মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি।
বঙ্গনিউজ ডটকমঃ ‘বিএনপি অবৈধ হলে আওয়ামী লীগও অবৈধ। কারণ বাকশাল গঠনের পর আওয়ামী লীগ ছিল না। জিয়াউর রহমানের সময় বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন নিয়েছিল, তখন আওয়ামী লীগও নিবন্ধন নেয়।’
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় আজ বুধবার বিএনপির পক্ষ থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।
গতকাল মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ‘বিএনপিকে অবৈধ বলে গণ্য করা উচিত’ বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। এই বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পাল্টা ওই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘এগুলো অপ্রাসঙ্গিক। জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর জন্য এসব বলা হচ্ছে। দেশের মূল সমস্যা এসব না।’
দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান মির্জা ফখরুল।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণ জাতিকে হতাশ করেছে। জাতির প্রত্যাশা ছিল, দেশে একটি গভীর রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনে একটি দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, প্রধানমন্ত্রী রুটিন বক্তব্য রেখেছেন।
ফখরুল বলেন, বিগত দুই বছর ছিল গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করার সময়। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি দলীয়করণ করে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত করার সময়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল একটি প্রহসন। এর মাধ্যমে একটি রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট এবং একটি অদ্ভুত ধরনের সরকার গঠন করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এই সরকার উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচন করে প্রমাণ করেছে বর্তমান সরকারের অধীনে ও নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হতে পারে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে নির্বাচন ব্যবস্থাকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি। গত দুই বছর ছিল বিরোধী দল ও মতের দমন-পীড়নের নজিরবিহীন উদাহরণ। এই সময়ে ৪৪০ জন হত্যা ও খুনের শিকার হয়েছেন। গুম ও নিখোঁজ হয়েছেন ২৬৭ জন, আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ৩৩৭ জন। এ সময় রাজনৈতিক মামলা হয়েছে ২১ হাজার ৮৩ টি। আসামি করা হয়েছে চার লাখ ১৬ হাজার ৭৪৭ জন। গ্রেপ্তার হয়েছে ১৭ হাজার ৮৮৫ জন। এর মূল্য লক্ষ্য ছিল, গণতন্ত্রকে বিদায় করে তথাকথিত উন্নয়নের নামে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করা এবং তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করা।
ফখরুল বলেন, ‘গণমাধ্যম স্বাধীন’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। চ্যানেল ওয়ান, ইটিভি, দিগন্ত টিভি, সিএসবি, আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একুশে টেলিভিশনকে জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সুপরিকল্পিতভাবে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করলে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, বিএনপিতে যত জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, আওয়ামী লীগে আছে কিনা তা আমার জানা নেই। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল-গণতন্ত্র। আওয়ামী লীগ তা নির্বাসিত করেছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা বাস্তবায়ন বা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে বলে দাবি করেছেন। কিন্তু আজকের বাস্তবতা আলাদা। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে গেছে কিনা জানি না, অর্থনীতি লুটপাটের মহাসড়কে গেছে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। ক্ষমতা ছাড়ার সময় বিএনপির শেষ বছরে, অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এ সরকার গত সাত বছরে শত চেষ্টা করেও ৬ দশমিক ৭ শতাংশে আজ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। উন্নয়নের মহাসড়ক যে কোন দিকে যাচ্ছে তা এ সূচকই বলে দিচ্ছে।
সাংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান, যুগ্ম মহাসচিব মো. সাজাহান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৯:১৩ ৩৯৪ বার পঠিত