বঙ্গনিউজ ডটকমঃশেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক দরপতন এবং বাজার আস্থাহীন হয়ে পড়ার জন্য সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) দায়ী করেছে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ডিবিএ।
কারণ ব্যাখ্যা করে ডিবিএ বলেছে, বিইআরসি দায়ী এ কারণে যে সংস্থাটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি তিতাস গ্যাসের আয়কে এক খাত থেকে অন্য খাতে সরিয়েছে। ফলে কোম্পানিটির শেয়ারের ব্যাপক দরপতন হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকার হাউসগুলোর সংগঠন ডিবিএ গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএসই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এমন সব অভিযোগ তোলে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি আহসানুল ইসলাম। ডিএসইর সাবেক পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই নাহরীন, মিনহাজ মান্নান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ডিবিএ বলেছে, বিইআরসি তিতাস গ্যাসের ট্যারিফ কমিয়েছে বিনিয়োগকারীদের কাছে তথ্য গোপন রেখে। এতে ডিএসইর তালিকাভুক্তকরণ বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ কারণে তিতাস গ্যাস বিনিয়োগকারীদের কম লভ্যাংশ দিয়েছে। তিতাসের দাম কমার কারণে অন্য ছয়টি সরকারি কোম্পানির শেয়ারের দামেও ব্যাপক দরপতন ঘটে। আর এ কারণে পরে গোটা বাজার সম্পর্কেই আস্থাহীন হয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা।
আহসানুল ইসলাম বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে বাজার-সম্পর্কিত আইন-কানুন সংশোধনসহ অনেক সংস্কার হয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকও বাজারবান্ধব সুবিধা দিয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাজার যখন স্থিতিশীল হতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই ট্যারিফ-সংক্রান্ত বিইআরসির একটি সিদ্ধান্তের কারণে তিতাস গ্যাসের শেয়ারের দামে ব্যাপক পতন হয়। আর এরই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে গোটা বাজারে।
গত ৩০ আগস্ট থেকে শুধু তিতাস গ্যাসের কারণে ৩ হাজার ১০৬ কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়ে গেছে বলে হিসাব দেন আহসানুল। তিনি জানান, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রতি শেয়ারে আয় (ইপিএস) ৯ টাকা হওয়া সত্ত্বেও তিতাস লভ্যাংশ দেয় মাত্র ১৫ শতাংশ, যা কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকেই সর্বনিম্ন। কোম্পানিটি আগের বছরগুলোতে ৩০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিয়ে আসছিল।
এক তিতাসের কারণে ভালো মৌলভিত্তির সরকারি সব কোম্পানির প্রতি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন ডিবিএর সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তিতাসের ট্যারিফ যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণের দাবি জানানো হয়। ভবিষ্যতে তালিকাভুক্ত সরকারি কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্য সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে আলাপ করে নেওয়ারও দাবি জানায় সংগঠনটি।
আহসানুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি কিছু দায়িত্বশীল জায়গা থেকে বিএসইসি ও বাজার নিয়ে কিছু নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে। বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, অথচ অনুমান বা ধারণার ভিত্তিতে বাজার ও বিএসইসি সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে। এ কারণে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে ডিএসই।
আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘বাজার সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্যকে আমাদের কাছে গভীর ষড়যন্ত্রের চক্র বলে মনে হয়।’
২০১০ ও ১৯৯৬ সালের বাজারধস নিয়ে তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন হয়নি বলে মন্তব্য করেন আহসানুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, এ কারণেই দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা যায়নি।
বর্তমানে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আছে কি না, জানতে চাইলে আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বলছি না যে আস্থা নেই। বলছি, আস্থা ফিরে আসুক।’
বাজারের সূচক একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের ওপরে উঠলে একে নামানোর চিন্তা করা হয়, আবার নিচে নেমে গেলেও উঠানোর চেষ্টা করা হয় বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। এ ধরনের একটি বাজারও কি পৃথিবীতে আছে? এমন প্রশ্ন করা হলে আহসানুল ইসলাম শুধু বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে লেনদেন করা ও শেয়ার কেনাবেচা করা।’
বাংলাদেশ সময়: ১৩:০১:৩৩ ২৩১ বার পঠিত