বঙ্গনিউজ ডটকমঃবাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে এশিয়ান হাইওয়ের বাংলাদেশ অংশের উন্নয়নে ১৫ হাজার ২৫৫ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট ও সাসেক সংযোগ প্রকল্প-২ নামের ওই দুই প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সড়ক বিভাগ। এ দুটি প্রকল্পের আওতায় এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত ও সারাদেশে মাঝারি আকারের ১৭টি সেতু নির্মাণ করা হবে। নির্মাণ করা হবে কালভার্ট ও সংযোগ সড়ক। প্রকল্প ব্যয়ের ১২ হাজার কোটি টাকা আসবে বিদেশি সহায়তা থেকে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি সড়ক বিভাগ ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (বাংলাদেশ) শীর্ষক ওই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫১৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এই অর্থের ১ হাজার ৮৫১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা সহায়তা দেবে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা। জানুয়ারিতে পরিকল্পনা কমিশনে জমা
পড়ে সাসেক সংযোগ প্রকল্প-২ : এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প। এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। এতে ১০ হাজার ১৩৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা সহায়তা পাওয়া যাবে। দুই প্রকল্পে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) ১০টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি একটি তালিকা পাঠিয়েছে সড়ক বিভাগ। তালিকায় থাকা ১০ প্রকল্পের মধ্যে এ দুটি অন্যতম। প্রকল্প দুটি অনুমোদনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা কমিশনে শিগগিরই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার আয়োজন করা হবে।
ক্রস বর্ডার ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে যশোরের শার্শা ও ঝিকরগাছা, নড়াইলের সদর ও লোহাগড়া, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি, চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফটিকছড়ি, পটিয়া, চন্দনাইশ ও কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায়। এ প্রকল্পের আওতায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ১৭টি সেতু নির্মাণ, সাতটি কালভার্ট নির্মাণ, দুটি টোল প্লাজা নির্মাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ সড়ক ব্যবস্থার প্রায় ৭০ শতাংশ এশিয়ান হাইওয়ের অন্তর্ভুক্ত। অথচ অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত এলাকার জরাজীর্ণ রাস্তা ও সেতুর দুরবস্থার কারণে এসব সড়কে পর্যাপ্ত যান চলাচল করতে পারে না। এতে আরও বলা হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক জোন তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলের ১৭০ কোটি মানুষের ভোগ চাহিদা বাড়ছে। এর পরও দুই দেশের আন্তঃবাণিজ্য আটকে আছে মাত্র ৩ শতাংশে। আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু বিবেচনায় জাইকার ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকার সহায়তা নিয়ে আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার।
সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) ও বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডোরে (বিসিআইএম) নতুন করে এ দেশের আটটি মহাসড়ক যুক্ত হতে যাচ্ছে। এই সড়কগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৬০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রথম দফায় ১৯০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। উত্তরবঙ্গে শিল্পের প্রসারসহ বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা হয়ে ভারত ও নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় এ মহাসড়ক ভূমিকা রাখবে। সড়ক ও জনপদ অধিদফতর ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
সড়ক বিভাগের সচিব এমএন সিদ্দিক বলেন, রংপুর থেকে এ মহাসড়কের একটি অংশ লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ রুটের মাধ্যমে ভারত, নেপালসহ অন্যান্য দেশে সরাসরি ব্যবসার প্রসার ঘটানো সম্ভব হবে। এটি এশিয়ান হাইওয়ে, বিবিআইএন ও সাসেকের একটি অংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে। উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় যাতায়াতের দূরত্বও কমে আসবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় সড়ক বিভাগ জানায়, উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় প্রতিদিন ১২ থেকে ২৯ হাজার যান চলাচল করে। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ৪৩ হাজার ছাড়াবে। এসব চিন্তা মাথায় রেখেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সড়কের দুই পাশে কম গতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেন নির্মাণ করা হবে। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মাণ করা হবে ফ্লাইওভার। তিন ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে আড়াই কিলোমিটারের বেশি।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করতে উত্তরবঙ্গে সেভাবে মৌলিক অবকাঠামো নেই। রংপুরসহ উত্তরবঙ্গে শিল্প কারখানা বাড়াতে সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি করতেই হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে আগে দরকার অবকাঠামোর।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০২:০৫ ৩৩৬ বার পঠিত