সাকিবকে এবারও দেখা যাবে নাইট রাইডার্সের জার্সিতে। সংগৃহীত ছবি
বঙ্গনিউজ ডটকমঃ পাকিস্তান সিরিজের জন্য গতবার মাত্র ৪টি ম্যাচই খেলতে পেরেছিলেন। তাতে ব্যাট হাতে ৩৬ রান, আর বাঁহাতি স্পিনে ৪ উইকেট। কিন্তু টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডের বর্তমান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে এই চার ম্যাচ দিয়ে মাপতে যাওয়া ভুল। সেটা করেনি কলকাতা নাইট রাইডার্সও, পাকা জহুরির চোখ দিয়ে ঠিকই দলের রত্নকে চিনে নিয়েছে তারা। আগামী মৌসুমের আইপিএলের জন্য আবারও সাকিব আল হাসানকে দলে রেখে দিয়েছে দলটি।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবে এবারের আইপিএলের নিলাম। গতকাল ছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলোর দল গুছিয়ে নেওয়ার শেষ দিন। কাকে রাখবে, কাকে ছেড়ে দেবে - এসবের তালিকা জমা দিতে হয়েছে গতকাল। তাতে ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজি মিলে মোট ১০১ জন খেলোয়াড়কে দলে রেখে দিয়েছে, আর ছেড়ে দিয়েছে ৬১ জনকে।
ছেড়ে দেওয়ার তালিকায় আছে ডেল স্টেইন, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, যুবরাজ সিং, কেভিন পিটারসেনসহ অনেক বড় নাম। তবে এঁদের মধ্যে যুবরাজ আর ম্যাথুসের বিষয়টা একটু ভিন্ন। গতবারের নিলামে ভারতীয় ও বিদেশি দুই কোটায় সবচেয়ে দামি দুই খেলোয়াড় ছিলেন দিল্লির এই দুই খেলোয়াড়। অথচ এক মৌসুম পরই কিনা নতুন দলের খোঁজে নামতে হচ্ছে তাঁদের। অবশ্য গতবার যুবরাজ-ম্যাথুসের পারফরম্যান্সটাও ছিল আকাশচুম্বী দামের ঠিক বিপরীত দিকে। ১৩ ইনিংসে ২০-এরও কম গড়ে ২৪৮ রান যুবরাজের। বোলিং তো করেছেনই সাকল্যে ৯ ওভার। আর ম্যাথুস ১১ ম্যাচে ব্যাট হাতে ১৪৪ রানের সঙ্গে বল হাতে নিয়েছেন মাত্র ৭ উইকেট। ইকোনমি রেটও ছিল ৮.২০! এই দুজনকে ছেড়ে দিয়ে এবার অন্য কাউকে নিলাম থেকে টেনে নেবে দিল্লি। তবে পুরোটাই তো ভাগ্যের খেলা।
সাকিবকে নিয়ে এমন খেলায় নামতেই চায়নি কলকাতা। গতবারের পারফরম্যান্স হয়তো অতটা ভালো হয়নি, কিন্তু সাকিব দলে থাকা মানেই তো একটা নির্ভরতা। বল হাতে উইকেট নেওয়া, রান কমানোর ক্ষেত্রে সাকিবের হাতে বল তুলে দিয়ে কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন অধিনায়ক। আর কোনো দিন যদি বোলিংটা ভালো না হয়, সে ক্ষেত্রে ক্ষতিটা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যাটিং তো আছেই। এমন একজনকে কেন হাতছাড়া করতে চাইবে কলকাতা।
২০১১ আইপিএলে শাহরুখ খানের ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রথম কিনে নিয়েছিল সাকিবকে। সাধারণত চুক্তি ৩ বছরের হয়, এসময়ের মধ্যে দল না ছাড়লে ওই দলেই থাকেন একজন খেলোয়াড়। চুক্তির পুরো সময়টা সাকিবকে রেখে দিয়েছিল কলকাতা। ২০১৪ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষে ছেড়ে দিয়ে দিল্লির সঙ্গে তুমুল প্রতিযোগিতার পর আবারও ২ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে বাংলাদেশি অলরাউন্ডারকে কিনে নিয়েছিল দুবারের আইপিএল জয়ী দলটি। তার ফল তো হাতেনাতেই পেল। ওই মৌসুমে ১৩ ম্যাচে সাকিবের ৩২.৪২ গড়ে ২২৭ রান আর ৬.৬৮ গড়ে ১১ উইকেট কলকাতাকে দ্বিতীয় আইপিএল শিরোপা জিততে সাহায্য করেছে।
চাইলে আরেকটা তথ্য থেকেও কলকাতার সাফল্যে সাকিবের প্রভাব বুঝে নিতে পারেন। ২০১১ সালে সাকিব কলকাতায় যোগ দেওয়ার আগের তিন মৌসুমে আইপিএলে কলকাতার পারফরম্যান্স ছিল এমন - ৮ দলের টুর্নামেন্টে দুইবার ষষ্ঠ, অন্যবার সবার শেষে। আর সাকিব যোগ দেওয়ার পর ৫ মৌসুমে দুবার চ্যাম্পিয়ন, আর একবার খেলেছে সেমিফাইনাল। সাফল্য পুরো দলেরই, তাতে গৌতম গম্ভীরের দায়িত্বশীল অধিনায়কত্ব কিংবা সুনীল নারাইনদের পারফরম্যান্সেরও অনেক অবদান। কিন্তু ব্যাটে-বলে সাকিব যেভাবে ভরসা জোগান, সেটি তাঁর মতো করে আর কে দিতে পারবে!
আইপিএলে এই পর্যন্ত ৫ মৌসুমে ৩২ ম্যাচ খেলেছেন সাকিব। তাতে মূলত পাঁচ-ছয়ে নেমে ২১.২৮ গড়ে ৩৮৩ রান, আর বল হাতে ৩৮ উইকেট - সাকিবকে রেখে দেওয়ার কারণটা এই তথ্য থেকেই বুঝে নিতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৩৩:৪৩ ২৫৮ বার পঠিত