জাহিদ হাসান
ছাত্রজীবন থেকেই বইয়ের পাতা উল্টে-পাল্টে বাংলা সাহিত্যের অনেক চরিত্রের সঙ্গে পরিচয় হয়। দিন যেতে যেতে সেই পরিচয়ের পরিধি বাড়তে থাকে। শত শত চরিত্রের মধ্যে দেখা যায় কেউ একটি চরিত্রেই আটকে থাকে, সেই চরিত্রেই নিজেকে অর্পণ করে হারিয়ে যায় কল্পনার জগতে। ইচ্ছে হয় তাঁদের মতো বাঁচতে। প্রিয় কয়েকজন তারকার কাছে জানতে চাওয়া হলো—বইয়ে পড়া কোন চরিত্রটিতে নিজেকে কল্পনা করেন তাঁরা? সুযোগ পেলে বাংলা সাহিত্যের কোন চরিত্রে অভিনয় করবেন? পূরণ করবেন ছেলেবেলার সেই ইচ্ছা।
বঙ্গনিউজ ডটকমঃ২৬ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের একটি মিলনায়তনে খুদে ও তরুণ নির্মাতাদের সঙ্গে অন্যরকম এক আড্ডায় বসেছিলেন জয়া আহসান। উপলক্ষ ছিল নবম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব, বাংলাদেশ। আড্ডার সময় এক তরুণ নির্মাতা প্রশ্ন করলেন অভিনেত্রী জয়া আহসানকে, ‘উপন্যাস, গল্প কিংবা কবিতা থেকে এমন কোনো চরিত্র আছে কি, যাতে অভিনয় করার ইচ্ছা অনেক দিনের?’ একটু ভেবেই একগাল হেসে জয়া জানালেন তাঁর ইচ্ছার কথা, তাঁর ভাষায়, ‘এমন তো অনেক চরিত্রই আছে। তবে এ মুহূর্তে এমন একটা চরিত্রের কথা মনে পড়ছে, যেটা আমি কোনো দিনই করতে পারব না, তা হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প ‘পোস্টমাস্টার’-এর রতন। কিশোরীর চরিত্রটি এখন কী করে করব?’
পুরো মিলনায়তনে তখন হাসির রোল পড়ল। জয়াকে রতনের চরিত্রে ভেবেই হয়তো দর্শকদের এই উচ্ছ্বাসভরা হাসি। খুব পরিচিত কোনো চরিত্রে পছন্দের তারকাকে দেখতে পারা দর্শকের জন্য যেন ‘বোনাস’ পাওয়ার মতো। তাই তো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাষায় শরৎ চন্দ্রের দেবদাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখের বালি কিংবা শেক্সপিয়ারের ‘ওথেলো’ নিয়ে নাটক-সিনেমা কিছু তৈরি হলে তা সহজেই ‘হিট’ তকমাটি পেয়ে যায়। কারণ, দর্শকেরা তো আগে থেকেই পরিচিত এসবের কাহিনি ও চরিত্রের সঙ্গে। এর সঙ্গে প্রিয় যখন কোনো তারকার মুখটিও মিলে যায়, তখন তা যেন একেবারে সোনায় সোহাগা।
বাংলাদেশে সাহিত্যনির্ভর নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণের ধারা কতটা প্রচলিত এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে রয়েছে নানা প্রশ্ন। তবে অভিনয়শিল্পীরা সে তর্কে আপাতত জড়াতে চান না। তাঁরা সবার আগে নিখাদ পাঠক। আগে নিজেকে তাঁরা হারিয়ে ফেলেন গল্পের রাজ্যে, এরপর নিজেকে সেই ছাঁচে ফেলতে ভালোবাসেন তাঁরা। এই যেমন অভিনেতা আরিফিন শুভ। তাঁর নাকি ‘হিমু’ হওয়ার শখ। তাঁর ভাষায়, ‘প্রতিটি ছেলের ভেতর কোনো না কোনো দিক থেকে হিমুকে খুঁজে পাওয়া যায়। হুচমায়ূন আহমেদের সেই হিমু হওয়ার দারুণ ইচ্ছা আমার। সুযোগ পেলে আমি হিমুর চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।’ তবে হিমুর উদাসীনতার পাশাপাশি মাসুদ রানার মতো চৌকস চরিত্রেও সুযোগ পেলে অভিনয়ের ইচ্ছা শুভর। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় এই মাসুদ রানার জন্য বাবা–মার হাতে কত যে মার খেয়েছি! তখন থেকেই ইচ্ছা—একদিন আমিও মাসুদ রানা হব!’
তবে অভিনেতা জাহিদ হাসান মাসুদ রানা নন, তিনি হু্মায়ূন আহমেদের বিভিন্ন সৃষ্টির মাঝেই নিজেকে খোঁজেন। আর তাই হু্মায়ূন আহমেদের অসংখ্য নাটক-ছবিতে অভিনয় করা এই শিল্পী সুযোগ পেলে আবার সেই লেখকের সৃষ্ট কোনো চরিত্রেই নিজেকে দেখতে চান। জাহিদ হাসান বলেন, ‘হুমমায়ূন আহমেদের মধ্যাহ্ন কিংবা দেয়াল পড়ে মনে হয়েছে এতে অভিনয় করার সুযোগ পেলে অবশ্যই করব।’ তবে শুধু হুনমায়ূন আহমেদ নন, জাহিদ হাসান সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সৃষ্টির মাঝেও খোঁজেন নিজেকে। সুনীলের প্রথম আলো উপন্যাস তেমনই একটি।
অভিনেতারা যেখানে হিমু কিংবা দেয়াল-এর চরিত্রের ছাঁচে নিজেদের বসাচ্ছেন, সেখানে অভিনেত্রীরাই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন? রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবীর নন্দিনী চরিত্রের অভিনেত্রী অপি করিম জানান, তাঁর ইচ্ছার তালিকা বিশাল। এত এত প্রিয় চরিত্র, যা বলতে গেলে হয়তো দিন পেরিয়ে রাত হয়ে যাবে। কিন্তু এত বলার সময় কোথায়। তাই চটজলদি স্বপ্নের চরিত্রগুলো নিয়ে অপি বলেন, ‘তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস কবির “ঠাকুরঝি” হতে চাই। কিংবা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের দূরবীন উপন্যাসের ‘ধ্রুব’র স্ত্রী ‘রেমি’র চরিত্রে।’
এদিকে মঞ্চ আর টিভি নাটক মিলিয়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি সাহিত্যনির্ভর কাজ করেছেন অপর্ণা ঘোষ। তাই তাঁর কাছে যখন জানতে চাওয়া হয় বইয়ের পাতা থেকে পাওয়া তাঁর স্বপ্নের চরিত্রটি কী? তখন এক বড় তালিকাই পড়ে শোনান তিনি। এরই মধ্যে অপর্ণা অভিনয় করেছেন কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা চিঠি থেকে নির্মিত টিভি নাটক, মঞ্চে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর লিও টলস্টয়ের নাটকে। আর ইচ্ছার তালিকায় রয়েছে বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী, রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী আর শেক্সপিয়ারের কিছু সৃষ্টিকর্ম নিয়ে কাজ করার। তবে আক্ষেপের সুরেই অপর্ণা বলেন, ‘আমাদের এখানে তো মঞ্চ ছাড়া দীর্ঘ সময় নিয়ে সাহিত্যনির্ভর কাজ করাই হয় না। টিভি নাটকের বেলায় সাহিত্যনির্ভর চরিত্রে খুব তাড়াহুড়ো করে অভিনয় করতে হয়। আমরা পড়ার সময় যেভাবে কল্পনা করি, শুটিংয়ের সময় তখন আর চরিত্রকে সেভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয় না।’
বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৯:৫৯ ২৮৭ বার পঠিত