। ও আমার জন্য জায়গা করে দেয়, কিন্তু ফিরে তাকানোরও প্রয়োজন মনে করে না। অবাক হই।’
নিলয় বললেন, ‘আমি মাত্র কাজ শুরু করেছি। শখ তো তখন তারকা। তাই ভয়ে কথা বলতাম না। আমার মতো কাজ করে গেছি। যে শখের সঙ্গে কথা বলা হতো না, পরে তার সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব তৈরি হয়। নিয়মিত কথা হতো।এখন তো আমরা স্বামী-স্ত্রী।’
২০১১ সালের জুন মাসে রূপার শেষ কথা নাটকে কাজ করতে গিয়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান শখ ও নিলয়। শখ বললেন, ‘২৩ জুন সোনারগাঁও হোটেলে একটি অনুষ্ঠানে নিলয় সরাসরি আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। আমি আর না করতে পারিনি। মনে হয়েছে, ওর ওপর নির্ভর করতে পারি।’
২০১২ সালের শেষ দিকে হঠাৎ শখ ও নিলয়ের প্রেমে ভাঙন ঘটে। অবশেষে তা জোড়া লাগে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি। নিলয় বলেন, ‘কলকাতায় একটি বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজ করতে যাই। তখন নিজেদের আরও ভালোভাবে জানার সুযোগ হয়। এরপর টানা কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছি। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি এসে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই।’
শখ বললেন, ‘ছয় বছরের পরিচয়ে এক বছর আমরা একজন আরেকজনের কাছ থেকে দূরে ছিলাম। ওই সময় নিলয়ের প্রতি আমি আরও বেশি টান অনুভব করতে থাকি। বলতে পারেন, বিচ্ছেদ আমাদের ভালোবাসাকে আরও গাঢ় করেছে।’
প্রেম+বিয়ে=৬ বছর
এলিটা ও আশফাক নিপুণ বিয়ে করেন গত বছর মে মাসে। দুজনের পরিচয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই নিপুণ বলেন, ‘এলিটাকে আগে থেকেই চিনতাম। ব্যক্তি এলিটা আর তার গানের ভক্ত ছিলাম। ফেসবুকে বন্ধু হওয়ার অনুরোধ পাঠিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। শেষবার তো বন্ধু অপুকে দিয়ে এলিটা বলে, আমি যেন ওকে আর বিরক্ত না করি!’
২০১০ সালের জুন মাসে আশফাক নিপুণের ধারাবাহিক নাটক মুকিম ব্রাদার্স-এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। এলিটাও এসেছিলেন। নিপুণ বললেন, ‘পুরো অনুষ্ঠানে আমি এলিটার কাছাকাছি যাইনি, যদি ও কিছু বলে বসে! পরে আমি মঞ্চে কিছু বলতে উঠতেই এলিটা প্রথম আমাকে দেখেছে।’
এলিটা বলেন, ‘সেদিন আমাদের কোনো কথা হয়নি। পরদিন টিভির একটা লাইভ অনুষ্ঠানে ফোন দিয়ে কথা বলি। তারপর আমাদের মধ্যে ফোন দেওয়া-নেওয়া হয়। সেই থেকে বন্ধুত্বের শুরু। আমরা নিয়মিত ফোনে কথা বলতাম। চাঁদ থেকে শুরু করে বালুকণা, মাইকেল জ্যাকসন থেকে অর্ণব, নারীবাদ থেকে পুরুষবাদ, টম অ্যান্ড জেরি থেকে টম হ্যাংকস—নানা বিষয়ে আমাদের কথা হতো। খেয়াল করলাম আমাদের অনেক কিছুই মিলে গেছে।’
নিপুণ বলেন, ‘এলিটার প্রতি দুর্বলতা বাড়তে থাকে। ২০১০ সালের অক্টোবরে ফোনে ওকে আমার ভালোবাসার কথা জানাই। সেই থেকে শুরু। আমাদের প্রেম এখনো চলছে। সাধারণত কেউ প্রেমে পড়লে বন্ধুদের আগে জানায়, তারপর বন্ধুদের সাহস নিয়ে ভালোবাসার মানুষকে প্রস্তাব দেয়। আমাদের বেলায় ছিল উল্টো। আমরা নিজেরা সব ঠিক করে তারপর সবাইকে জানিয়েছি। আমাদের বিয়ের বেলায়ও তা-ই। গত বছর মে মাসে বিয়ে করেছি আমরা। বিয়ের তারিখ থেকে শুরু করে কোথায় বিয়ে হবে, কী খাবার হবে, এমনকি বিয়ের কাজিও দুজন মিলে ঠিক করেছি। মনের মিল ছিল বলেই সম্ভব হয়েছে তা। পরিচয়, প্রেম, ভালোবাসা ও বিয়ে—এসব মিলিয়ে ছয় বছর হয়ে গেল। আমাদের মুগ্ধতা বেড়েই চলছে।’
অল্প দিনেই কাছাকাছি
গত ১৫ জানুয়ারি হুট করেই বিয়ের কাজটি সেরে নেন নাঈম আর নাদিয়া। বিয়ের আগ পর্যন্ত তাঁদের বিয়ের ব্যাপারটি কেউ আঁচ করতে পারেনি। দুজনের কাছে আসা প্রসঙ্গে নাঈম বলেন, ‘জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ে—তিনটি বিষয়ই আল্লাহর হাতে। আমি মনে করি, কেউ এই ব্যাপারে আগাম কিছুই বলতে পারে না। গত বছরের নভেম্বরে আমাদের এক বন্ধুর বাসায় পারিবারিক অনুষ্ঠানে নাদিয়ার পরিবার আর আমাদের পরিবারের সবাই উপস্থিত ছিলেন। প্রায়ই আমাদের পরিবারে এমন অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। সেদিন আমি আর নাদিয়া এক জায়গায় দাঁড়িয়ে অনেকটা সময় গল্প করছিলাম। দুজনের কাজের ব্যাপারেও সেদিন অনেক কথা হয়। বাসায় ফিরে জানতে পারি, আমার আব্বু নাকি নাদিয়ার পরিবারের সঙ্গে অনেক বেশি পরিচিত। নাদিয়ার বাবা ও আমার বাবা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি আমার আম্মার কথা শুনে। তিনি নাকি নাদিয়ার মাকে বলেছিলেন, নাদিয়াকে তাঁর খুব পছন্দ। ব্যাপারটা জানার পর আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে যাই। মানসিক চাপ বাড়তে থাকে। নাদিয়ার সঙ্গে দেখা হলে কী বলব, ভেবে পাইনি। এই ভেবে সান্ত্বনা পাই, মাঝেমধ্যে আম্মা একটু বেশিই করে। পরে নাদিয়াও ব্যাপারটি স্বাভাবিকভাবে নেয়। অল্প দিনে আমরা কাছাকাছি এসেছি। তবে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই পরিবার।’
বাংলাদেশ সময়: ১০:৪০:১০ ৩২৫ বার পঠিত