‘মাছ ধরার মৌসুম’ মাধ্যম: প্রিন্ট, শিল্পী: সফিউদ্দিন আহমেদবঙ্গনিউজ ডটকমঃবাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে দক্ষিণ এশিয়ার শিল্পকর্মের সবচেয়ে বড় আয়োজন ঢাকা আর্ট সামিট-২০১৬। দেশি-বিদেশি শিল্পী, সংগ্রাহকদের অংশগ্রহণে শিল্পের এই মহা আয়োজনে থাকছে অনেক কিছুই। আর্ট সামিটের উল্লেখযোগ্য কিছু দিক নিয়ে লিখেছেনইকবাল হোসাইন চৌধুরী
অদেখা সুলতান এবং…
‘চলুন আপনাকে একটা খুব স্পেশাল জিনিস দেখাই।’ ডায়ানার কণ্ঠে উত্তেজনা। জাতীয় চিত্রশালার করিডর ধরে আমরা ডায়ানাকে অনুসরণ করি।
ঘরটা যেন বাংলাদেশের শিল্পকলার ইতিহাসের একটা প্রতিফলন। সফিউদ্দিন আহমেদ, রশীদ চৌধুরীর দুর্লভ সব চিত্রকর্ম পেরিয়ে গিয়ে আমরা থামি ঘরের একদম শেষ মাথায়। দুটো ছবির মাঝামাঝি গিয়ে দাঁড়ান ডায়ানা, তারপর বলে। ‘এই দেখুন সুলতানের সেই ছবিটা।’ আমরা দেখি,
এস এম সুলতানের প্রথম রোপণ বা ‘ফার্স্ট প্ল্যানটেশন’ দ্যুতিময় করে রেখেছে কোনার দেয়াল।
‘প্রায় ২৪ বছরের মতো অদেখা ছিল সুলতানের বহুল আলোচিত এই ছবি। এবার এটা আমরা প্রদর্শনীতে আনতে পেরেছি।’ ডায়ানা ক্যাম্পবেল বেটেনকোর্টের কণ্ঠে এবার উচ্ছ্বাস। তবে এখানেই শেষ নয়।
‘এস এম সুলতানের কাজের কথা বললে পেশিবহুল মানুষের কাজের কথা বুঝি আমরা। কিন্তু তাঁর অপূর্ব সব ল্যান্ডস্কেপও প্রদর্শনীতে এনেছি আমরা’ বলছিলেন ডায়ানা।
সুলতানকে ঘিরে আলাদা মুগ্ধতা আছে। দেয়ালের নিচ থেকে ছাদ ছুঁই ছুঁই রশীদ চৌধুরীর বর্ণিল সব টেপেস্ট্রি তাঁর খুবই পছন্দ। সফিউদ্দিন আহমেদের দুর্লভ চিত্রকর্মগুলো সংগ্রহ করতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাঁকে।
সব মিলিয়ে ঢাকা আর্ট সামিট ২০১৬-এর প্রধান সংগ্রাহক এবং সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের শিল্প নির্দেশক ডায়ানার কাছে ‘রিওয়াইন্ড’ বিভাগের সবকিছুই ‘অতুলনীয়’!
স্থপতি মাজহারুল ইসলামের ছায়ায়
‘অনেকেই স্থাপত্যকে শিল্প থেকে আলাদা করে দেখতে চান। কিন্তু আমরা এটা মনে করি না। এবারই প্রথমবারের মতো আমরা স্থপতিদের ঢাকা আর্ট সামিটের সঙ্গে যুক্ত করেছি।’ বলছিলেন সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও এবারের আর্ট সামিটের অন্যতম উপদেষ্টা রাজীব সামদানী। এবার ‘আর্কিটেকচার ইন বাংলাদেশ’ অংশটি রাখা হয়েছে বাংলাদেশের কিংবদন্তি স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে শ্রদ্ধা জানিয়ে। এই বিভাগের কিউরেটর হিসেবে কাজ করেছেন প্যারিসের সেন্টার পম্পিডুর সংগ্রাহক অহেলিয়া লিমনিয়ে। এখানে আছে বাংলাদেশের বশিরুল হক, শামসুল ওয়ারেস, কাশেফ মাহবুব, মেরিনা তাবাসসুমসহ ১৫ জন স্থপতির কাজ।
আলো-অন্ধকারে যাই
ঝুপ করে নেমে আসে অন্ধকার। বিচিত্র সংগীত কানে বাজে। তারপর মাথার ওপর আচমকা জ্বলে ওঠে উজ্জ্বল সাদা বাতি। এ যেন সত্যি সত্যি ‘আলো-অন্ধকারে যাই’। যুক্তরাজ্যের শিল্পী হারুণ মীর্জা কি পড়েছেন জীবনানন্দ দাশের ‘বোধ’ কবিতাটা? তাহলে কীভাবে এমন অদ্ভুত মিল? কবিতা আর তাঁর স্থাপনাশিল্পে?
শিল্পী হারুণ মীর্জা শব্দ, গোলযোগ আর সংগীত দিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা তৈরি করেন তাঁর দর্শকদের জন্য। ৫৪তম ভেনিস বিয়েনালে হারুণ মীর্জা রুপালি সিংহ পুরস্কার জিতেছিলেন ‘দ্য ন্যাশনাল অ্যাপ্যাভিলিয়ন অব নাও অ্যান্ড দেন’ শিরোনামের কাজ দিয়ে।
জঙ্গলে মঙ্গল?
জাতীয় চিত্রশালার দ্বিতীয় তলায় হঠাৎ সবুজ বনভূমির দেখা পেয়ে চমকে যেতে পারেন কেউ। এই বনভূমির স্রষ্টা প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের শিল্পী দম্পতি তুন ইন অং ও ওয়াহ নু। ‘ইপসো ফেক্টো’ শিরোনামের তাঁদের কাজটি পরিবেশগত পরিবর্তনের কথা মনে করিয়ে দেয়
অচিন জমিন
সাদাকালো ছবিতে চুপচাপ বিছিয়ে আছে পাহাড়ি জমিন। কুয়াশা আছে খানিক। একটা মানুষ দূরে বিন্দুর মতো। খুঁড়ছে পাহাড়ের মাটি। ‘স্থির ভিডিওচিত্র’ জোড়া দিয়ে বিচিত্র এক প্যানারোমা। যেন
ইরানের সিনেমা গুরু আব্বাস কিয়ারোস্তামির ছবির কোনো দৃশ্য। জায়গাটা কোথায়? এমনিতে বোঝার কোনো উপায় নেই। তাই বাংলাদেশের আলোকচিত্রী মুনেম ওয়াসিফকে জিজ্ঞেস করি। ‘জায়গাটা সিলেটের ছাতকের কাছে। বলতে পারেন সীমান্ত এলাকা।’ বলছিলেন তরুণ এই আলোকচিত্রী। এবারের ঢাকা আর্ট সামিটে প্রদর্শিত তাঁর এই কাজটির শিরোনাম ‘ল্যান্ড অব নো টেরিটরি’।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৪৪:৪৬ ২৮৭ বার পঠিত