‘বাংলাদেশে হুমকির মুখে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ’

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ‘বাংলাদেশে হুমকির মুখে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ’
বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫



 1423839554_109153

বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ

বাংলাদেশে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা হুমকির মুখে রয়েছেন। এ দেশে সুশীল সমাজের ধরণ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, তারা যে তেমন সক্রিয় নন, তাও নিশ্চিত৷ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বার বার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন৷ বাংলাদেশের সুশীল সমাজ আজ চাপ ও হুমকির মুখে রয়েছেন বলে মনে ইইউ ও ‘সিভিকাস’ । গত বছর জুনে সুশীল সমাজের আন্তর্জাতিক জোট বা গ্লোবাল সিভিল সোসাইটি অ্যালায়েন্স (সিভিকাস) এক বিবৃতিতে দাবি করে, ‘‘বাংলাদেশের সুশীল সমাজ, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে যাঁরা মানবাধিকারের কথা বলেন, তাঁরা হুমকি এবং চাপের মুখে আছেন৷” বাংলাদেশের সুশীল সমাজ-এর চরিত্র নিয়ে সিভিকাস-এর পর্যবেক্ষণ বেশ স্পষ্ট৷ ২০১৫ সালে তাদের বাৎসরিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘বাংলাদেশের রাজনীতি যেভাবে বিভক্ত, সুশীল সামাজও সেইভাবেই বিভক্ত৷ যদিও তারা রাজনীতি নিরপেক্ষ চরিত্রের জন্য চেষ্টা করছে৷” চলতি বছরের নভেম্বর মাসে ঢাকায় জার্মান রাষ্ট্রদূত টোমাস প্রিনৎস সুশীল সমাজের ওপর চাপ এবং তাদের কথা বলার এলাকা সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘সুশীল সমাজ এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সুশাসন ও গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য৷ একই অভিমত জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নও বাংলাদেশে সুশীল সমাজের ওপর চাপের সমালোচনা করে৷ বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্রের সম্পাদক এবং সিভিল সোসাইটির গবেষক অরূপ রাহী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সিভিল সোসাইটির বাংলা করেছি সুশীল সমাজ৷ সেই হিসেবে বাংলাদেশে সুশীল সমাজের কোনো অস্তিত্ব আছে কিনা - তা নিয়ে বিতর্ক আছে৷ যাঁরা সুশীল সমাজ বলে পরিচিত বা যাঁদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে ধরা হয়, তাঁরা মূলত বিভিন্ন ধরণের নাগরিক সংগঠনের সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত আমলা, সামরিক কর্মকর্তা, অধ্যাপক বা এনজিও নেতা৷ এঁরাও রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত৷ ফলে এ দেশে সুশীল সমাজের কোনো চরিত্র দাঁড়ায়নি এবং তাঁদের ভূমিকাও স্পষ্ট নয়৷” বাংলাদেশে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে যাঁরা পরিচিত, তাঁরা বিভিন্ন নাগরিক ইস্যুতে রাজপথে সক্রিয় হন৷ এর বাইরে সংবাদমাধ্যমে মতামতও প্রকাশ করেন তাঁরা৷ বিশেষ করে বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর ‘টকশো’-তে তাঁদের সক্রিয় হতে দেখা যায়৷ কিন্তু পর্যবেক্ষণ বলছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর সংবাদমাধ্যমে তাঁদের সক্রিয় উপস্থিতি কমে আসছে৷ এমনকি ‘ব্যক্তিগত’ কারণে টকশো-র কয়েকজন জনপ্রিয় উপস্থাপককেও নিস্ক্রিয় হতে হয়েছে৷ বেসরকারি টেলিভিশন একুশে টিভির টকশো ‘একুশের রাত’-এর উপস্থাপক মনজুরুল আলম পান্না ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এক ধরণের অদৃশ্য চাপ অনুভব করি৷ এখন যাঁরা টকশো-তে আসেন, তাঁরা নিজেরাই ‘সেন্সর’ করে কথা বলেন৷ তাঁদের দেখে আমি পরিস্থিতি বুঝতে পারি৷ তাই প্রশ্ন করার ক্ষেত্রেও আমি সাবধান থাকি৷” তিনি আরো বলেন, ‘‘সুশীল সমাজের একটি অংশ এখন আর টকশো-তে আসতে চান না৷ তাঁদের কথা, যদি প্রাণ খুলে কথা বলা না যায় তাহলে টকশো-তে গিয়ে কী লাভ?” পটি ঠিক কোন দিক থেকে জানতে চাইলে পান্না বলেন, ‘‘মালিক পক্ষের চাপটি সরাসরি বোঝা যায়৷ তবে সরকারের দিক থেকে কোনো চাপ আমি এখনো অনুভব করি না৷ সবাই যেন ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ করছে৷ কেমন যেন একটা ভয় কাজ করছে তাঁদের৷” চাপের বিষয়টি স্পষ্ট হয় সিভিকাস-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে৷ তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘সরকারি পর্যায় থেকে সুশীল সমাজকে যখন ক্যানসার ও দেশদ্রোহী বলা হয়, তখন তাদের সক্রিয় থাকা কষ্টকর৷” প্রতিবেদনে আরো বলা হয় যে, ‘‘সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অর্থায়ন বাধাগ্রস্ত করা বাংলাদেশে এখন সাধারণ নীতিতে পরিণত হয়েছে৷” বাংলাদেশে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নানা নামে বিভিন্ন সময় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছেন৷ ২০১১ সালে ব্যারিস্টার রফিকুল হক ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে গঠন করা হয় ‘নাগরিক সমাজ’৷ তবে মান্না এরপর ‘নাগরিক ঐক্য’ গঠন করে একে রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত করেন৷ মাহমুদুর রহমান মান্না সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন গত ২৫ ফেব্র”য়ারি৷ তিনি এখনো কারাগারে আছেন৷ তবে তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই সুশীল সমাজের আরেকটি প্লাটফর্ম গড়ার চেষ্টা করেন নেপথ্যে থেকে৷ এর সঙ্গে এনজিও নেতা, সম্পাদক, সাবেক আমলাসহ সুশীল সমাজের বেশ কিছু প্রতিনিধি যুক্ত ছিলেন৷ কিন্তু মান্না গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁরা আর সক্রিয় হননি৷ বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন এবং হত্যার ঘটনা আগেও ঘটেছে৷ এখনো সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয়নি৷ তবে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে সাংবাদিকের আহত হওয়ার ঘটনা চলমান আন্দোলনেই প্রথম ঘটছে৷ হেফাজত-এ-ইসলামের সমাবেশে প্রহৃত হন সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন৷ হরতাল এবং অবরোধের সময় ককটেল হামলায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক৷ বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্রের সম্পাদক অরূপ রাহী ‘সিভিল সোসাইটি পর্যালোচনা’ নামে একটি গ্রন্থ সম্পাদনাও করেছেন৷ তার আলোকে তিনি বলেন, ‘‘এখানে কথিত সুশীল সমাজ এক ধরণের ‘পাওয়ার এলিট’৷ তাঁরা তাঁদের স্বার্থে কখনো এক হন৷ আবার কখনো নানা শিবিরে বিভক্ত হন৷ ফলে সত্যিকারের সিভিল সোসাইটি এখানে গড়ে ওঠেনি৷” জার্মান রাষ্ট্রদূত টোমাস প্রিনৎস-এর সংবাদমাধ্যমে যে বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে তা হল, ‘বাস্তবে এখানো কোনো বিরোধী দল নেই৷ তাই সংবাদমাধ্যম এবং সুশীল সমাজকে সক্রিয় ও স্বাধীন হতে দিতে হবে উন্নয়ন ও সুশাসনের জন্য’৷ এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক এবং সিভিল সোসাইটি গবেষক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যে নামেই ডাকি না কেন, সুশীল সমাজের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আছে৷ তারা বেঙ্গল রেনেসাঁর উত্তরাধিকার৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে তাঁদের ভূমিকা অনন্য৷” তিনি বলেন, ‘‘সুশীল সমাজের কাজ হলো জনগণ এবং গণতন্ত্রের পক্ষে শাসকদের সঙ্গে আলোচনা, দর কষাকষি এবং প্রয়োজন হলে চাপ সৃষ্টি করা৷ কিন্তু এ সময়ে এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সিভিল সোসাইটি, এনজিও ও ডোনার কেন্দ্রিক হয়ে গেছে৷ তাঁরা জোর করে হলেও একটি দ্বিদলীয় ব্যবস্থার কথা বলে৷ ফলে অনেক সময় তাঁরা মূল জায়গায় থাকেন না৷ তাই তাঁরা জনগণের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেন না৷ আমাদের প্রয়োজন স্বাধীন বুদ্ধিজীবী ভিত্তিক সুশীল সমাজ, যা অতীতে ছিল৷”

বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৮:৪৮   ২৬০ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আজকের সকল পত্রিকা’র আরও খবর


নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন হাজী মোহাম্মদ হারিজ খান
সেরে উঠলেন ক্যানসার রোগীরা
আশুলিয়ায় খুশবু রেস্তোরাঁ উদ্বোধন
ধর্মপাশায় ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে শিক্ষকদের কর্মসূচী
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি পণ্য সরবরাহ
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি পণ্য সরবরাহ
বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের প্রতি দায়িত্ব পালনে কূটনীতিকদের আন্তরিক হতে হবে: শেখ হাসিনা
শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় ইদুর নিধন
শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় ইদুর নিধন

আর্কাইভ