বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ আপনারা জানেন কি, কোন পদার্থ থেকে পৃথীবিতে প্রথম কোনো প্রাণের অস্তীত্ব জন্ম নিয়েছিল? প্রশ্নটির উত্তর হলো- ‘পানি’ অর্থাত্ এ পদার্থ হল পানি। খুব অদ্ভূত ব্যাপার, বলতে হবে। আমাদের এই প্রিয় ধরনীতে প্রথম কোনো প্রাণের জন্ম কিন্তু পানি থেকেই হয়েছে। আর এই পানিই হল পৃথীবির তাবদ প্রাণীকূলের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ।মানুষের শরিরে পানির পরিমান ৭০ শতাংশ অর্থা দুই তৃতীয়াংশের বেশি। তবে আপনারা এটা জানেন কি যে, পৃথীবিতে কোন প্রাণীর শরিরে পানির হার সবচেয়ে বেশি? এটা হল সমুদ্রের প্রাণী যাকে আমরা জেলি ফিস বলি, দেখতে খুব সুন্দর এবং নরম, তাই না? এই মাছের শরীরে ৯৮ শতাংশই হচ্ছে পানি।
আবার মানব দেহের সাথে আমাদের প্রিয় এই ধরনী দেহের পানির পরিমানেও অদ্ভুদ একটি মিল রয়েছে- মানবদেহে ৭০ ভাগ পানি আর পৃথীবির শরীরে রয়েছে ৭১ ভাগ পানি, কি আদ্ভুদ মিল তাই না? অনেক ধরনের ভিটামিন রয়েছে যার অভাব হলে মানব দেহে তেমন মারাত্মক কোনো প্রভাব ফেলে না বা আপনি তারপরও দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকতে পারেন, তবে কেবল পানি না থাকলে একজন মানুষ মাত্র কয়েকটি দিন কয়েক ঘন্টা বাঁচে থাকেত পারেন এর বেশি নয়। তাই আমরা জানি, পানি আমাদের মানব দেহের জন্য কতটাই গুরুত্বপূর্ণ।
পানি সত্যি আমাদের জীবনের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর তাই যাকে আমরা বলি নিরাপদ পানি বা পানিয় পানির নিরাপত্তা এবং অপ্রতুলতা আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। কেননা, শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে যেমন জীবনের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, ঠিক তেমনি নিরাপদ বা জীবানুমুক্ত পানি না হলে সেই পানিও আপনার মৃত্যু কারণ হয়ে উঠবে। আমরা জানি বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয় দেশে সুপেয় বা নিরাপদ পানির প্রাপ্যতায় বেশ সমস্যা রয়েছে। আজকে বিশ্বের কিছু কিছু দেশের সুপেয় পানিনিশ্চিত করার সাফল্যমূলক অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু আলোচনা করবো। যাতে আমারা এই অভিজ্ঞা থেকে আমাদের জীবনকে আরো সুস্থ ও নিরাপদ করে তুলতে পারি।
প্রথমে আমরা জার্মানির দিকে একটু দৃষ্ঠি ফেরাবো। যদি এক বাক্যে এ দেশের পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলতে হয়, তাহলে বলবো জার্মানিতে “পানিয় পানিকে একটি খাদ্য হিসেবে দেখা হয়”। শ্রোতারা, যদিও জার্মানিতে বোতলের পানি এবং বিভিন্ন ধরনের মিনারেল যুক্ত পানি সহজলভ্য এবং দামও অনেক সস্তা। তবুও জার্মানিরা যদি পানি খেতে চায়, তারা এক ক্লাস টেপ ওয়াটার (tap water) খেতেই সবচেয়ে পছন্দ করে এবং এটা তাদের অভ্যাস। মনে রাখবেন এই খোলা টেপের পানি এটা কিন্তু ফুটানো হয় না এমনকি ফিল্টারও করা হয় না। জার্মানিতে পানিয় পানিকে খাদ্যের আওতায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। জার্মানির “পানিয় পানি ব্যবস্থাপনার নিয়ম”-অত্যন্ত কঠিন এবং এর মানদন্ড নির্ধারণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। আর এ নিয়ম সমাজের উন্নয়ন এবং পরিস্থিতি ও পরিবেশ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সুসংহত ও জোরদার করা হয়ে থাকে। জার্মানরা সব টেপ ওয়াটার সরাসরি খেতে পারেন এবং এই খোলা পানির মানদন্ড বটল পানির মানদন্ডের চেয়েও অনেক অনেক উন্নত ও নিরাপদ।
বিষয়ে জার্মানির একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, সাধারণ পানিকে ভালোভাবে বিশুদ্ধ করা, শহর ও পানির উত্স স্থানগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষাগারে পানির তত্ত্বাবধান বার জীবানুমুক্ত করণ প্রক্রিয়া সম্পাদন করা, এ তিনটি বিষয়ই হল টেপ ওয়াটারের গুণগতমান নিশ্চিত করার প্রধান পদ্ধতি। জার্মানিতে পানিয় পানি প্রধানত ভূগর্ভস্থ পানি থেকে নেয়া। তাই তারা ভূগর্ভস্থ পানি সম্পদ রক্ষা করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সরকার পানি বিশুদ্ধকরন কারখানা পরিচালনার জন্য খুব কঠিন নিয়ম প্রণয়ন করেছে। যদি উপযুক্ত মানদন্ডে পৌছাতে এতটুকুও সমস্যা থাকে আর তা জনগণকে খাওয়ানো হয় তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে।
এখন আমরা জাপানের নিরাপদ পানির ব্যবস্থা সম্পর্কে একটু জেনে নেই। আমাদের সংবাদদাতা জাপানের ইউকোহামা শহরের একটি কলের পানি কারখানা পরিদর্শন করেছিলেন। সেখানে প্রতিদিন পানি পরীক্ষা করা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু খুব মজার বিষয় হল, এ কারখানার উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রুটিন পরীক্ষা ছাড়াও কারখানার স্বচ্ছ পানিয় পানিতে মত্স্য চাষ করে থাকে। আর এ মাছ সবই ২ সেন্টিমিটারের ছোট ছোট মাছ।
কারণ যদি পানির গুণগতমানে কোথাও কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে ছোট ছোট মাছগুলো মারা যাবে। এভাবে রাষ্ট্রীয় পানি ব্যবস্থাপনার গুণগতমান তত্ত্বাবধানে বিজ্ঞান ভিত্তিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি এটিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়।
আর এ ছাড়া জাপানে নিরাপদ পানি সম্পর্কিত বিশেষ আইনও আছে। আর এ দেশ অনেক অনেক আগেই নিরাপদ পানিয় পানির গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে এবং সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়ন করেছে। আর তা দেশটির কলের পানি বিষয়ক আইন থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারি। এ আইনটি সেই ১৯৫৫ সালের জুন মাসে জারি করা হয়। আর সমাজ উন্নয়নের সাথে সাথে সরকার অব্যাহতভাবে এ আইনকে আরও সুসংহত করে থাকে। কারণ পানির গুণগতমানের ওপর জাপানি নাগরিক সবসময় বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে, তাই জাপানের শ্রম মন্ত্রণালয় সবসময় কলের পানি কারখানা গুলোতে আকষ্মিক উপস্থিত হয়ে পানি পরীক্ষা করে থাকে। এসময়ে কোনো বিপদজনক বা ঝুঁকিপূর্ণ কোনো উপাদানের হদিস পেলে পানির কারখানা থেকে পানি সরবরাহ অবিলম্বে বন্ধ করে দেয়া হবে। যাতে জনগণের স্বাস্থ্যে এ পানির কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ে।
বলা বাহুল্য যে, যদি কোনো ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত পানিয় পানিতে দূষণ পাওয়া যায় তাহলে তার জন্য অপেক্ষা করে আছে কঠিন শাস্তি । মানুষের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উত্পাদিত খাওয়ার পানি দূষণ করলে “বিশুদ্ধ পানি দূষণ” নামক অপরাধ হবে। আর সরকার এমন অপরাধের জন্য ৬ মাসের কারাদন্ড এবং ১ লাখ ইয়েনের জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে যদি কেউ সাধারণ জনগণের টেপ বা কলের পানি ও পানির উত্স দূষণ করে তাহলে “পানি প্রবাহ দূষণের” অপরাধ হবে। আর এ জন্য সরকার ৬ মাস থেকে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড প্রদান করে থাকে। এ ছাড়া যদি খাবার পানির মধ্যে বিষাক্ত কোনো পদার্থ অথবা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো পদার্থ পাওয়া যায় এবং এ পানি দ্বারা যদি কোনো মানুষ আক্রান্ত না হয় তবুও কমপক্ষে ৩ বছরের কারাদন্ড ভোগ করতে হবে। আর যদি কোনো মানুষ এর জন্য মারা যায়, তাহলে রয়েছে কঠোর ও দীর্ঘ কারাদন্ড। জাপানে যদি কোনো লোক কলের পানির টাব বা পানি পড়ার যন্ত্র নষ্ট করে তাহলে তাকে এক বছর থেকে দশ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ভোগ করতে হবে।
আর এখন আমরা দেখি ইসরাইলের পানি ব্যবস্থাপনা কি রকম। ইসরাইলে পানির অভাব বেশ গুরুতর। সাধারণ এক বোতল পানির দাম ২ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। তবে যদিও পানি অভাব, তবে এ দেশে জনগণের পানিয় পানির গুণগতমান অনেক উচ্চ পর্যায়ের। ইসরাইলে পানিয় পানির নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বেশ হট একটি টপিক হিসেবও বলা যেতে পারে। ১৯৩৭ সালে অর্থাত্ ইসরাইল দেশ প্রতিষ্ঠার ১১ বছর আগে ম্যাকেরোট নামে একটি পানি কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত হয়। যখন ইসরাইল মাত্রই প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এ কোম্পানীকে দেশের পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়, এ ছাড়া কোম্পানী দেশের পানি সম্পদ পরিচালনা, নিরাপত্তা ও তত্ত্বাবধান এবং জলসেচ ব্যবস্থাপনার কাজেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এখন পর্যন্ত ম্যাকেরোট কোম্পানী প্রতি বছর ইসরাইলে ১.৫ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি সরবরাহ করে থাকে। এই পরিমান ইসরাইলের মোট পানি ব্যবহারের ৭০ শতাংশ।
ইসরাইল পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দেশের পানি সম্পর্কিত আইনের সংশোধন করেছে। ১৯৫৯ সালে ইসরাইলে “পানি সম্পদ আইন” গৃহীত হয়। এতে নির্ধারণ করেছে যে দেশের পানি সম্পদ পরিচালনার কাজ করবে কৃষি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ রক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বার্থ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পানিয় পানির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এ দেশ ১৯৭৪ সালে “গণ স্বাস্থ্য নিয়ম অর্থাত্ পানিয় পানির মানদন্ড” গৃহীত হয়। হয়ত মনে হতে পারে যে এ আইন যথেষ্ঠ কঠোর নয়, তাই ১৯৭৯, ১৯৮৯, ১৯৯০ আর ২০০০ সালে চার বার এ আইনকে সংশোধন করা হয়েছে। যদিও এ দেশে পানি অভাব, তবুও সরকার মনে করে, অভাব হলেও পানি নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ কখনই হালকা করা যাবে হবে না। তাই ২০১২ সালের জুলাই মাসে দেশে পানিয় পানির মানদন্ড নিশ্চত করতে আরো কঠোর নিয়ম গৃহীত হয়, আর এর ফলে উপরক্ত ১৯৭৪ সালের নিয়ম বাতিল হয়ে যায়। আর এ নতুন নিয়মের মধ্য দিয়ে ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’র মত নিরাপদ পানির মানদণ্ডের সমান প
বাংলাদেশ সময়: ২০:০২:০৪ ৫৪৯ বার পঠিত